© শ্রী সূর্য শেখর হালদার
(নিবন্ধটি প্রকাশিত হয় বিগত 23 মার্চ 2021 opIndia.com নামক পোর্টালে)
সাম্প্রতিক কালে দাসনা দেবী মন্দির সেকুলার লিবারাল মিডিয়ার কোপে পড়েছে । কারণ মন্দির কর্তৃপক্ষ স্থানীয় মুসলিমদের ধর্ম স্থান অপবিত্র করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে । তথাকথিত লিবারালের দল একটি মুসলিম ছেলের থাপ্পড় খাবার ঘটনার সমালোচনা করতে গিয়ে নিজেদের অজান্তেই এই গ্রামের সনাতনী হিন্দুদের একটি দীর্ঘদিনের সমস্যাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
দাসনা দেবী মন্দিরের মহন্ত যতি নরসিংহানন্দ সরস্বতী মহারাজ মন্দির কর্তৃপক্ষের মন্দিরের মধ্যে মুসলিম প্রবেশ রোধের সিদ্ধান্তকে উঁচু গলায় সমর্থন করেছেন। এতেই মিডিয়াতে হইচই পড়ে গেছে। সাম্প্রতিককালে তিনি সমাচার 24*7 নামক সংবাদপত্রে একটি নিবন্ধ রচনা করেন। এখানে তিনি যে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন তাতে তিনি একজন অনাসক্ত, বৈরাগী হিন্দু সাধু থেকে একজন নিবেদিতপ্রাণ হিন্দুত্ববাদীতে পরিণত হন। এই নিবন্ধে তিনি সহযোদ্ধা হিন্দুদের মা-বোনেদের সম্মান রক্ষার জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে আহ্বান জানান।
বহু মিডিয়ার নেওয়া সাক্ষাৎকারে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারে নরসিংহানন্দ সাহসিকতার সঙ্গে জানিয়েছেন যে তিনি মন্দির কর্তৃপক্ষের মন্দিরে মুসলিম প্রবেশ বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে পূর্বে বহু বার মুসলিমরা মন্দির অপবিত্র করণের কাজ, চুরি, ডাকাতি এবং মহিলা ভক্তদের শ্লীলতাহানীর মত কাজ মন্দির চত্বরে সংগঠিত করেছে। তারই ভিত্তিতে মন্দির কর্তৃপক্ষ এই জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং তিনি নিষ্ঠা সহকারে মন্দির কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করবেন অর্থাৎ মন্দিরে মুসলিম প্রবেশ হতে দেবেন না।
বিতর্কে জড়িয়ে খ্যাতিমান হওয়া দাসনা দেবী মন্দিরের এই মহন্ত যতি নরসিংহানন্দ সরস্বতীকে আমাদের একজন প্রবল ভক্ত নিষ্ঠ হিন্দু বলেই মনে হয়, কিন্তু পূর্ব জীবনে তিনি এমন কিছু বড় ভক্ত ছিলেন না। কিভাবে তিনি পার্থিব জগৎ ত্যাগ করে এই সন্ন্যাস জীবনে এলেন তার পিছনে একটা মর্মস্পর্শী কাহিনী আছে। এই নিবন্ধে তিনি সেই স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি লিখেছেন কিভাবে তাঁর মধ্যে আধ্যাত্মিক শক্তি জাগরিত হয় এবং আজ তিনি যা হয়েছেন সেই স্থানে তিনি কিভাবে আসেন । তাঁর নিবন্ধে তিনি লিখেছেন যে 1997 সালে একটি নিরীহ মেয়ের মৃত্যু তাঁর ওপর এত গভীর প্রভাব ফেলে যে তিনি তার জীবনকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে ফেলেন ।
পূর্বাশ্রমে যতি নরসিংহানন্দের নাম ছিল দীপক ত্যাগী । তিনি ছিলেন মস্কো থেকে M. Tech. পাশ করা একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার । দীপক সবসময়ই জীবনে বড় কিছু হতে চাইতেন, তাই মস্কো থেকে ফেরার পর তাঁর মনে হয়েছিল যে তাঁর রাজনীতিতে যোগদান করা উচিত।
নরসিংহানন্দ তাঁর নিবন্ধে লেখেন যে তিনি এক উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাঁর ঠাকুরদা বুলন্দশহরের একজন কংগ্রেস নেতা ছিলেন। বাবা ছিলেন কেন্দ্র সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের জাতীয় স্তরের নেতা। যেহেতু তিনি একটি রাজনৈতিক পরিবারে জন্মেছেন , তাই রাজনীতিতে আসার পরেই তীব্র গতিতে তাঁর উত্থান হয়। তিনি খুব শীঘ্রই সমাজবাদী দলের যুব ব্রিগেডের জেলা স্তরের নেতা হয়ে যান।
