পাকিস্তান ভাগ করে গড়ে উঠেছিল বাঙ্গালী হিন্দুর হোমল্যান্ড পশ্চিমবঙ্গ



Updated: 21 June, 2023 10:56 am IST

© শ্রী শান্তনু সিংহ

আবুল হাশেম কে জানেন? কিংবা হুসন আরা বেগম, বা ইদ্রিস আলী মোল্লা, অথবা মোহাম্মদ ইদ্রিস অথবা মোহাম্মদ দীন মোহাম্মদ কোমরউদ্দিন
আবুল হাশেম ছিলেন কাসরা, কাশেম নগর, বর্ধমান এর অধিবাসী। তিনি বর্ধমান কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হয়ে বাংলার বিধানসভায় গিয়েছিলেন।
হুসন আরা বেগম। থাকতেন ১১বি, গ্রীন রোড, তিলজলা রোড, কলিকাতা। তিনি কলিকাতার মহিলা সংরক্ষিত আসন থেকে জিতে বিধানসভায় গিয়েছিলেন।
ইদ্রিস আলী মোল্লা থাকতেন ১নং জগন্নাথ নগর, বাটানগর,২৪-পরগনা। তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন ২৪ পরগনা সাধারণ কেন্দ্র থেকে।
মোহাম্মদ ইদ্রিসের ঠিকানা ছিল গ্রাম – বাউল ডাকঘর -জগৎবল্লভপুর, হাওড়া। তিনি বিধানসভায় গিয়েছিলেন হাওড়া আসন জিতে ।
মোহাম্মদ দীন মোহাম্মদ কোমরউদ্দিন এর ঠিকানা ছিল কাকিনাড়া, ২৪-পরগনা। তিনি জিতেছিলেন ব্যারাকপুর পুরসভা আসন থেকে।
এরা দেশভাগের পর, আরো পরিষ্কার করে যদি বলি, বাংলা ভাগের কারণে পশ্চিম বাংলার জন্ম হওয়ার পর কোথায় ছিলেন? বা তাদের পরিবার না কোথায় গেলেন? বা এদের যারা ভোট দিয়েছিল সেই সব ভোটাররা?
আসলে আমরা বাঙালিরা ইতিহাস বিস্মৃত জাতি। তাই খোঁজ করিনি আবুল হাসেমদের মত আরো মোট ২১ জন বিধায়ক, যাঁরা সেদিন বিধানসভায় মোহাম্মদ আলী জিন্নার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে ভোটাভুটির সময় পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়ে চেয়েছিলেন যে, সম্পূর্ণ বাংলা পাকিস্তানে চলে যাক, বাংলা বলে কোন রাজ্যের অস্তিত্ব থাকবে না, সেটা হবে পুরব পাকিস্তান,
তারা বা তাদের সমর্থকরা কিন্তু কেউ পাকিস্থানে যাননি, রয়ে গেলেন এই বাংলায়, এই খন্ডিত পশ্চিমবাংলায়, সি. এ.এ বা এন.আর.সি বিরোধিতা করবার জন্য ।
ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র মজুমদার, ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার, কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসু, —
এরকম ৫৮ জন বাঙালি বিধায়ক বাঙালির হিন্দুদের বাঁচবার একটা দেশের স্বপ্ন দেখে বাংলা ভাগ করে পশ্চিমবাংলার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন বিধানসভায়।
রমেশ চন্দ্র মজুমদারের আদি বাড়ি ফরিদপুর এর খানদারপাড়া, বর্তমানে বাংলাদেশে।
যদুনাথ সরকারের আদি বাড়ি ছিল নাটোরের করচামারিয়া গ্রামে, বর্তমানে বাংলাদেশে।
জ্যোতি বসুর আদি বাড়ি ঢাকার কাছে বারুদী গ্রামে,
বর্তমানে বাংলাদেশে।
রমেশ চন্দ্র মজুমদার তাঁর জন্মস্থানে ফিরে যেতে পারেননি।
যদুনাথ সরকার তার জন্মস্থানে থাকতে পারেননি।
কমরেড জ্যোতি বসু তার সারা জীবনের কমিউনিস্ট রাজনীতি পশ্চিমবাংলায় করে গেছেন, তার পিতা পিতামহর দেশে গিয়ে জনসাধারণকে মার্কসবাদের দীক্ষা দিতে পারেননি।
কমিউনিস্টরা হচ্ছে আদ্যপ্রান্ত ভন্ড, মাতাল জাতে, কিন্তু তালে ঠিক। তাই যে জ্যোতি বসু বা তার দলের লোকেরা শ্যামাপ্রসাদের নামে গালাগালি না করে দিন শুরু করেন না, তাঁরাও কিন্তু সেদিন বিধানসভায় পশ্চিমবাংলা গঠনের পক্ষে ভোট দিয়ে শ্যামাপ্রসাদের বাংলা ভাগ করে পশ্চিমবাংলা গড়ায় শামিল হয়েছিলেন। জ্যোতি বসু ছাড়াও কমিউনিস্ট বিধায়ক রতনলাল ব্রাহ্মণ পশ্চিমবাংলার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। চতুর জ্যোতি বসু বুঝেছিলেন, মুসলমান
সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলায় তাঁর মার্কসবাদ চলবে না।
