© Amit Mali
তামিলনাড়ুতে বড়সড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কে. আন্নামালাইয়ের উত্থান। রাজ্যজুড়ে চলা পদযাত্রায় সাধারণ মানুষের ব্যাপক উৎসাহ ও উন্মাদনার সৃষ্টি করেছেন আন্নমালাই। আর এতেই শঙ্কিত তামিলনাড়ুর ক্ষমতাসীন দল ডিএমকে(DMK)।
পদযাত্রা “এন মান, এন মাক্কাল”
উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসে তামিলনাড়ুর বিজেপি নেতা আন্নামালাই পুরো রাজ্যে ‘পদযাত্রা’ করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই পদযাত্রার নাম দেওয়া হয় “এন মান, এন মাক্কাল”(আমার ভূমি, আমার মানুষ)। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দীর্ঘ ছয় মাস জুড়ে সারা রাজ্য চষে বেড়াবেন তিনি। গত ২৮শে জুলাই, রামনাথপুরম থেকে সেই পদযাত্রার শুভ উদ্বোধন হয় এবং সেই পদযাত্রার সূচনা করেন সরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ।
পদযাত্রা ঘিরে তামিলনাড়ুতে ব্যাপক উন্মাদনা
গত ২৫ দিন ধরে সেই পদযাত্রা রাজ্যের বিভিন্ন গ্রাম ও শহর ছুঁয়েছে। যেখানেই আন্নামালাই যাচ্ছেন, সেখানেই ভিড় করছেন বিশাল সংখক জনতা। সাধারণ, খেটে খাওয়া মানুষের সুখ দুঃখের কথা শুনছেন। শুনছেন বঞ্চনার কথা। শুনছেন ডিএমকে সরকারের নেতাদের দুর্নীতির কথা। সাধারণ দরিদ্র মানুষের গৃহে গ্রহণ করছেন দুপুরের খাবার। আর এতেই তামিলনাড়ুর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে আন্নমালাইয়ের নাম।
পদযাত্রার কারণে উঠে আসছে ডিএমকে সরকারের নানা দুর্নীতি
তাছাড়া, এই পদযাত্রার ফলে এমন এমন দুর্নীতির ঘটনা সামনে আসছে, যা ডিএমকে সরকারের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় কখনও প্রকাশিত হয়নি। উদাহরন হিসেবে সামনে উঠে এসেছে ডিএমকে নেতাদের পরিচালিত মেডিকেল কলেজের কথা। তামিলনাড়ুর একাধিক বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিক ডিএমকের নেতা ও মন্ত্রী। আর সেই সব মেডিকেল কলেজের মোট খরচ দেড় কোটি বা তার বেশি। পদযাত্রা চলাকালীন অনেক দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পরিবার আন্নামালাইয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিভাবে ডিএমকে দলের কর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি কলেজে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করার চক্র কাজ করছে, সেসবের বিষয়ে মুখ খুলছেন সাধারণ মানুষ। আর এই কারণে মেডিকেলের প্রবেশিকা পরীক্ষার বিরোধিতায় বরাবরই সরব ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন। এমনকি রাজ্যে NEET পরীক্ষা বন্ধ করতে বিধানসভায় বিল পাস করানোর কথাও বলছেন তিনি।
ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে আন্নামালাইয়ের নাম
পদযাত্রার কারণে তামিলনাড়ুর ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে আন্নামালাইয়ের নাম। যেখানেই যাচ্ছেন, হাজার হাজার জনতা বাড়ির বাইরে ও রাস্তার পাশে ভিড় করছেন আন্নামালাইকে এক ঝলক দেখতে। আর তার প্রমাণ মিলেছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। তামিলনাড়ুর যুব প্রজন্ম আন্নামালাইকে ভবিষ্যতের আইকন হিসেবে দেখছেন। পদযাত্রার ছবি ও ভিডিও, আন্নামালাইয়ের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরাই।
এগিয়ে এসেছেন তামিলনাড়ুর শিল্পী ও কার্টুনিস্টরা
আন্নামালাইয়ের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন তামিলনাড়ুর শিল্পী ও কার্টুনিস্টদের একটা বড় অংশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিএমকে সরকারের দুর্নীতি ও অপকীর্তি ফুটে উঠছে সেই সব কার্টুনে। জেগান ও বালা সুব্রামানিয়ামের মত বিখ্যাত কার্টুনিস্টরা আন্না সমর্থনে কার্টুন এঁকে চলছেন ডিএমকে -এর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে।
সরকারি চাকুরি ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিতে চান বহু মানুষ
আন্নামালাইয়ের পদযাত্রা ঘিরে রাজ্যে এমন উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে, বহু সরকারি চাকুরী করা মানুষ চাকুরী ছেড়ে যোগ দিতে চান বিজেপিতে। তাঁরা আন্নামালাইয়ের নেতৃত্বে তামিলনাড়ু গড়ার কাজ করতে চান। ইতিমধ্যেই বহু মানুষ সরকারি বেসরকারি চাকুরী ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া, সদ্য এক পুলিশ কনস্টেবলের বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে তামিলনাড়ুতে। কার্তিক নামে এক হেড কনস্টেবল জানিয়েছেন যে তিনি খুব শীঘ্রই চাকুরী ছেড়ে দেবেন এবং বিজেপিতে যোগ দেবেন। আন্নামালাই তাঁর অনুপ্রেরণা, এমনটাই জানিয়েছেন ওই কনস্টেবল।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, আন্নামালাই নিজে একজন কর্ণাটক ক্যাডারের আইপিএস অফিসার, যিনি ২০১৯ সালে পদত্যাগ করেন। পরে ২০২০ সালে বিজেপিতে যোগ দেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত
তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক মহলে জোরদার চর্চা চলছে আন্নামালাইকে নিয়ে। এতদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ডিএমকের বিরোধিতা করলেও জনমানসে তেমন প্রভাব পড়েনি। কিন্তু আন্নামালাই এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ডিএমকের বংশগত রাজনীতি, দুর্নীতি, ধর্মান্তকরণ, পুলিশকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের উপরে অত্যাচার ইত্যাদি ইস্যুতে বারবার আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন আন্নামালাই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, “আন্নামালাইয়ের ভালো দিক হলো তাঁর সরলতা। খুব সহজেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন তিনি। তাছাড়া, খুব পরিশ্রমীও। যেভাবে রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন, সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখের সঙ্গে জড়িত ইস্যুকে নিয়ে আন্দোলন করছেন, তাতে আগামীদিনে ডিএমকে -এর ভোট ব্যাংকে ধস নামে স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।” আসন্ন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তামিলনাড়ুতে বিজেপি যদি ভালো ফল করে, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই, বলছেন তাঁরা।