নরসিংহানন্দ লেখেন যদিও তাঁর ঠাকুরদা কংগ্রেস করতেন, তবুও তিনি সমাজবাদী রাজনীতির দিকে আকৃষ্ট হন। তাঁর বিদেশে শিক্ষা হবার কারণে কখনো মনেই হয়নি যে তিনি হিন্দুত্বের দিকে আকর্ষিত হবেন । রাশিয়ায় শিক্ষা গ্রহণের কারণে তাঁর মনে হতো ধর্ম একটা কুসংস্কার এবং মানুষকে ঠকানোর ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছু নয় । তাঁর বাড়ি মীরাটে হবার কারণে তাঁর বেশকিছু মুসলিম বন্ধুও ছিল । প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য তিনি বিদেশে স্নাতক হয়েছিলেন।
যাইহোক হিন্দুত্বের আদর্শের সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় ঘটে, যখন তাঁর সঙ্গে দেখা হয় বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তথা দিল্লির প্রাক্তন সাংসদ বৈকুণ্ঠ লাল শর্মা ওরফে প্রেমজীর সঙ্গে। প্রেমজি সেই সময় তাঁকে অনেক মুসলিম নাশকতার ঘটনা বলেন যা তাঁকে বিস্মিত করে এবং তিনি এগুলিকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে পারেন না। এর কিছুদিন পরেই এমন একটি ঘটনা ঘটে যা নরসিংহানন্দকে হিন্দুত্বের রাজনীতিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে।
দাসনা দেবী মন্দিরের মহন্তের মতে যেহেতু তিনি একজন সমাজবাদী নেতা ছিলেন, তাই তাঁর কাছে বিভিন্ন ধরনের মানুষ আসতেন। একদিন একটি মেয়ে তাঁর কাছে আসেন এবং কলেজের মুসলিম ছেলেরা কিভাবে তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছে সে কথা তাঁকে জানায়। নরসিংহানন্দের বয়ান অনুযায়ী মেয়েটির সঙ্গে একটি মুসলিম মেয়ের বন্ধুত্ব হয়। মুসলিম মেয়েটি ওই হিন্দু মেয়েটিকে একটি মুসলিম ছেলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। ওই মুসলিম ছেলেটি এবং মেয়েটি মিলে হিন্দু মেয়েটির কিছু অশালীন ছবি তুলে নেয় এবং সেটি ফাঁস করে দেবার ভয় দেখিয়ে হিন্দু মেয়েটিকে কলেজের প্রত্যেক মুসলিম ছেলের সঙ্গে সঙ্গমে বাধ্য করা হয়। হিন্দু মেয়েটি সেদিনের দীপক ত্যাগীকে বলেন যে সে একা নয়, এভাবে অন্তত ৫০ জন হিন্দু মেয়ে কলেজে মুসলিম ছেলেদের দ্বারা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছে এবং যৌন হেনস্থাকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। মোহন্ত বলেন এই ব্ল্যাকমেল এবং যৌন হেনস্তার চক্রে কয়েকটি হিন্দু ছেলেও ছিল।
নরসিংহানন্দ মেয়েটির দুরাবস্থার কথা শুনে প্রবলভাবে ক্রুদ্ধ হন এবং হিন্দু মেয়েটিকে প্রশ্ন করেন যে এতদিন তিনি কেন কোনো অভিযোগ করেননি? মেয়েটি উত্তরে বলেন, যে মুসলিম ছেলেটি মূল অভিযুক্ত তাকে সব সময় নরসিংহানন্দের পাশেই দেখা যায়। মেয়েটি আরো বলেন যে দীপক ত্যাগীদের মতো লোকদের জন্যই মেয়েটিকে এই ভাবে যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে।
” মেয়েটি আমাকে তার ওপর ঘটে যাওয়া বর্বর ঘটনার জন্য দায়ী করেন। যখন আমি বলি যে আমি এই ঘটনা বিষয়ে কিছুই অবগত নই, তিনি বলেন আমার বিষয়টি অজানা থাকা অসম্ভব। মেয়েটি বলেন এই মুসলিমরা মেয়েদের ভাগ করে যৌন হেনস্থা করে, হিন্দু মেয়েদের জোর করে নিষিদ্ধ মাংস খাওয়ায় আর দীপক ত্যাগী নিশ্চয়ই এই মুসলিমদের থেকে এর বিনিময়ে কিছু পান। এভাবে মেয়েটি ভয়ানক অভিযোগ করেন, আর তাঁর শব্দ আমাকে ভিতর থেকে কাঁপিয়ে দেয়।” – এভাবেই নরসিংহানন্দ তাঁর নিবন্ধ লেখেন।