বাঙালি ইতিহাস বিস্মৃত জাতি হলেও মুসলমানরা কিন্তু তাদের ইতিহাস ভুলে যায়নি। তাই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১২০০ বছর পরে ইতিহাসকে টেনে এনে সগর্বে দাবি করলেন, প্রথম হিন্দুটি যখন মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিল, সেদিনই ভারতবর্ষে দুটো জাতির সৃষ্টি হয়েছিল; হিন্দু এবং মুসলমান। একটু খেয়াল করবেন, জিন্না কিন্তু মুসলমান ধর্মের কথা বলেননি, বলেছেন মুসলমান জাতির কথা। এবং এটাই বাস্তব। কুরআনে মুসলমানদের শুধু একটি ধর্ম বলে বর্ণনা করা হয়নি, বারে বারে বলা হয়েছে মুসলমানরা একটি পৃথক সত্তা। তাদের কাছে সবাইকে নতজানু হতে হবে, নতুবা বিলীন হয়ে যেতে হবে। তাই যারা স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতবর্ষে যে দাঙ্গা তারমধ্যে শুধু ইংরেজদের চক্রান্ত দেখতে পান, তারা শুধু হাতির শুড় দর্শন করেন, কিন্তু হাতিটিকে দর্শন করতে পারেন না। মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল, ইংরেজরা সেটাকে কাজে লাগিয়েছে মাত্র। কোন সাম্প্রদায়িকতাকে ইংল্যান্ড থেকে নিয়ে আসেননি।
মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার চরম নকশা দেখা যায় ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের পাকিস্তান প্রস্তাবে। পাকিস্তান প্রস্তাব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জিন্না পরিস্কার বলেন, ভারতের সমস্যা সম্প্রদায়গত নয় বরং জাতিগত। এটা খুবই দুঃখের যে হিন্দু বন্ধুরা ইসলাম এবং হিন্দুত্বের স্বরূপ ঠিক বুঝতে পারছেন না। ইসলাম ও হিন্দুত্ব শুধু আলাদা ধর্ম নয়, সম্পূর্ণ বিপরীত দুই জাতিসত্তা। মুসলমানরা সংখ্যালঘু নয়, আলাদা একটা জাতি। মুসলমানরা একটা আলাদা জাতি। ভারতবর্ষের প্রথম যেদিন একটি মানুষ মুসলমান ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্ধর্ম গ্রহণ করেছে সেদিন থেকেই ভারতবর্ষে একটা আলাদা জাতি তৈরি হয়ে গেছে। মুসলমানদের আলাদা জাতি গঠনের সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদান আছে। তাই তাদের অবশ্যই নিজেদের বাসভূমির অধিকার আছে।
ইতিহাসের ফের, ওই ১৯৪০ সালেই শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ৪ বছরের জন্য হিন্দু মহাসভার কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হলেন।
সেই অর্থে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির রাজনৈতিক জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। ১৯৩৯ সালে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন হিন্দু মহাসভার মাধ্যমে আর ১৯৫৩ সালে তিনি সন্দেহজনক পরিস্থিতি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশও কিন্তু শুধুমাত্র একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নয় বরং একজন স্টেটসম্যান হিসেবে।
১৯৩৯ সালে কলকাতা তথা বাংলায় মুসলমান ছাত্ররা দুটো দাবি করতে থাকে – এক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর এমব্লেম থেকে “শ্রী” সরাতে হবে। ওই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমব্লেম-এ “শ্রী” কথাটা থাকতো।
দুই, উর্দুতে সমস্ত বিষয়ে পরীক্ষা দেবার অনুমতি দিতে হবে।
মুসলমান ছাত্ররা ওই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কে “হিন্দু” বিশ্ববিদ্যালয় আখ্যা দিয়ে কলকাতাতেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনার দাবি করতে থাকে। যার মাধ্যম হবে উর্দু। এমনকি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে চট্টগ্রাম কলেজ পরিদর্শন করতে গেলে চট্টগ্রাম স্টেশনে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি আক্রমন করা হয়। ট্রেন থেকে নামার মুহূর্তে মুসলিম ছাত্রলীগের গুন্ডারা “আল্লাহু আকবর” ধ্বনি দিয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি কে লক্ষ্য করে লাঠি ছুড়ে মারে। লাঠি লাগে শ্যামাপ্রসাদ-এর পেছনে থাকা দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপক হুমায়ুন কবিরের মাথায়। মুসলমান সদস্যরা এমনকি বঙ্গীয় আইনসভা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি বন্ধেরও দাবি তুলতে থাকেন।
কংগ্রেসের নীরবতায় মুসলমান ছাত্ররা তাদের আন্দোলনে সার্থক হয় এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এমব্লেম থেকে “শ্রী” অপসারিত হয়। কংগ্রেসের তোষণ নীতির ফলে কলকাতা কর্পোরেশন মুসলিম লীগের দখলে চলে যায়। শুধু তাই নয়, তাদের দাবি অনুযায়ী ৭০% কর্পোরেশন কর্মচারীকে মুসলমান হতে হবে এই দাবি কংগ্রেস ঘুরিয়ে মেনে নেয়।
১৯৩৭ সালে নতুন সংবিধান অনুযায়ী যে নির্বাচন হয় তার ফলাফল এরকম: –
বাংলা বিধানসভার মোট সদস্য সংখ্যা ২৫০। তারমধ্যে :
কংগ্রেস ৬০
নির্দলীয় মুসলমান ৪১
মুসলিম লীগ ৪০
কৃষক প্রজা পার্টি ৩৫
ইউরোপীয় ২৫
নির্দলীয় অনুন্নত শ্রেণীর হিন্দু ২৩
নির্দলীয় বর্ণহিন্দু ১৪
নির্দলীয় অতিরিক্ত ১২
বাংলা বিধান পরিষদ মোট সংখ্যা ৬৩। তারমধ্যে :
নির্দলীয় মুসলমান ১৩
নির্দলীয় হিন্দু মুসলিম লীগ ১১
কংগ্রেস ১০
ইউরোপীয় ৬
বিশেষ বিশেষ শ্রেণী ১১
কিন্তু মুসলিম লীগ কে সুবিধা দেওয়ার জন্য কংগ্রেস এক অদ্ভুত নীতি গ্রহণ করে। যেখানে শুধুমাত্র কংগ্রেস বিধানসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানেই তারা মন্ত্রিসভা গঠন করবে, অন্য কোন দলের সাহায্যে তারা কোন মন্ত্রিসভা গঠন করবে না। ফলে বাংলায় অসাম্প্রদায়িক ফজলুল হকের প্রজা কৃষক পার্টির সাথে যুক্ত মন্ত্রিসভা গঠন করার সুযোগ থাকলেও কংগ্রেস তা করতে চাননি। কিন্তু অন্যদিকে মুসলিম লীগ যেকোন উপায়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতে মরিয়া ছিল। কিন্তু বিধানসভায় ১২১ টি মুসলিম আসনের মধ্যে মাত্র ৩৯ টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু মুসলিম লীগ যেকোন উপায়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতে মরিয়া ছিল। তাই বাংলায় মুসলিম লীগ কৃষক প্রজা পার্টি যুক্ত মন্ত্রিসভা গঠিত হল। কংগ্রেসের হঠকারী সিদ্ধান্ত আগামী দিনে ভয়ঙ্কর বিপদের পূর্বাভাস তা যে দু’জন বুঝেছিলেন, একজন সুভাষ চন্দ্র বোস আরেকজন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী। ২১ডিসেম্বর ১৯৩৮ সুভাষ চন্দ্র বোস গান্ধীকে যে চিঠি লেখেন তা এরকম :
পরিষ্কার মনে আছে আপনি বরাবর বাংলায় প্রজা কৃষক পার্টি ও কংগ্রেস এর যুক্ত মন্ত্রিসভা গঠনে সমর্থক ছিলেন। কিন্তু আজ আজাদ, নলিনী ও বিড়লার সাথে কথাবার্তার ফলে আপনার এই মতের পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে যে যাদের ওপর বাংলাদেশের কংগ্রেস চালানোর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তাদের মতামতের চেয়ে এই তিনজনের মতামত আপনার কাছে বেশি মূল্যবান। এক সপ্তাহর মধ্যে আপনার মতে এই পরিবর্তন কেন হল তা জানি না। তবে আমার মনে হয় আপনার সমর্থ্নেই এই মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভা বাংলায় টিকে আছে। আমি মনে করি বাংলাদেশের বর্তমান সাম্প্রদায়িক মন্ত্রিসভাকে যত শীঘ্র সম্ভব দূর করা প্রয়োজন।
