কোচবিহার/১১ই সেপ্টেম্বর: কোচবিহার জেলার শীতলকুচি ব্লকের এক হিন্দু তরুণীকে গণধর্ষণ করার ঘটনায় সাজা ঘোষণা করলো আদালত। সমস্ত তথ্য প্রমাণ বিচার করে তিন যুবককে ২৫ বছরের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকা করে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি। সাজাপ্রাপ্ত তিন জন হলো জামির হোসেন, ফিরোজ আলম মিঞা ও রাসেল মিঞা।
প্রায় ২ বছরের বেশি সময় ধরে মামলা চলার পর গত ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে কোচবিহার জেলা অতিরিক্ত দায়রা আদালত ওই তিন যুবকের সাজা ঘোষণা করেন।
ঘটনা ফিরে দেখা
ওই হিন্দু তরুণী শীতলকুচি ব্লকের বাসিন্দা। দরিদ্র পরিবার। পিতা ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। অনেক কষ্ট করে মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন। পরিবার রাজবংশী সম্প্রদায়ের(SC গোষ্ঠীভুক্ত)। কিন্তু ২০২১ সালের ২১শে ডিসেম্বর তারিখের ঘটনা তাদের জীবন উলটপালট করে দেয়।
ওই হিন্দু তরুণী শীতলকুচি কলেজে পড়াশোনা করতেন। ঘটনার দিন কলেজে যাওয়ার পথে একটি গাড়ি নিয়ে দাঁড়ায় তাঁরই এক সহপাঠী ও কলেজের দুইজন সিনিয়র। জামির হোসেন, ফিরোজ আলম মিঞা ও রাসেল মিঞা ওই হিন্দু তরুণীকে গাড়িতে তুলে নেয়। তারপর তাকে একটি ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওই তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়। গণধর্ষণ চলাকালীন ওই তরুণীর ভিডিও মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখা হয়। এমনকি ওই হিন্দু তরুণীকে হুমকি দেওয়া হয় যে কাউকে কিছু বললে ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়া হবে।
হুমকির কারণে প্রথমে ওই তরুণী ঘটনার কথা কাউকে জানায়নি। পরে এক বান্ধবীকে ঘটনার কথা বলেন। ওই বান্ধবী উদ্যোগ নিয়ে ঘটনার কথা পরিবারকে জানান। পরে ভিন রাজ্যে থাকা ওই হিন্দু তরুণীর পিতা ফিরতেই থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। ওই বছরের ২৩শে স্পেটেম্বর তারিখে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
পুলিশের ভূমিকা
এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ থাকায় প্রথম থেকেই সক্রিয় হয় পুলিশ। অভিযোগ পাওয়ার পর ধৃতদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও SC/ST আইনের পাশাপাশি একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। তদন্তে নেমেই দ্রুততার সঙ্গে তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে শীতলকুচি থানার পুলিশ। পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহে যথেষ্ট সক্রিয় দেখা গিয়েছিল পুলিশকে। পরে মাথাভাঙ্গা মহকুমার এসডিপিও(SDPO) নিজের হাতে তদন্তভার তুলে নেন। সক্রিয়তার সঙ্গে ফরেনসিক প্রমাণ জোগাড় করা হয় এবং তা আদালতে জমা দেওয়া হয়।
হিন্দু নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত শীতলকুচি ব্লক
হিন্দু নির্যাতনের জন্য কোচবিহার জেলার বাংলাদেশ সীমান্তের কাছের শীতলকুচি ব্লক বারবার সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে। লাভ জিহাদের ফাঁদে ফেলে হিন্দু মেয়েদের অপহরণ ও ইসলামে ধর্মান্তরিত করার ঘটনা, হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ, হিন্দুর বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট, হিন্দুর বাড়ি থেকে গরু চুরি করা, হিন্দুকে খুন করার মতো বহু অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। এমনকি মন্দিরে গরুর মাংস ফেলে যাওয়া, মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করার মতো ঘটনাও ২০১৭ সালে শীতলকুচি ব্লকে ঘটেছে। এছাড়াও, ২০২১ সালে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা রীতিমত হিন্দু বিরোধী হিংসার রূপ নেয়। খুন হয়ে যান শীতলকুচি ব্লকের বেশ কয়েকজন হিন্দু যুবক। ভাঙচুর করা হয় কয়েকশো হিন্দুর বাড়ি। শুধুমাত্র বিজেপি করার অপরাধে নির্যাতনের শিকার হন দরিদ্র হিন্দুরা। পরে সিবিআই তদন্ত শুরু করে এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে।