শহীদ স্মরণে…



Updated: 30 January, 2024 8:17 am IST
Image Credits: Dainik Bhaskar
Image Credits: Dainik Bhaskar

© শ্রী স্বরূপ কুমার ধবল

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ভারতবর্ষের ইতিহাসে এমন একটি নাম যাঁকে বাদ দিয়ে ভারতবর্ষকে ভাবা যায় না। তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি নিজের জন্য কিছুই করেন নি। লক্ষ লক্ষ আপামর ভারতবাসী যার এক ডাকে সামিল হন। সমস্ত ভারতবাসীকে যিনি এক বিনি সুতোয় গ্রথিত করেছিলেন। একটি শীর্ণকায় মানুষের এহেন সাংগঠনিক শক্তি সারা বিশ্ববাসীকে চমক লাগিয়ে দেয়। তাঁর অহিংসা নীতি অধিকাংশ আপামর জনসাধারণ সেদিন সাগ্রহে মেনে নিয়েছিলেন।

হে মহান আত্মা; আপনি তো ‘জাতির জনক’ আমাদের, আপনার প্রতি অকুন্ঠ শ্রদ্ধা ও ভক্তি আমাদের। আপনি যে জাতির জনক আমরা সেই জাতির সন্তান। সন্তান কি কোন দিন, কোন অবস্থায় মেনে নিতে পারে প্রকাশ্য জনসমক্ষে একজন আততায়ীর হাতে পিতার অকাল মৃত্যু। তাই আপনার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনপূর্বক নব প্রজন্ম জানতে আগ্রহী, কি এমন কারণ ছিল যার জন্য এক ব্যক্তি নিজের কোন স্বার্থসিদ্ধি না জেনে এবং নিজের মৃত্যু নিশ্চিত করে আপনার মতো মহাত্মাকে হত্যা করল প্রকাশ্য দিবালোকে সবার চক্ষুর সম্মুখে। তিন-তিনটে গুলি করে জাতির জনকের বক্ষ বিদীর্ণ করে পালানোর কোন চেষ্টা না করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করল। সে কি আপনার কাছে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিল? না কি অন্য কোন মন্ত্রী হবার অভিলাষ জানিয়েছিল? আপনার সাথে কোন ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল বলে তো ইতিহাস আজও তা প্রকাশ করতে পারেনি। তবু হে মহান আত্মা! আপনার অপঘাতে মৃত্যু হল। চোক্ষের সম্মুখে প্রত্যক্ষ করলেন নিজ মৃত্যুকে। স্বীয় মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করার মতো ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা বোধ হয় আর কিছু হয় না। কথিত আছে অনেক পাপ করলে নিজ মৃত্যু দৃষ্টিগোচর হয়। আপনি তো সৎ, ন্যায়-নিষ্ঠ, দেশের মঙ্গলসাধক, ভারতের স্বাধীনতার কাণ্ডারী, সত্যাগ্রহের মূর্ত প্রতীক, অহিংসার পুজারি ছিলেন। হে জাতির জনক! আজ আপনার অগণিত সন্তান জানতে খুব উৎসুক আপনার এহেন নৃশংস, অমানবিক পরিণতির কারণ কি?

১৯৪৮, ৩০শে জানুয়ারি আপনি যদি আমাদের একটু সময় দিতেন তাহলে হয়তো আপনার প্রাণ আমরা রক্ষা করতে পারতাম। কিন্তু সে সুযোগ দিলেন না। হে মহাত্মা! আপনি বরাবরই বড়ো অভিমানী।

