হরিয়ানার নুহতে হিন্দুদের উপরে ইসলামিক মৌলবাদীদের ভয়াবহ হামলার ঘটনায় কেঁপে উঠেছে গোটা দেশ( Nuh Anti-Hindu Violence)। হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে হিন্দুদের গুলি করে, গলা কেটে নৃশংস খুন – এসবই ঘটেছে বিগত দিনে। অনেকেই বিষয়টিকে হঠাৎ করে সৃষ্টি হওয়া সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ বলে চালিয়ে দিতে চাইলেও তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখছেন। তাঁরা বলছেন যে এই হিংসা হঠাৎ করে শুরু হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনার পরই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২১শে থেকে ২৩শে জুলাই একদল ইসলামিক মৌলবাদী দফায় দফায় বৈঠক করে হিন্দুদের ধর্মীয় শোভাযাত্রায় হামলার পরিকল্পনা করে। সেই মতো বহু যুবককে বাছা হয়। তাদের নিয়ে আলাদা আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়। তদন্তকারীরা বলছেন যে বিভিন্ন গ্রুপকে বিভিন্ন দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। মনু মানেসর এবং বজরং দলকে শিক্ষা দিতে হামলার পরিকল্পনা করে মৌলবাদীরা, বলছেন তদন্তকারীরা।
রিপোর্ট অনুযায়ী, একটি দলকে পাথর জোগাড় করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্য দলকে কাঁচের বোতল ও পেট্রোল জোগাড় করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এছাড়াও, প্রায় ২০০ জনকে নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়, যাদের সকলের মোটরসাইকেল আছে। তাদেরকে নির্দেশ হয় যে বাইকের নম্বর প্লেট যেনো কালো রং দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। যাতে কোনও ফুটেজে বাইকের নম্বর প্লেট দেখা না যায়, সে জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়াও, শোভাযাত্রা নালহার মহাদেব মন্দিরে যদি পৌঁছে যায়, সে জন্যও আলাদা পরিকল্পনা করে রেখেছিল ইসলামিক মৌলবাদীরা। মন্দির চত্বরে হামলার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আলাদা গ্রুপকে। সেই গ্রুপের মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে পাথর এবং কাঁচের বোতল নিয়ে মন্দিরের আশেপাশের পাহাড়ি এলাকায় অপেক্ষা করতে। হিন্দু পুণ্যার্থীদের শোভাযাত্রা এলেই যেনো হামলা চালানো হয়, দেওয়া হয়েছিল এমন নির্দেশ।
তদন্তকারী অফিসাররা বলছেন যে নুহতে অবস্থিত সাইবার ক্রাইম থানা ধ্বংস করার জন্য আলাদা পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পুলিশের কথায়, ব্যাপক পাথর ছোঁড়ার কারণে একটি বাস ছেড়ে পালিয়ে যায় সকলে। তারপর একদল যুবক এসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় একদল উন্মত্ত ইসলামিক মৌলবাদী। সেই সময় একদল যুবক ওই বাসটি চালিয়ে নিয়ে গিয়ে ঢুকে পরে সাইবার ক্রাইম থানায়। তারপর ওই থানার ভিতরে যথেচ্ছ ভাংচুর চালায় তাঁরা। সঙ্গে করে আনা পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় ওই থানায়। পুড়ে ছাই হয়ে যায় সমস্ত কাগজপত্র। তদন্তকারী অফিসাররা বলছেন, সাইবার ক্রাইমের ঘটনা বাড়তে থাকায় দুই বছর আগে ওই থানা স্থাপিত হয়। মূলত নুহর বহু বাসিন্দারা অপরাধের নথিপত্র ছিল ওই থানায়। আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। যেভাবে থানায় হামলা চালানো হয়েছে, তা পূর্বপরকল্পিত বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে মোতায়েন থাকা দুইজন পুলিশ হোমগার্ডকে যে নৃশংসতার সঙ্গে খুন করেছে ইসলামিক মৌলবাদীরা, তাতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হরিয়ানা পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে তদন্ত করার জন্য বিশেষ টিম গঠন করেছে হরিয়ানা পুলিশ। এছাড়া, হিংসায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে একাধিক টিম। শান্তি শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হরিয়ানা পুলিশকে সহায়তা করার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয়েছে।