নরসিংহানন্দ তখন প্রশ্ন করেন যে যৌন হেনস্থার বিষয়টি কিভাবে হিন্দু-মুসলিম এই ধর্মীয় মাত্রা পেল? তখন মেয়েটি বলেন যে এটি একপ্রকার জিহাদ যা মুসলিমরা হিন্দুদের বিরুদ্ধে শুরু করেছে। যতি নরসিংহানন্দ সেই প্রথম জিহাদ শব্দটি শোনেন এবং তারপর মেয়েটি তাঁর কাছে জিহাদের বিশদ ব্যাখ্যা দেন।
যতি নরসিংহানন্দ লিখেছেন, “আমি তখন সেই মেয়েটির হাত নিজের হাতে ধরলাম এবং বললাম যে তাঁর দুঃখ, ক্ষোভ বোঝার জন্য আমার কন্যা থাকার প্রয়োজন নেই। তখন মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে আমার অফিস থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেলেন । আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিল। আমি স্থির ভাবে বসে রইলাম। আর মনের মধ্যে তখন বিভিন্ন প্রকার আবেগের ঘনঘটা। বিভিন্ন প্রকার আবেগের সংঘাতে নতুন কিছু অনুভূতি জন্ম নিল আর সেইসব অনুভূতি আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিল। আমি ইসলামের ইতিহাস, ইসলামের উপর লেখা বিভিন্ন বই পড়তে লাগলাম। যত আমি পড়লাম, ততই মেয়েটির যন্ত্রনা মনে করে আমার মনে রাগ ও ক্ষোভের বৃদ্ধি হতে লাগল। “
যাইহোক নরসিংহানন্দ যখন স্থির করলেন যে তিনি মেয়েটির স্বপক্ষে যুদ্ধ করবেন, ততক্ষণে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। স্বামীজি বলেন মেয়েটির স্মৃতি এখনো তাঁকে স্বপ্নে তাড়া করে ফেরে। আজও তাঁর মনে হয় মেয়েটির যন্ত্রণা তিনি অনুভব করছেন আর মেয়েটির কান্না তার কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
”একজন বাবা কিংবা ভাই যেভাবে এইরকম একটি মেয়েকে মৃত্যুর পর তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতেন, ঠিক সেভাবেই আমি তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু আমি তাঁকে মেয়ের মতোই দেখেছিলাম। বহু বছর ধরে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা আমি মনের গভীরে চেপে রেখেছিলাম। কিন্তু আজকে এই ঘটনা সবাইকে জানানোর প্রয়োজন আছে।
ওই মেয়েটি আমাকে বুঝিয়ে ছিল যে হিন্দুরা অনেকদিন আগেই ভুলে গেছে যে একটি মেয়ে শুধু একজনের মেয়ে নয়: সে হচ্ছে সমগ্র সম্প্রদায়ের মেয়ে। আমি জানি না আমাদের সম্প্রদায়ের বিবেক কি বলছে! আমারা মনে হচ্ছে স্বীকার করতে চাইছি না যে ধ্বংস আমাদের সম্মুখেই। “
তিনি বলেন হিন্দু মেয়েদের আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সচেতন হওয়া সত্ত্বেও, হিন্দুদের বিবেক জাগ্রত হয়নি। নরসিংহানন্দের আক্ষেপ যে আজও এই ঘটনা দিকে দিকে ঘটে চলেছে। কিন্তু আমরা এই বিষয় সর্ম্পকে একেবারেই ভাবিত নই।
যতি নরসিংহানন্দ নিবন্ধে লিখেছেন – “আমার কোন ব্যক্তিগত অনুশোচনা নেই কারণ আমি যতটুকু পারি ততটুকু করেছি। যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন কাজ করে যাব। আমার দেখে দুঃখ লাগে যে কিছু পচা আপেলের জন্য যেমন গোটা আপেলের বাক্স নষ্ট হয়ে যায়, ঠিক সেই রকমই কিছু নষ্ট হিন্দুর জন্য সমগ্র হিন্দু সমাজের দুর্নাম হচ্ছে। আর এটা দেখেও আমি বিশেষ কিছু করে উঠতে পারছিনা। “
তাঁর নিবন্ধের শেষের দিকে যতি নরসিংহানন্দ হিন্দুদের সম্পর্কে কর্কশ কথা ব্যবহার করেছেন। কারণ হিন্দু সম্প্রদায় এমন একটি সম্প্রদায় যারা ইসলামের লাভ জিহাদের বিপদ থেকে নিজেদের মেয়েকে রক্ষা করতে পারছে না। পরিশেষে তিনি লিখেছেন যে হিন্দু সম্প্রদায়ের বোধোদয়ের এটাই শেষ সময়। এখনও যদি হিন্দুরা জাগ্রত না হতে পারে তাহলে হিন্দু মেয়েদের বিরুদ্ধে হওয়া সংগঠিত অপরাধ রোধ করা সম্ভব নয়। এই কারণে তিনি এমন নেতাদের নির্বাচিত করার জন্য জোর দেন যাঁরা এই বিষয়গুলিকে সমাজের কাছে উত্থাপিত করতে পারেন।