উত্তর প্রদেশের কাসগঞ্জে আইনজীবী মোহিনী তোমারের অপহরণ ও খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ। এক অপরাধীর জামিনের বিরোধিতা করার কারণেই আইনজীবী মোহিনীকে অপহরণ করে খুনের পরিকল্পনা করে ধৃতরা। ধৃতদের মধ্যে একই আদালতের একাধিক মুসলিম আইনজীবীও রয়েছেন।
মোহিনী তোমারের দেহ উদ্ধার
গত ৩রা সেপ্টেম্বর তারিখে কাসগঞ্জ জেলা আদালতের সামনে থেকে নিখোঁজ হন জনপ্রিয় হিন্দুত্ববাদী আইনজীবী মোহিনী তোমার। পরেরদিন অর্থাৎ ৪ঠা সেপ্টেম্বর তারিখে কাসগঞ্জের রেখপুর এলাকার হাজারা খাল থেকে মোহিনী তোমারের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। দেহ উদ্ধারের পরই মোহিনীর পরিবারকে খবর দেয় পুলিশ। পরে মোহিনী তোমারের স্বামী ব্রিজেন্দ্র তোমার মর্গে গিয়ে দেহ শনাক্ত করেন। পরে তাঁর করা অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত ও কারণ
তদন্তে নেমে পুলিশ আদালতের নথিপত্র ও অন্যান্য আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে একাধিক তথ্য জানতে পারে। পুলিশ জানতে পারে যে প্রায় মাস দুয়েক আগে সরঞ্জি এলাকায় একটি ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষের পরে হিন্দুদের পক্ষে কেস লড়ছিলেন মোহিনী তোমার। সেই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই জানা যায় খুনের কারণ। তারপরই পুলিশ গ্রেপ্তার করে হায়দার মুস্তাফা, মুস্তাফা কামিল, আসাদ মুস্তাফা ও সালমানকে। পরে এদের জেরা করে আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, মাস দুয়েক আগে একটি ক্রিকেট ম্যাচকে কেন্দ্র করে হিন্দু যুবক ও মুসলিম যুবকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। শিবশঙ্কর নামে এক হিন্দু যুবকের টিমের সঙ্গে খেলায় পরাজিত হয় হায়দার ও সালমানের ক্রিকেট টিম। পরাজিত হওয়ার পরই শিবশঙ্কর ও তাঁর টিমের খেলোয়াড়দের মারধর করে হায়দার, সালমান ও তাঁর মুসলিম বন্ধুরা। বেধড়ক মারধর করা হয় শিবশঙ্কর ও তাঁর হিন্দু বন্ধুদের। সেই মামলায় শিবশঙ্করের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহিনী তোমার। মোহিনী তোমারের বিরোধিতার কারণে হায়দার মুস্তাফা ও সালমানকে বেশ কিছুদিন জেলে থাকতে হয়। পরে জামিনে মুক্ত হয় তাঁরা।
এরই মধ্যে কিছুদিন আগে বিষয়টি নিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মোহিনী তোমার। শিবশঙ্করকে ন্যায় পাইয়ে দিতেই এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন মোহিনী। সেই কথা আদালতের অন্য এক মুসলিম আইনজীবীর মারফত জানতে পারে হায়দারের পরিবার। তারপর একাধিক বার মোহিনীকে আপোস করে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে রাজি হননি মোহিনী। তারপর থেকেই লাগাতার ফোনে হুমকি দেওয়া হতো তাকে।
মোহিনী তোমারকে খুন
এরপরই পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩রা সেপ্টেম্বর, জেলা আদালতের বাইরে থেকে অপহরণ করা হয় মোহিনী তোমারকে। অপহরণ করে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বেধড়ক মারধর করার পরই তাকে খুন করা হয়। পুলিশের মতে, খুনের পূর্বে বেধড়ক মারধর করা হয় মোহিনী তোমারকে। তারপর দেহ নিয়ে গিয়ে ফেলে দেওয়া হয় খালে। গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর তারিখে খাল থেকে উদ্ধার হয় মোহিনীর মৃতদেহ।
FIR- এ যা রয়েছে
মোহিনী তোমারের স্বামীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা(বিএনএস)- এর ১৪০(১), ১০৩(১), ৬১(২) ও ২৩৮ ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অভিযোগে কাসগঞ্জ জেলা আদালতের আইনজীবী আসাদ মুস্তাফা, মুস্তাফা কামিল, হায়দার মুস্তাফা, সালমান, আইনজীবী মুনাজির রফি ও কেশব মিশ্রর নাম রয়েছে। পরে পুলিশ আইনজীবী মুনাজির রফি ও কেশব মিশ্রকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
হিন্দুদের মধ্যে ক্ষোভ
এদিকে ঘটনা ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কাসগঞ্জ জেলা জুড়ে। জেলার একাধিক স্থানে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আইজীবীরা। অন্যদিকে ঘটনায় জেলার হিন্দুদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত লোকজন। মোহিনী তোমার হিন্দুত্ববাদী আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কর্মজীবনে বহু হিন্দুত্ববাদী মানুষের হয়ে মামলা লড়েছিলেন তিনি। এমনকি ২০১৮ সালে দাঙ্গায় খুন হওয়া চন্দন গুপ্তার কেসও লড়ছিলেন মোহিনী তোমার। ফলে এই ঘটনায় চাপা উত্তেজনা রয়েছে জেলাজুড়ে।