হে ভারতবাসী! আপনারা মনে রাখবেন আমাদের প্রিয় বাপুজীর মৃত্যু কোন সামান্য স্বার্থবাজ, তোষামুদে মানুষের হাতে হয়নি। আমাদের মহান আত্মা সবার নমস্য জাতির জনকের প্রাণ হরণ করেছিলেন যিনি, তিনি হিন্দুজাতির গড…সে। হয়তো সেই কারণেই পুণ্যাত্মা জনক তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পূর্বে উচ্চারণ করেছিলেন-‘হে রাম, হে ঈশ্বর; তিনি বিচক্ষণ ছিলেন , তাই তিনি জানতেন যার হাতে তাঁর মৃত্যুবান, তিনি আর কেউ নন, একাধারে ‘রাম’, অন্যদিকে দিকে ‘ঈশ্বর’। হ্যাঁ! নাথু… রাম গড… সে। অবুঝেরা তার সম্মান না দিলেও মৃত্যুর পূর্বে আমাদের জাতির জনক তাকে সম্মান জানাতে ভোলেননি।

বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির হে নবপ্রজন্ম যাকে তোমরা ‘জাতির জনক’ বলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপণ কর সেই বাপুজী কোন্ জাতির জনক তা আজ পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। আর ‘মহাত্মা’ তিনি ছিলেন কিনা তার উত্তর ‘তথ্য জানার অধিকার’ থেকে পাওয়া যায়নি। ১৯৪৯ সালের ১৫ই নভেম্বর এই মহান দেশপ্রেমিকের ফাঁসি হয়েছিল। ৮ই নভেম্বর ১৯৪৮ সালে আদালতে জবানবন্দী দিয়ে তিনি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছিলেন, ‘আমার এ অবিচল বিশ্বাস আছে যে সৎ ঐতিহাসিকেরা ভবিষ্যতে একদিন আমার কাজকে যোগ্য গুরুত্ব দিয়ে বিচার করবে এবং তারা এ কাজের সত্যমূল্য নির্ধারণ করবে।’

১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি, স্থান; প্রার্থনা সভার মঞ্চে যাবার মাঝপথ, সময়; বিকেল পাঁচটা, নাথুরাম গডসে অগণিত মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে সামনে থেকে গান্ধীজীকে তিনটি গুলি করে পালিয়ে না গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গান্ধীজীর মুখ থেকে কেবল একটা অব্যক্ত আওয়াজ বেরিয়ে এসেছিল- আঃ…. বুকের মধ্যে পর পর তিনটি গুলিবিদ্ধ হবার পর কারো পক্ষে ‘ রাম ‘ নাম স্মরণ করে ঈশ্বর ভজনা সত্যই একটু অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। তবুও মানু গান্ধীর বক্তব্যকে আমাদের মেনে নিতেই হবে। ৫টা ১৭ মিনিটে আমাদের প্রণম্য জাতির জনক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নানা অভিযোগে বারো জন’কে অভিযুক্ত করা হল। ন’জন গ্রেফতার হল আর তিনজন ফেরার ছিল। লালকেল্লাতে বিশেষ আদালত গঠন করা হল। আত্মাচরণ অগ্রবাল বিচারপতি নিযুক্ত হলেন। লালকেল্লাতে এটিই ছিল তৃতীয় বিচারানুষ্ঠানের ঐতিহাসিক ঘটনা। ১৯৪৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর শুনানি শেষ হয়। রায়দান স্থগিত রাখা হল। ১৯৪৯ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি রায় দেওয়া হল। রাজসাক্ষী হওয়ায় দিগম্বর বাদগে’কে ক্ষমা করা হল। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বীর সাভারকর বেকসুর খালাস হন। পাঁচজন বিপ্লবীর যাবজীবন কারাবাস হয়, তাদের মধ্যে একজন হলেন নাথুরাম গডসের ভাই গোপাল গডসে। আর দু’জনের ফাঁসি হয়, নাথুরাম গডসে ও নারায়ণ আপ্তে। প্রসঙ্গত উল্লেখ, এটাই ছিল স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম ফাঁসি। পরাধীत ভারতবর্ষে দেশকে ভালোবাসার জন্য ব্রিটিশ রাজত্বে অগণিত দেশ- প্রেমিকের ফাঁসির ইতিহাস আমরা জানি কিন্তু স্বাধীন ভারতবর্ষে দেশকে ভালোবাসার জন্য জওহরলাল নেহেরুর রাজত্বে দু’জন দেশপ্রেমিকের ফাঁসির কাহিনির নেপথ্য ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি না, আসলে আমাদের জানতে দেওয়া হয়নি, কার্যের কারণ- সমূহ।

