Hindu Voice Desk: গত ১৮-১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় এবং ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাঙ্গামাটি সদরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মুসলিম সেটেলাররা জুম্ম জনগণের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা এবং জুম্মদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। উক্ত সাম্প্রদায়িক হামলায় ৫ জন জুম্ম নিহত হয়েছে (সেনাবাহিনী কর্তৃক দীঘিনালায় একজন জুম্ম, খাগড়াছড়ি সদরে সেনাবাহিনীর গুলিতে ৩ জন জুম্ম এবং রাঙ্গামাটি সদরে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক একজন জুম্ম)। এছাড়া এই সাম্প্রদায়িক হামলায় শতাধিক জুম্ম আহত হয়েছে, অগ্নিসংযোগে ভস্মিভূত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।
ঘটনার সূত্রপাত:
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মো: মামুন (৪০) নামের এক মুসলিম সেটেলার খাগড়াছড়ি সদরের মধুপুর এলাকা থেকে গোল্ডি চাকমা (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মোটরবাইকটি চুরি করে দ্রুত চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রাস্তার পাশের একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ধাক্কা খেয়ে ওই চোর মামুন বাইক থেকে পড়ে যায় এবং গুরুতর আহত হয়। তখনই আশেপাশের মুসলিম জনতা এসে “চোর, চোর” বলে মামুনকে মারধর করে। মারধরের ফলে মামুন বেহুঁস হয়ে যায়। পরে মামুনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ ও একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, নিহত বাইকচোর মামুন একজন মূলত পেশাধার চোর। তার বিরুদ্ধে থানায় ১৭টি মামলা চলমান রয়েছে। তন্মধ্যে ১৪টি হচ্ছে চুরির মামলা, ৩টি মাদক সংক্রান্ত মামলা। এছাড়া ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মৃত মামুনের স্ত্রী মুক্তা আক্তার কর্তৃক খাগড়াছড়ি সদর থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায়ও মুক্তা আক্তার প্রধান আসামী হিসেবে ১। মো: শাকিল (২৭), পিতা- আব্দুল মান্নান, শানবন (শাপলার মোড়), খাগড়াছড়ি সদর; ২। রফিকুল আলম (৫৫), পিতা মৃত ওবায়দুল হক, পানখাইয়া পাড়া, খাগড়াছড়ি সদর; ও ৩। দিদারুল আলম (৫০) পিতা মৃত ওবায়দুল হক, পানখাইয়া পাড়া প্রমুখ তিনজন সেটেলার মুসলিম নাম উল্লেখ করেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, বাইকচোর মো: মামুন মূলত বাঙালিদের মারধরের কারণে ও বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ধাক্কা খেয়ে মৃত্যুবরণ করে।
মামুনের মৃত্যুর পরপরই মুসলিম সেটেলাররা সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে প্রচার করতে থাকে যে জুম্মরাই পরিকল্পিতভাবে মামুনকে মেরে ফেলেছে। এভাবে অপপ্রচার চালিয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরের মধুপুরে হামলায় চেষ্টা করে। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি এবং ২০ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়।
খাগড়াছড়ি সদরের মধুপুরে হামলার চেষ্টা:
মামুনের মৃত্যুর পর অপপ্রচার চালিয়ে ১৮ সেপ্টেম্বরের সন্ধ্যার পর থেকে মুসলিম সেটেলাররা খাগড়াছড়ি শহরের মধুপুরে জুম্মদের ঘরবাড়িতে হামলার চেষ্টা করে। এসময় হাসপাতাল ও শালবন এলাকা থেকে শত শত মুসলিম সেটেলার এসে মধুপুরে হামলার চেষ্টা করে। তবে জুম্মদের সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের ফলে সেটেলাররা এক পর্যায়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
দীঘিনালায় হামলা:
গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪:০০ টার দিকে বাঙালি ছাত্র পরিষদের ব্যানারে মুসলিম সেটেলাররা সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দীঘিনালা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের শেষদিকে মুসলিম সেটেলাররা দীঘিনালা সদরে জুম্মদের উপর লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল দিয়ে হামলা করে। এ সময় সেটেলারদের নিক্ষিপ্ত ইট-পাটকেল রিপুয়ে চাকমা নামে একজন জুম্ম ব্যক্তির কপালে আঘাত করে।
এসময় আশেপাশের জুম্মরা “উজো উজো” (এগিয়ে যাও, এগিয়ে যাও) বলে আক্রান্তদের বাঁচাতে এগিয়ে আসলে মুসলিম সেটেলাররা পিছু হটে। সেটেলার বাঙালিরা যখন পিছু হটতে থাকে তখনি সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে আসে এবং জুম্মদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়। সেনা সদস্যরা জুম্মদেরকে যে, “তোমরা চলে যাও, কিচ্ছু হবে না। আমরা আছি। তোমরা এখানে থাকলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠবে।”
