© অমিত মালী
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ক্রমাগত প্রচেষ্টা সত্বেও মণিপুরের পরিস্থিতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। কিছু অংশে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও নতুন করে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। কারণ, হঠাৎই একটি পুরনো ভিডিও ভাইরাল হওয়া। আর সেই ভিডিও এতটাই সংবেদনশীল যে নতুন করে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আসলে দুই মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, তা মণিপুরের এবং বলা হচ্ছে যে মে মাসের ভিডিও সেটি। সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ, প্রশাসন, সরকার, সুপ্রিম কোর্ট, টুলকিট গ্যাং, আজাদী গ্যাং, বলিউড গ্যাং ও সেক্যুলার গ্যাং ইত্যাদি। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং কঠিন শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট হঠাৎই ঘুম ভেঙে লাফিয়ে উঠেছে এবং প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচুড় বাবু ঘোষণা করেছেন যে সরকার যদি ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমরা ব্যবস্থা নেবো। এমনকি প্রধানমন্ত্রী মোদীও এই ঘটনার নিন্দা করেছেন।
কিন্তু এত হইচইয়ের মধ্যে কয়েকটি জিনিস একটু ভাবার রয়েছে। একটু ভাবলেই কয়েকটি বিষয় সামনে আসে, যা ভারতীয় আইন ও বিচার ব্যবস্থার ব্যর্থতাকে স্পষ্ট করে।
প্রথমত, ভাইরাল হওয়ার পরই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। পুলিশ, প্রশাসন ও সুপ্রিম কোর্ট সক্রিয় হয়েছে। নির্যাতিতা দুই মেয়ে ন্যায় বিচার পাবেন। কিন্তু যখন ওই ভিডিও ভাইরাল হয়নি, তখন পুলিশ, প্রশাসন ও সুপ্রিম কোর্ট কী করছিল? কেনো এতদিন পরে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হলো? তাহলে কি ন্যায় বিচার পেতে হলে ভাইরাল হতে হবে?
দ্বিতীয়ত, মণিপুরে হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই এমন বহু ভিডিও সামনে এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে হিন্দু অধ্যুষিত মেইতেই গ্রামে হামলা চালিয়ে খুন, ধর্ষণ, বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে খ্রিস্টান কুকি উগ্রপন্থীরা। কিন্তু সে সব ভিডিও ভাইরাল হয়নি। ফলে সেই সব ভিডিও নিয়ে কেউ আলোচনা করেনি। কেউ লজ্জিতও হয়নি। ফলে নির্যাতিত মেইতেই হিন্দুদের কথা আড়ালেই থেকে গিয়েছে। কত পরিবার শেষ হয়ে গিয়েছে, তা আড়ালে রয়ে গিয়েছে।
তৃতীয়ত, মণিপুরে যে দুই মহিলার উপরে নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা যথেষ্ট নিন্দনীয়। যে কোনও সংবেদনশীল মানুষ ওই ভিডিও থেকে ক্রুদ্ধ হবেন। কিন্তু ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর যেভাবে ওই ভিডিওটি নিয়ে দেশের ছবি খারাপ করার জন্য একদল মানুষ যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছেন, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি যেভাবে ওই ভিডিওকে হাতিয়ার করে ফায়দা তোলার চেষ্টায় রয়েছেন, তা দেখে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক যে আদতে বিরোধী দলগুলো নির্যাতিতাদের ন্যায় বিচার পেয়ে দিতে ইচ্ছুক কিনা।
চতুর্থত, মণিপুরের ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পরে একদল মানুষ নিজেদের হিন্দু বিরোধী এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। যেহেতু অভিযুক্তরা মেইতেই, তাই অপরাধকে হিন্দুদের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে নিন্দায় সরব এক শ্রেণীর মানুষ। আর একটি বিষয় অবশ্য কুকিদের বিরাট অংশ যেহেতু ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান, তাই সংখ্যালঘু সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করে হিন্দু বিরোধী রুটি সেঁকতে ব্যস্ত কিছু মানুষ।
সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরেই সবাই জেগে উঠেছেন। কিন্তু এমনটা কেনো হবে? ন্যায় বিচার পেতে গেলে কি দুনিয়ার সামনে বেআব্রু হয়ে ভাইরাল হতে হবে? আর যারা ভাইরাল হবেন না, তাঁরা কি ন্যায় বিচার পাবেন না? অন্তত বাস্তব পরিস্থিতি সেই দিকেই আঙ্গুল তুলছে।
Credits: The above article is written based on inputs from a Facebook Reel video by Janpeace Live. CLICK HERE to watch the video