আত্মপক্ষ সমর্থনে গডসে আদালতে যেভাবে তার বক্তব্য উপস্থাপিত করেছিলেন, তা শ্রবণ করে সেদিন আদালত কক্ষে নেমে এসেছিল এক প্রাণহীন গভীর নীরবতা। উপস্থিত নারীদের কান্না কিছুতেই বাধ মানছিল না, পুরুষদের বক্ষ হতে উৎসারিত এক চাপা দীর্ঘনিঃশ্বাস সমগ্র আদালতকে স্তম্ভিত করে তুলেছিল। বিচারপতি খোসলা অবসর নেবার পর জানিয়েছিলেন, ‘যেভাবেই হোক, আমার কোন সন্দেহ নেই যে সেদিনকার দর্শকদের যদি জুরির আসনে বসান হত অথবা গডসের পুনর্বিচারের আবেদনের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া যেত তবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তারা এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হতেন সে নাথুরাম নিরপরাধ।’

পরমপূজ্য গান্ধীজী হলেন সেই ব্যক্তি যিনি ভারতবর্ষের বক্ষে বিষবৃক্ষ রোপন করেছিলেন এবং সেই বৃক্ষে জল সেচন করেছিলেন জহরলাল নেহেরু । আজ ভারতবর্ষের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে যে চরম অস্থির পরিস্থিতি তার জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দায়ী করমচাঁদ গান্ধী। তিনি না চাইলে ভারতবর্ষ কোন দিন বিভক্ত হত না। অন্যান্য ক্ষেত্রে অনশন করে জেদ দেখিয়ে নিজের একগুয়েমি বজায় রেখে কাজ হাসিল করেছিলেন। কার্যত অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা তাঁর উচিৎ হয়নি। কিন্তু দেশবিভাগের প্রশ্নে তাঁর সেই জেদ, একগুয়েমি, অনশন গেল কোথায়? হ্যাঁ; জিন্না, মুসলিম লীগ ও তাঁর প্রাণপ্রিয় মুসলিমরা যে সেক্ষেত্রে ক্ষুণ্ণ হবেন। তোষণ, তোষণ, আর তোষণ। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বাল গঙ্গাধর তিলকের মৃত্যুর পর কার্যত কংগ্রেসে গান্ধীজীর আর কোন প্রতিপক্ষ নেতা ছিলেন না। ফলত তিনি কংগ্রেসের একছত্র একনায়ক হয়ে উঠলেন। গান্ধীজীর মতানুসারেই একপ্রকার কংগ্রেস পরিচালিত হতে থাকল। এমন কি শ্রীমদ্ভাগবত গীতা’কে অবধি নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করতে লাগলেন। লক্ষণচার্যের রামধুন সংগীতে তিনি ঢুকিয়ে দিলেন- “ঈশ্বর আল্লা তেরে নাম”। এই লাইনটি প্রকৃত রামধুন সংগীতে নেই।