আদিবাসী জুম্মরা চলে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরেই সেটেলাররা আবার অস্ত্রেশস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে দীঘিনালা সদরে হামলা চালাতে আসে। এসময় বিকাল আনুমানিক ৫:০০ টার দিকে মুসলিম সেটেলাররা সেনাবাহিনীর চোখের সামনেই বটতলার লারমা স্কোয়ার স্টেশন বাজারে জুম্মদের দোকান ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে জুম্মদের অন্তত ৫২টি দোকান ও বাড়ি এবং ২৪টি মোটরবাইক ও অটোরিক্সা ভস্মীভূত হয়। এসময় সেনাবাহিনীকে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে সেটেলারদেরকে একপ্রকার মদদ দিতে দেখা যায়। এই অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জুম্মদের প্রায় ৬ কোটি টাকার সম্পত্তি ভূস্মীভূত হয়।
এরপর মুসলিম সেটেলাররা দীঘিনালা সদরের কলেজ টিলা ও বাবু পাড়ায় হামলার চেষ্টা করে। সেসময় জুম্ম গ্রামবাসীরা সংঘবদ্ধ হয়ে সেটেলার বাঙালিদের প্রতিরোধ করে। এভাবে প্রায় রাত ৯:০০ টা পর্যন্ত জুম্মদের উপর সেটেলাররা হামলা ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালিয়ে থাকে।
এ হামলায় ব্রিজ এলাকায় দীঘিনালা সদরের উদোলবাগানের হান্দরা চাকমার ছেলে ধর্মজয় চাকমা (৫২) নামে এক জুম্ম গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য কর্তৃক ধর্মজয় চাকমার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় মাইনী ব্রিজ এলাকায় সেনাবাহিনীর ব্রাশ ফায়ার করলে কমপক্ষে ৫ জন জুম্ম আহত হয়। উক্ত ৫ জনসহ দীঘিনালা হামলায় কমপক্ষে ২০ জন জুম্ম হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন বলে জানা যায়।
খাগড়াছড়ি সদরে সেনাবাহিনীর গুলি:
দীঘিনালায় হামলার প্রতিবাদে এবং জুম্ম গ্রামগুলোর সুরক্ষার জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ৬:৩০ টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর, নারানখেয়্যা এলাকায় একদল জুম্ম ছাত্র-যুবকরা জড়ো হতে থাকে। এসময় সেখানে সেনাবাহিনীর একাধিক দল উপস্থিত হয়। এরপর ইউপিডিএফরা গাছবান ও পেরাছড়া থেকে একদল ছাত্র-যুবক আনন্ত মাষ্টার পাড়া সুরক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেয়। এসব ছাত্র-যুবকদের সাথে সেনাবাহিনীর মুখোমুখী অবস্থান শুরু হয়। এতে সামান্য দূর থেকে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
পৌনে ১১:০০ টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি স্বনির্ভর এলাকার দিকে যাচ্ছিল। পাছবান ও পেরাছড়া থেকে আসা ছাত্র-যুবকরা সেনাবাহিনী সেই গাড়িটি রাস্তায় অবরোধ করে। সেনাবাহিনীর সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। জুম্ম ছাত্ররা কান্তা-গুলতি ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী সেখানে গুলিবর্ষণ করে। এসময় সেনাবাহিনীর তাজা গুলিতে অনেক জুম্ম ছাত্র-যুবক আহত হয়। ছাত্রদের কারো কারো পেটে, হাটুতে, পায়ে গুলি লেগে গুরুতর আহত হয়।
তাদের মধ্যে স্বনির্ভর এলাকায় সেনাবাহিনীর গুলিতে ৩ জন নিহত হয়। নিহত ৩ ব্যক্তি হলেন- ১. জুনান চাকমা (২০), পীং-অজ্ঞাত, ঠিকানা-খাগড়াছড়ি সদর, তিনি কলেজ ছাত্র; ২. ধন রঞ্জন চাকমা (৫০), পীং-অজ্ঞাত, ঠিকানা-জামতলি, পেরাছড়া ইউনিয়ন এবং ৩. রুবেল ত্রিপুরা (৩০), ঠিকানা-খাগড়াছড়ি সদর। জানা গেছে, সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ১৫-২০ জন জুম্ম ছাত্র-যুবক আহত হন। আহতদের মধ্যে গুরুতর আহত কমপক্ষে ৬ জন চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছে।
রাঙ্গামাটিতে হামলা:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সকাল ১০:০০ টার দিকে, রাঙ্গামাটি জেলা সদরে সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জুম্ম আদিবাসী ছাত্র-যুবকের উদ্যোগে ১৯ সেপ্টেম্বরের দীঘিনালা-খাগড়াছড়িতে জুম্মদের উপর সেনাবাহিনীর সহায়তায় মুসলিম সেটেলার কর্তৃক সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি যখন বনরূপা পেট্রোল পাম্প এলাকায় পৌঁছে, তখন বনরূপা মসজিদ থেকে একজন মুসলিম সেটেলার কর্তৃক পাহাড়ি ছাত্রদের মিছিলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে থাকে। এতে মিছিলকারীরা উত্তেজিত হয়ে সেটেলারদের উদ্দেশ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে মিছিলকারী ছাত্রদের সাথে বাঙালিদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়।
এরপর সেটেলার বাঙালিরা বনরূপায় জুম্মদের বাড়িতে হামলা চালায়। ৬টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। সেটেলাররা সেভরন ও মেডিনেট ক্লিনিকে, বিজন সরণী এলাকায় জুম্মদের বিভিন্ন দোকানপাটে, জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। অন্যদিকে কাঠালতলীস্থ ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী বিহারে হামলা ও ভাঙচুর এবং তবলছড়িস্থ আনন্দ বিহারে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। মৈত্রী বিহারের গেইট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে সেটেলাররা বুদ্ধমুর্তি, আসবাবপত্র ও দানবাক্স ভেঙ্গে ফেলে। মৈত্রী বিহার থেকে ৭টি দানবাক্স, মাসিক উত্তোলন ৯০ হাজার টাকা, ১০টি বুদ্ধমূর্তি ও লেপটপ লুট করে নিয়ে যায় সেটেলাররা। আনন্দ বিহারে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বিহারের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে দেয় ও বুদ্ধমুর্তির উপর আঘাত করে। মুসলিম সেটেলাররা হাসপাতাল এলাকা ও টিএন্ডটি এলাকায় জুম্মদের ঘরবাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
রাঙ্গামাটিতে মুসলিম সেটেলাররা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ে ও বিশ্রামাগারে হামলা চালিয়ে সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিসাধন করে। এসময় হামলাকারীরা আঞ্চলিক পরিষদের ১টি পিকআপ, ৫টি পাজেরো, ১টি মাইক্রো; ব্যক্তিগত ২টি গাড়ি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ১টি পাজেরো ও ১টি পিকআপে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া আঞ্চলিক পরিষদের গ্রাউন্ড ফ্লোরও পুড়ে যায়। আগুন জ্বলতে থাকার সময় সেনাবাহিনীর একটি দল আঞ্চলিক পরিষদে গেইটে অবস্থান নেয়। এসময় আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি আসলে সেনা সদস্যরা আগুন নেভাতে বাধা দেয়। পুড়ে অংগার হয়ে যাওয়ার পরই সেনা সদস্যরা ফায়ার ব্রিগেডকে আগুন নেভাতে অনুমতি দেয়।
বনরূপা ও কালিন্দীপুরে হামলায় এক জুম্ম যুবক নিহত এবং প্রায় শতাধিক জুম্ম আহত হয়। তম্মধ্যে হাসপাতালে আহত ৫৪ জন জুম্ম ও ঘরে ঘরে ১৫ জন জুম্ম চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা গেছে। নিহত ব্যক্তি হলেন কালামানি চাকমা (১৮), পীং- আদর সেন চাকমা, গ্রাম-নোয়াপাড়া, মগবান ইউনিয়ন, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা। তিনি রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র। তিনি নিউ মার্কেট সংলগ্ন কালিন্দীপুর সড়কে সেটেলার বাঙালিদের হামলায় নিহত হন। তাকে লাটিসোটা নিয়ে আঘাত করতে করতে নুশংসভাবে হত্যা করা হয়। রাঙ্গামাটিতে হামলায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়েছেন। হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
বর্তমানে যা করণীয়:
পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা নতুন কিছু নয়। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনের প্রত্যক্ষ পৃষ্টপোষকতায় এবারের সাম্প্রদায়িক হামলাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে ২১টি সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে। এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করা এবং সে লক্ষ্যে জুম্মদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা, জুম্মদের ভূমি জবরদখল করা, তাদের চিরায়ত জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদ করা, সর্বোপরি জুম্মদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করা।
সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রছাত্রীরা যখন একের পর এক মিছিল ও সমাবেশ আয়োজন করতে থাকে, তখন চিহ্নিত কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা সংঘটনের ষড়যন্ত্র হাতে নিতে থাকে। গত ৩০ আগষ্ট ২০২৪ তারিখে রাঙ্গামাটিতে বাঙালি ছাত্র পরিষদের ব্যানারে তথাকথিত বৈষম্য ও সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ আয়োজনের মধ্য দিয়ে তার আভাস মেলে।
এখানে আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, ২০শে সেপ্টেম্বর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর দেয়া বিবৃতিতে “খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে” বলে বলা হয়েছে। আইএসপিআরের এই বক্তব্য অনেকটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগাম প্রচারনার সামিল, যা দাঙ্গাকারীদের দাঙ্গা সংঘটনে উস্কে দেয়ার ষড়যন্ত্র বলে বিবেচনা করা হয়। আইএসপিআরের মতো একটি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এভাবে কখনোই ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগাম প্রচারনা চালাতে পারে না। এটা অনেকটা মানুষের মনে ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টির সামিল বলে গণ্য করা যেতে পারে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রকৃত রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। তাই অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া জরুরী বলে বিবেচনা করা যায়।