বিদেশ থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া বিপুল অর্থ খরচ করে ভারতে এনেছিলেন রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি নাগরিকদের। তারপর সেই সব অনুপ্রবেশকারীদের ভারতের আধার কার্ড থেকে শুরু করে অন্যান্য নথিপত্র তৈরি করে দিতেন। পরে তাদের পাঠিয়ে দিতেন দেশের বিভিন্ন রাজ্যে। আর এমনই অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্বরূপনগরের বাসিন্দা আবু সালেহ মণ্ডলকে লখনৌ থেকে গ্রেপ্তার করলো ইউপি এটিএস(UP ATS)।
উম্মাহ ইন্টারন্যাশনাল থেকে পেয়েছিলেন ৫৮ কোটি
ইউপি এটিএসের অভিযোগ, লন্ডনের সংস্থা উম্মাহ ইন্টারন্যাশনাল থেকে ৫৮ কোটি টাকার বিদেশি অনুদান পেয়েছিলেন আবু সালেহ মন্ডল। এই বিপুল অর্থ তিনি অনুদান হিসেবে পেয়েছেন ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে। সেবা ও শিক্ষার পিছনে খরচ করার জন্য NGO পরিচালনা করেন আবু সালেহ। কিন্তু অনুদানের টাকা তিনি খরচ করেছেন ভারতে রোহিঙ্গাদের এনে বসতি স্থাপন করার পিছনে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ভারতে আনা এবং তাদের ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে নানা নথিপত্র যেমন আধার, প্যান ও ভোটার কার্ড তৈরিতে অর্থ যোগান দিতেন আবু সালেহ মন্ডল।
হাওয়ালার মাধ্যমেও পেয়েছেন বিপুল অর্থ
ATS-এর গোয়েন্দাদের মতে হওয়ালার মাধ্যমেও বিদেশ থেকে বিপুল অর্থ পেয়েছেন আবু সালেহ মন্ডল। হাওয়ালার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ভারতে নিয়ে এসেছেন তিনি। সেই টাকা পুরোটাই খরচ করেছেন রোহিঙ্গাদের ভারতে আনার পিছনে। এমনকি বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংস্থার নামে নকল কাগজপত্র দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছেন আবু সালেহ। গোয়েন্দাদের দাবি, ‘গাজী ফুড সাপ্লাই’ এবং ‘গাজী মেশিনারি‘ নামে দুটি সংস্থা চালাতেন আবু সালেহ। সেই সব সংস্থার মাধ্যমেও বিদেশ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেছেন তিনি।
একটি মাদ্রাসা ও ট্রাস্টের প্রধান আবু সালেহ
গোয়েন্দাদের জেরায় আবু সালেহ জানায় যে সে দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান। এদের মধ্যে একটি ট্রাস্ট এবং একটি মাদ্রাসা। উত্তর ২৪ পরগনায় ‘কবীর বাগ মিলাত অ্যাকাডেমি’ এবং হাড়োয়াতে থাকা ‘আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা’-র প্রধান। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার আড়ালে দেশ বিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন আবু সালেহ। এই দুটি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বিদেশ থেকে বিপুল অর্থ অনুদান হিসেবে পেয়েছিলেন আবু সালেহ।
প্রসঙ্গত, এর আগে রোহিঙ্গাদের ভারতে আনার চক্রের পর্দা ফাঁস করে ইউপি এটিএস। গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে সেই চক্রের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জেরা করেই আবু সালেহর নাম জানতে পারেন গোয়েন্দারা। গত সোমবার লখনৌ শহরের মনাক নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবু সালেহকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতের কাছ থেকে একাধিক মোবাইল ফোন, দুটি আধার কার্ড এবং ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছেন উপি এটিএসের গোয়েন্দারা।