গান্ধীজী ভারতীয় জনসমাজে একটা বৃহত্তর জন জাগরণ এনেছিলেন একথা সর্বতোভাবে সত্য। ভালো কাজ যে কিছুই করেন নি এমনটাও নয়। কিন্তু তাঁর অত্যন্ত জেদ, অসম্ভব দম্ভ ও মারাত্মক একগুয়েমি , ভারতবর্ষের চিরস্থায়ী যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে তাতে উনার সদর্থক দিকগুলি অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে। গান্ধীজীর ইতিহাস কেবলই মুসলিম তোষণে ভরা। মুসলিম লীগকে তিনি গর্বের সঙ্গে মান্যতা দিয়েছিলেন কিন্তু হিন্দু মহাসভাকে তিনি সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিলেন। তাঁর এই দ্বিচারিতার জন্য তিনি ক্ষমার অযোগ্য। প্রয়োজন- অপ্রয়োজনে মুসলিমদের তোষণ করেও তিনি তাদের মন জয় করতে পারেন নি। সাধারণ কিছু মুসলিমের ভাবধারাকে উদাহরণ করে মুসলিম সমাজের চরিত্র নিরুপিত ও নির্ধারিত করা যায় না। মুসলিম নেতা ও ধর্মগুরুরা হলেন সেই সমাজের প্রকৃত কাণ্ডারী। তারা যা নির্দেশ দেন ভালো-মন্দের বাচ-বিচার না করে, যুক্তি-তর্কের বিবেচনা না করে ব্যতিক্রমী কিছু মুসলিমকে বাদ দিয়ে সকলেই সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। গান্ধীজী সেই সমস্ত নেতা ও ধর্মগুরুদের প্রাধান্য দিয়ে, তোষণ করে সমগ্র মুসলিম সমাজের লেজ মোটা করে দিয়েছিলেন। যার বিষময় ফল ভোগ করতে হয়েছে সে সময়ে এবং বর্তমানেও করছে হিদুসম্প্রদায়। আর হে মহান বাপুজী; আপনি অহিংসার নিখাদ পুজারি মোটেই নন । আপনি নেতৃত্বের পুজারি ছিলেন। রাজনীতি এবং মনস্তত্ব ভালোই বুঝতেন। আপনি জানতেন মুনি-ঋষির বংশধর সনাতনী ভারতীয়দের রক্তে অহিংসার স্রোতধারা অন্তঃসলিলা ফল্গুর ন্যায় শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত। সুতরাং তাদের এই প্রাচীন ভাবধারাতে একত্রিত করা সহজ। কিন্তু সেইসব তপস্বীদের মধ্যে অস্ত্রধারী পরশুরামও যে আছেন তা আপনি মোক্ষম ভাবে বুঝেছিলেন ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি, যখন দেখলেন নাথুরামকে । ‘রাম’ নামের সত্যই কি অপার মহিমা! হে রাম! কি কাকতালীয় আপনার আবির্ভাব।

হে মহান অহিংসার ভেকধারী বাপুজী আপনি ‘জাতির জনক’ বলে লোকসমাজে প্রচারিত হতে পারেন কিন্তু তা সনাতনী হিন্দুদের জন্য নয়। আপনার আচার, আচরণ, ব্যবহার, কার্যকলাপ – দৃষ্টিভঙ্গি হিন্দু জাতির কোন কল্যাণ বা মঙ্গলসাধন সেভাবে করেনি বরং আপনার তুষ্টিকরণ নীতির জন্য হিন্দুজাতিকে নিধন ও হিংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ‘মহাত্মা’ বা ‘জাতির জনক’ আপনি কোন ব্যক্তি বিশেষের কাছে হতে পারেন , কিন্তু ভারত সরকার তার কোন অনুমোদন দেয় নি। Indian Council of Historical Research (ICHR) এবং National Archives of India (NAI) সরকারিভাবে প্রদত্ত ঐ উপাধির কোন তথ্য প্রদান করতে পারে নি। Prime Minister office পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, “there are no specific documents on the information sought.

” পিতা কখনোই সন্তানকে বিপদের দিকে জেনে-বুঝে ঠেলে দেয় না, সন্তানকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে না বা সন্তানের স্বার্থরক্ষা না করে নিঃশ্চুপ থাকে না। সেই সূত্রে একটা সমগ্র জাতির পিতা হবার কোন গুণ বা ক্ষমতা আপনার নেই। আপনি যাদের কথা শুনেছেন, যাদের আবদার রক্ষা করেছেন, যাদের স্বার্থ দেখেছেন, যাদের অধিকারের জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, তাদের জনক রূপেই পুজিত হন, এটাই আপনার পক্ষে হিতকর।

