© দুর্গেশনন্দিনী
পত্রম, দুধমান কচুপাতায় নানা মসলা, ডালবাটা পুর ভরে গোল গোল চাকা করে কাটা, প্রাচীন গুজরাটি রান্না। এটি কেবলমাত্র প্রাচীন নয়, কঠিন রান্নাও বটে।
বনবর্ণম, প্রাচীন গুজরাট, রাজস্থান , মেহেরগড় , হরপ্পার এলাকা ইত্যাদি অঞ্চলের মিলেট বা জোয়ার বাজরার খিচুড়ি। বলতে পারেন এটাই প্রাচীন খিচুড়ির একটি রূপ, এটি বুনো ছত্রাক ও ওসব অঞ্চলে প্রাপ্ত সবজি দিয়ে ঘি সহযোগে খাওয়া হত। যারা বারবার প্রমাণ করতে চান খিচুড়ি বাইরের দেশ থেকে এসেছিল তাদের 3বার ভাবার সময় এসেছে।
মুম্বাই পাও তো জানেনই, মুম্বাইতে এই পাও বা ছোট নরম পাউরুটির মধ্যে বড়া দিয়ে বা মুগডাল (মিশেল) সবজির ঘন্ট(ভাজি) দিয়ে খাওয়া হয়, অতি পরিচিত গরীবের স্ট্রিট ফুড, সস্তার ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার সব।
বারখানি গান্ধারের রুটি। প্রাচীন গান্ধার এবং কাশ্মীর অঞ্চলে ময়দা, দুধ , মধু মিশিয়ে এই রুটি তৈরি হত।
মিলেট বা জোয়ার বাজরার পায়েস, প্রাচীন গুজরাট , রাজস্থানের অতিপ্রিয় একটি খাদ্য, যা নাম দেওয়া হয়েছে মধুরিমা।
কাশ্মীরি খাওয়া প্রাচীন কাশ্মীরি চা, যেখানে চা পাতা নয় বরং ব্যবহার করা হত বাদাম, কেশর, মধু, কেমিলিয়া ফুল ইত্যাদি। শরীর গরম রাখা, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগের উপশম হিসাবে প্রাচীন কাশ্মীরে এই চায়ের জুরীমেলা ভার ছিল। সামোবার নামক একটি ধাতব কেটলি জাতীয় পাত্রে এই চা তৈরি হত , এমনকি আজও হয়। একটা সময় সিল্করুট ধরে এই চা ও সামোবারের প্রচলন রাশিয়া, চীন, মঙ্গলিয়া হয়ে ইউরোপের বেশ কিছু অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
ফিল্টার কফি,দক্ষিণভারতের ঐতিহ্য। নীলগিরি, সহ্যাদ্রি পর্বতের কফি অন্য যেকোনো দেশের কফিকে দশগোল দিতে পারে।
দার্জিলিং চা, বাঙ্গালীর গর্ব, ঐতিহ্য। কিন্তু এই চা যখন বুনো ছিল তখন ভগবান বুদ্ধ জলে ফেলে পান করে ক্লান্তি দূর করতেন।
আর পান… ভারতীয় সব খাদ্যের শেষ পাতে পান। পান খেলে লালাগ্রন্থির নিঃসরণ বেড়ে যায়। এ লালার কারণেই হজমের প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয়। লালার মধ্যে থাকা বিভিন্ন এনজাইম বা উৎসেচক খাদ্যকে কণায় ভাঙতে সাহায্য করে যার ফলে হজম ভালো হয়। শুধু পান পাতা চিবিয়ে খেলেও এ উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে গুরুপাক বা ভারী খাবার খাওয়ার পর অনেকেরই হজমের সমস্যা হয়। এজন্য যে কোনো উৎসব ও অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনের শেষে পান পরিবেশন করা হয় যা খেলে ওসব খাবার দ্রুত হজম হয়ে যায়। কোমল পানীয় খাওয়ার চেয়ে এটা নিশ্চয়ই ভালো।
আর হ্যাঁ , ভারতীয় খাদ্য মানেই মুর্গমসল্লম, বিরিয়ানি, নান, চিকেন ভর্তা , শিক কাবাব এসব নয়। লোকজ খাদ্যেই আসল ভারতকে খুঁজে দেয়। লোকজ খাদ্যের অনেক ঔষধি গুণ আছে। উক্ত খাদ্যগুলি তেল মসলা ছাড়া অত্যন্ত সহজপাচ্য খাদ্য। ইন্ডিয়ার মধ্যে যে ভারত আছে জি 20 সম্মেলনের খাদ্য তারই সন্ধান দিয়েছে।
ভারত বিশ্বাস করে ” বসুধৈব কুটুম্বকম“, “সর্ভে ভবন্তু সুখিনঃ“, এর শাস্ত্রের জ্ঞান যেমন বেদ এবং শ্রীমদ ভগবদ গীতার জ্ঞান যা নিঃস্বার্থ কর্ম এবং আত্মার জ্ঞান প্রদান করে, এর ঐতিহ্যগুলি যা করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। – “এটা আমার, ওটা অন্যের – এই ভাব শুধু এক ক্ষুদ্র স্বার্থবাদী মানুষের। ভারত এক উদার চেতনা সম্পন্ন দেশ এই পৃথিবীর সবাইকে একই পরিবারভুক্ত ভাবে।
পরিশেষে বলি, এই যে খাবারগুলো মেনু নির্দ্ধারন ও রান্না করেছেন হেড শেফ কুনাল কাপুর। তাঁকেও ধন্যবাদ।