মৌলবাদের জালে বন্দী হিন্দু সংখ্যালঘু



Updated: 24 January, 2023 5:25 am IST

© শ্রী কুশল বরণ চক্রবর্তী

বর্তমানে আমাদের সমাজের মানুষ নামধারী ব্যক্তিরা সকল কিছুই হতে চায়; কিন্তু তারা একটিবারের জন্যও মানুষ হতে চায় না। কারণ মানুষ হওয়া বড় কষ্টের। এতে মানের সাথে সাথে কিছুটা হুশও থাকতে হয়। কিন্তু আমরা জ্ঞাত অথবা অজ্ঞাতসারে হুশ হারিয়ে বেহুশ হয়ে যাচ্ছি। বিষয়টি নিজেরাও সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারছি না।পক্ষান্তরে যদি মানুষ হতে পারতাম, তবে অন্যের দুঃখকষ্ট উপলব্ধি করতে পারতাম। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনামলে কবি কাজী নজরুল ইসলাম উপলব্ধি করেছেন অসাম্যের যাতনা কতটা তীব্র। সেই উপলব্ধি থেকে তিনি লিখেছেন:

“গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান
নাই দেশ- কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।”

যিনি এই অসাম্যের ভয়ংকর অভিঘাতে পরেছেন তিনিই শুধু বিষয়টি কিছুটা উপলব্ধি করতে পারবেন। দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যদি একটু সচেতন দৃষ্টি দেয়, তাহলে সে বুঝতে পারবে দেশের একশ্রেণীর মানুষের মানসিকতা কি প্রকৃতির! কতটা তীব্রতর ধর্মান্ধ এবং নিষ্ঠুরতম হয়ে যাচ্ছে কিছু মানুষের হৃদয়। দেশের কোন নিউজফিডে যদি প্রগতিশীল চিন্তা, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল সম্পর্কিত তথ্য অথবা প্রগতিশীল ব্যক্তিত্বদের প্রসঙ্গে কোন তথ্য বা বিষয় থাকে। তবে সেই নিউজফিডে ভয়ংকর, অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন একশ্রেণির বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিগণ। যা ভাষায় অবর্ণনীয়। কোন সংবাদে যদি হিন্দু সম্প্রদায়, অথবা ভারতের কোন প্রসঙ্গ তবে তো কথাই নেই; গালির ফোয়ারা বসিয়ে দিবেন তারা। কিন্তু একটি সভ্য দেশে তো এমন হওয়ার কথা না। এই কাজগুলো করছে তারা সংখ্যায় কম হলেও তারা সংঘবদ্ধ। তাই তারা সংঘবদ্ধভাবে মানবিক মূল্যবোধকে নিজেদের বিকৃত ক্ষুদ্র মানসিকতা দিয়ে অসম্মানিত করছে এবং যুগপৎ দুষিত করছে। তাই রাষ্ট্রের উচিত, যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে এই হিংস্র মনোভাব ধারণকারীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা কোন জাতীয় নিউজফিডে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রসঙ্গে কোন তথ্য থাকলে সাথে সাথেই একশ্রেণীর মানুষ ভারতের বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয়, তারা বুঝি ভারতের নাগরিক। সারাদিন অপ্রাসঙ্গিকভাবে ভারতের নাম জপ করাই যেন তাদের কাজ। দেশের কোথাও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের উপরে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ হলে, এই মানুষগুলো তখন সরাসরি বা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণকে সমর্থন করে যায় ভারতের বিভিন্ন ঘটনাকে রেফারেন্স হিসেবে টেনে। মৌলবাদ আজ অনেক বুদ্ধিদীপ্ত, অনেক আধুনিক। তাই বাক্যে থাকে তাদের মানবতা ও আধুনিকতার মুখোশ। সেই মানবতারর মুখোশ পরে নিজের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতিত হলে ভারতের দুই তিনটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে দেখিয়ে নিজের দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নির্যাতনকে ধাপাচাপা দিয়ে নির্যাতনকে বৈধতা দেয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে ব্যক্তিগুলো। যা নিন্দনীয় এবং যুগপৎ দুঃখজনক। ভারতের সংখ্যালঘুদের উপরে কোন একটি বিশেষ ঘটনাকে কিভাবে লক্ষলক্ষ বার ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কপি, শেয়ার, এবং কমেন্টে প্রোমোট করে নিজ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের উপরে বিভিন্ন সময়ে ঘটা নির্যাতনকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জায়েজ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা হয়। এই মৌলবাদীদের একটি অংশ আবার সুযোগ পেলে তথাকথিত মানবতার ফেরিওয়ালার চরিত্রে অভিনয়ও করে থাকে। অভিনয় ভালো হলে, মানবতার ব্যবসা সফলও হয়। তখন সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধার সাথে সাথে তারা পুরষ্কৃতও হয় রাজনৈতিক বা সামাজিকভাবে। বিপরীতে কদাচিৎ ধরা পরে গেলে, হাসির পাত্র হয়। সাধারণ মানুষ সকলই বোঝে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।এই সকল দৃশ্যমান মৌলবাদী অথবা বুদ্ধিদীপ্ত অদৃশ্য মৌলবাদীর বহুরূপী কৌশলে মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের “হে মোর দুর্ভাগা দেশ” কবিতার কয়েকটি পঙক্তি :

“হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান!
মানুষের অধিকারে
বঞ্চিত করেছ যারে,
সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।

যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।
অজ্ঞানের অন্ধকারে
আড়ালে ঢাকিছ যারে
তোমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘোর ব্যবধান।
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।”

দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের যখন সমানাধিকারের প্রশ্ন আসে, তখন কিছু মানুষ যখন নিজের মাতৃভূমিকে বাদ দিয়ে অহেতুক ভারতের নাম জপ শুরু করে দেয়। ভারতে কেন এটা হল, সেটা হল ইত্যাদি। এরপরেই তাদের দ্বিতীয় কথাই হলো দেশে সংখ্যালঘুরা জামাই আদরে আছে ইত্যাদি। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, এদেশে সংখ্যালঘুরা বুঝি বহিরাগত। দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষসহ অধিকাংশ মানুষই বিরক্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মৌলবাদীদের সঙ্ঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক আচরণে। তাই সেই ঘৃণার সংস্কৃতি সৃষ্টিকারী মৌলবাদীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- আপনারা কি কখনো ভারতের সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটি দেখেছেন? সেখানে সংখ্যালঘুরা কি কি অধিকার ভোগ করে? ভারতে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় আছে, যে মন্ত্রণালয় থেকে হাজার হাজার কোটি টাকায় প্রোজেক্ট গ্রহণ করা হয় সংখ্যালঘুদের কল্যাণে। সংখ্যালঘু কমিশন রয়েছ, কমিশনটি কল্যাণে ব্যাপকভাবে ভূমিকা পালন করে। উত্তর প্রদেশে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। চাকুরির ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের কোটা রয়েছে। রাষ্ট্রের সাহায্যে নিজস্ব ব্যাংক সহ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ৬ জন রাষ্ট্রপতি হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের থেকে। প্রধানমন্ত্রী স্পিকার একাধিকবার হয়েছে। আর মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে তো কথা নেই। অর্থাৎ সাংবিধানিক সকল পদেই সংখ্যালঘুরা একাধিকবার বসেছে। মোদি মন্ত্রীসভাতেও একাধিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্ত্রী রয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র ভূখণ্ড হওয়া সত্ত্বেও ভারতে কোন রাষ্ট্রধর্ম নেই। অসাম্প্রদায়িক ভারতের অসাম্প্রদায়িক সংবিধানের মাথায় কোন নির্দিষ্ট ধর্মের বাক্য নেই।অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট ধর্মীয় বাক্য দিয়ে সংবিধানের শুরু হয়নি। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও, মুসলিমদের বাৎসরিক অনুষ্ঠান হজ্ব উপলক্ষে ; সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেয়া হয়। ইমাম মুয়াজ্জিনদের প্রতিমাসে ভাতা প্রদান করা হয়। সংখ্যালঘুদের শিক্ষায় স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। সংখ্যালঘু উন্নয়নে প্রতি রাজ্যেই বড় অংকের বরাদ্দ করা হয়। যে বরাদ্দ অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও হয় না। পূর্ববর্তী বছরের পরিসংখ্যান বাদ দিয়ে, শুধু গত এক বছরে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু উন্নয়নের বরাদ্দের দিকে যদি দৃষ্টি দেয়া যায়, তবে সেই সংখ্যাটা বৃহত্তর। ২০২০ সালে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু উন্নয়নে বরাদ্দ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৪,০১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রদের ২ কোটি ৩৮ লক্ষ বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। সরকারী সহযোগিতায় প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ হজে করেছেন। প্রত্যেক জেলায় সংখ্যালঘু ভবন তৈরি হয়েছে। ৫৫১ কোটি টাকায় ইসলামি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব নতুন ক্যাম্পাস তৈরি করা হয়েছে।তথ্যগুলো ২৬.৬.২০২০ সালে নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুযোগ সুবিধা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, তা তোষণের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে অভিযোগ। একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকারের অন্ধভাবে তোষণের বিষয়টি নিয়ে বিজিপি, বামফ্রন্ট, কংগ্রেসসহ বিভিন্ন বিরোধীদল বিভিন্ন সময়ে সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ করেছে।২৩. ০৫.২০১৯ ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসে।লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরবর্তীতে ২৫. ০৫.২০১৯ এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন পশ্চিম বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সেই সাংবাদিক সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলগুলোর একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে তোষণের অভিযোগটি খোলামেলা ভাবে সমর্থন করে বলেন:

“আমি কিন্তু ইফতারে যাচ্ছি আপনারাও আসবেন। আমিতো মুসলিমদের তোষণ করি, একশবার যাব।
যে গরু দুধ দেয় তার লাথি খাওয়াও উচিত। আর আমি ইফতারে এমনিতেই যাই, আপনারা অনেকেই জানেন, আপনাদের কাছে রেকর্ডও আছে।আমি যাব, হাজারবার যাব, যে ডাকবে সেখানেই যাব।”

বাংলায় হিন্দু-মুসলিম মিশ্র বসতীর জন্যে হিন্দুরা বন্ধুত্বের সম্পর্কের জন্যে ইফতারে পার্টিতে যেতেই পারে এর জন্যে লজ্জিত বা গর্বিত হওয়ার কিছুই নেই। এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু সমস্যা বাঁধে তখনই, যখন তিনি রাজ্যের একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষকে গরুর সাথে তুলনা করে, সেই বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষের ভোটকে এই দুধেল গরুর দুধ হিসেবে অভিহিত করেন।এখানেই শেষ নয়, তাদের কিছু অন্যায্য অনাকাঙ্ক্ষিত অত্যাচারকে তিনি গরুর লাথির সাথে তুলনা করে সেই অত্যাচারকে সমর্থন করেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সংখ্যালঘুদের ব্যাপক উন্নয়ন এবং বিকাশের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষে ১৯৯৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগম (West Bengal Minority Development And Finance corporation) এর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই কর্পোরেশনের কাজ হল শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য বা সাংস্কৃতিক বিবিধ সক্রিয় কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সামগ্রিক উন্নয়ন। রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়কে ভাতা প্রদান থেকে শুরু করে, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীদের সাইকেল প্রদান, ৫০ শতাংশের কম নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীদেরও পড়াশোনায় উৎসাহিত করতে স্কলারশিপ প্রদান ইত্যাদি বিবিধ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার । পশ্চিমবঙ্গের এ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগম কর্পোরেশনের কাজই হল শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সে লক্ষ্যে ২০২২ সালে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। যেন সরকারি চাকরির পরীক্ষাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি মাত্রায় সফল হতে পারে।সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের পিছনে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমের গুরুত্ব অপরিসীম (‘এই সময়’, ১৩.০৭.২০২২)।

পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কল্যাণে সরকারের পক্ষে বিবিধ কল্যাণকর পদক্ষেপসহ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমের ন্যায় এমন একটি সংখ্যালঘুবান্ধব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আশা করতেই পারে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলার দুই অংশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুযোগ, সুবিধা এবং ন্যায্য অধিকারে রাতদিন পার্থক্য। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। এর আশু কার্যকার সমাধান প্রয়োজন। বুদ্ধিদীপ্ত সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে কি করে নিজের দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনজগত ভেঙে দিতে হয়-এ বিষয়টি বিশ্বের মানুষ যদি শিক্ষা লাভ করতে চায়, তবে এদেশীয় মৌলবাদীদের থেকে অন্ততপক্ষে শিক্ষা নিতে পারে। তারা এ বিষয়টির উপরে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে সফলতার সাথে কাজ করছে। ফলশ্রুতিতে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা দিনে দিনে শূণ্যের অভিমুখে যাচ্ছে। তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের মুখেও একজন সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিকে কারণে অকারণে ‘মালাউন’ ‘দাদা’ অথবা ‘দাদার দেশের লোক’ ইত্যাদি অপমানসূচক বাক্য শুনতে হয়। এ শব্দ এবং বাক্যগুলোর প্রতিবেশে বাস করে, অপমানকর শব্দগুলো প্রতিনিয়ত শুনে শুনে শব্দগুলোর সাথে এক অনিচ্ছাকৃত সহজাত বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায় একজন সংখ্যালঘুর। অর্থাৎ এককথায় বলতে গেলে, এ শব্দগুলোর সাথে তারা অভ্যস্ত হয়ে যায়। এমন কুরুচিপূর্ণ বাক্যবাণের যে ব্যক্তিই শিকার হয়; শুধু তিনিই বোঝেন এর মানসিক যাতনা কতটা। দাদা শব্দটি বাংলার চিরায়ত সাংস্কৃতিক শব্দ। কিন্তু সেই চিরায়ত শব্দটিকে হিন্দুবাচক শব্দে রূপান্তরিত করে অনেকটা কোনঠাসা করে ফেলেছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। তাই বর্তমানে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে সুকৌশলে শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এবং এর অভিঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের হৃদয়।

লেখক পরিচিতি:

শ্রী কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক,
সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়