হে বাপুজী; আপনার অনুরাগীদের কাছে নাথুরাম হতে পারে আততায়ী, কিন্তু অগণিত দেশবাসীর কাছে তিনি ‘গড’, ত্রাণকর্তা। গডসে যদি আততায়ী হন তাহলে পরাধীন ভারতবর্ষে যে বিপুল সংখ্যক বিপ্লবী ব্রিটিশদের হত্যা করেছিলেন তারা তাহলে আপনাদের দৃষ্টিতে কোন্ আখ্যায় বিভূষিত? যারা আজ নাথুরামের সমালোচনা করার সুযোগ পাচ্ছেন তারা জানেন না এই আততায়ীটি জেনে-শুনে নিজের প্রাণ বিসর্জন করে তাদেরকে এই সমালোচনা করার জন্য জীবনদান করে গেছেন। গান্ধীজীকে হত্যা ছাড়া গডসের বিরুদ্ধে কোন কলঙ্ক সমালোচকরা সেভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। আর হত্যার অপরাধ তিনি স্বয়ং আদালতে স্বীকার করেছিলেন। তিনি কাপুরুষ ছিলেন না। বীর, সাহসী, সত্যনিষ্ঠ এক দেশপ্রেমিক ছিলেন।

হে বাপুজী; আপনাকে হত্যা করে নাথুরাম কোটি কোটি হিন্দুকে অনেকাংশে রক্ষা করেছেন। আদালতে গডসের জবানবন্দী পাঠ করার পর পুনঃবিবেচনার সুযোগ দেওয়া হলে ইতিহাসের চাকা নিশ্চিত ভাবে অন্যদিকে মোড় নিত।

তাই তো ভয় পেয়ে গান্ধীজীর প্রতিষ্ঠিত সরকার পুনঃবিবেচনার সুযোগটাই বন্ধ করে দিয়েছিল। শুধু কি তাই, আদালতে বসে থাকা সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করা হয়েছিল এবং সেদিন আদালতে ঘটে যাওয়া বিবরণ সমূহ সেখানেই নষ্ট করতে বাধ্য করেছিলেন। গডসের জবানবন্দীর লিখিত কপি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, এমন কি আদালতে গডসে যাতে জবানবন্দী পাঠ করতে না পারেন তার জন্য বাদীপক্ষ সব রকম চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এই সব সরকারী পদক্ষেপ প্রমাণ করে নাথুরাম গডসের জনসমর্থনের পাল্লা ভারী ছিল। সরকারের কি এমন ভয় ছিল, যার জন্য একজন আততায়ীর জবানবন্দীকে বাজেয়াপ্ত করতে হল? আসলে ৮/১১/১৯৪৮ তারিখে প্রকাশ্য আদালতে নাথুরাম গডসে গান্ধীজীকে সর্বসমক্ষে উলঙ্গ করে দিয়েছিলেন, সরকার চান নি এই ঘটনাসমূহ সর্বসাধারণের মধ্যে প্রচারিত হোক। অবশেষে ১৯৪৯ সালের ১৫ই নভেম্বর বুধবার সাড়ে একুশ মাস পর সকাল আটটায় আম্বালা জেলে নাথুরাম গডসে ও নারায়ণ আপ্তে ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যান । হাতে ছিল ভাগবত গীতা, অবিভক্ত হিন্দুস্থানের একটি মানচিত্র আর একটি করে গেরুয়া পতাকা। জেল সুপারিনটেনডেন্ট শ্রী অর্জুন দাস তাঁর ফোঁপানো কান্নাকে কোন মতে সংযত করলেন। খানিক ক্ষণ পরেই চারিদিকের নিস্তব্ধ পরিবেশে প্রতিধ্বনি হল- ‘অখণ্ড ভারত- অমর রহে। বন্দে মাতরম্। অগণিত মুনি-ঋষির পুণ্যস্নানে পবিত্র সিন্ধুনদ আপনার চিতাভস্মকে বক্ষে ধারণ করে প্রবাহিত হবার আশায় আজও গভীর আগ্রহে অপেক্ষমান। “অহিংসা পরম ধর্ম, ধর্ম হিংসা তথৈব চ।”

আজ এই শহীদ দিবসে গান্ধীর সবরমতী আশ্রমে অবশ্যই রাম নাম প্রতিধ্বনিত হচ্ছে-
“রঘুপতি রাঘব রাজা রাম পতিত পাবন সীতারাম.. সবকো সম্মতি দে ভগবান।”