( এখানে উল্লেখযোগ্য বিড়লা কখনোই চাইছিলেন না বাংলায় হিন্দু মুসলমানের যৌথ মন্ত্রিসভা ক্ষমতায় আসুক। তার ভয় ছিল, কোন সৎ মন্ত্রিসভা ক্ষমতায় এলে কলকাতার অর্থনীতিতে মাড়োয়ারি দের প্রাধান্য ক্ষুণ্ন হতে পারে। তাই সুরাবর্দী বা নিজামুদ্দিন ছিলেন মাড়োয়ারিদের অনেক কাছের মানুষ।)
শ্যামাপ্রসাদ আপ্রাণ চেষ্টা করলেন যেন কোনভাবেই ক্ষমতার অলিন্দে মুসলিম লীগের ছায়া না পড়তে পারে। কিন্তু কোনভাবেই গান্ধীর মত তিনি পরিবর্তন করতে পারলেন না। শ্যামাপ্রসাদের এই অসাধারণ প্রচেষ্টা স্বীকৃতি পাওয়া যায় ইংরেজ সরকারের গোয়েন্দা দপ্তরে গোপন রিপোর্টে।
জিন্না লাহোর প্রস্তাবের সমর্থনে কম্যুনিস্টদের পেয়ে
গেলেন।
মুসলিম লীগের এই দাবিকে মহা উৎসাহে প্রথমেই যারা সমর্থন করলো কমিউনিস্ট পার্টি। পার্টির
পলিটব্যুরো জানিয়ে দিল – “the demand for Muslim self determination or Pakistan is just progressive and national demand”
কংগ্রেস সমস্ত ঘটনার নিরব দর্শক।
মুসলিম লীগের এই লাহোর প্রস্তাবের সক্রিয়
বিরোধিতা করা হলো একমাত্র হিন্দু মহাসভা থেকে ।ব্রিটিশ গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হল – It was only the Hindu Mahasabha reacted sharply against Pakistan resolution।
বাংলা মুসলিম লীগের নেতৃত্বের রাস প্রায় পুরোটাই ছিল অবাঙালী মুসলমানদের হাতে। এমনকি সুরাবর্দী নিজে মেদিনীপুরের বাঙালি হলেও, তিনিও ছিলেন অবাঙালি মুসলমান নেতৃত্বের হাতের পুতুল। ফলে মুসলিম লীগ মুসলমানদের কথা যতই বলুক না কেন তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাঙ্গালীদের স্বার্থ দেখভাল করা।
মুসলিম লীগের অবাঙালি স্বার্থের জন্য বাঙালি স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেওয়া ফজলুল হক মেনে নিতে পারলেন না। ন্যাশনাল ডিফেন্স কাউন্সিলে যোগদান উপলক্ষে লীগ-কৃষক প্রজা পার্টি যৌথ মন্ত্রীসভার পতন ঘটে।
শ্যামাপ্রসাদ কংগ্রেসের উপর এবার কোন ভরসা না করে নিজেই ফজলুল হকের সাথে কথা বলে একটি প্রগতিশীল মোর্চা গঠন করলেন। সুভাষ বোসের ফরওয়ার্ড ব্লকও সামিল হলো। এই মন্ত্রিসভা পরিচিত হলো শ্যামা হক মন্ত্রিসভা হিসেবে।
এরপর ইংরেজ সরকারের তরফ থেকে ক্যাবিনেট মিশন ঘোষণা করলে হিন্দু মহাসভা মিশনের প্রস্তাব
প্রত্যাখ্যান করে। হিন্দু মহাসভার তরফ থেকে পরিষ্কার বলা হল যে, মাতৃভূমি ভাগ করার বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত আছে এমন কোন প্রস্তাব তারা মেনে নেবে না।
কংগ্রেস কিন্তু অদ্ভুত দোটানায়। ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব মেনে নেবার অর্থ ছিল, দেশ ভাগ মেনে নেওয়া। অন্যদিকে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান এর অর্থ ছিল মুসলমান সম্প্রদায়ের বিদ্বেষ কুড়ানো।
কংগ্রেসের এই দ্বিচারিতা বাংলার মানুষ মেনে নেয়নি। ফলে বাংলায় কংগ্রেসের জনসমর্থন দ্রুত গতিতেকমতে শুরু করে এবং শ্যামাপ্রসাদের জনসমর্থন রকেট গতিতে বাড়তে থাকে। ব্রিটিশ গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়- the Congress in Bengal has lost considerable Prestige which has been gained by Hindu Mahasabha and it was more due to the strenuous effort of Dr Shyamaprasad Mukherjee
শ্যামাপ্রসাদের জনপ্রিয়তায় ভয়় পেয়ে কংগ্রেস মিথ্যার আশ্রয় নিল। তারা সামনের দিক থেকে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব নাকচ করল, কিন্তু পেছন থেকে সমর্থন যোগাল।
১৯৪৪এ জেল থেকে বেরিয়েই গান্ধী ঘোষণা করলেন, তিনি জিন্নার সাথে আলোচনায় বসবেন। প্রমাদ গুনলেন শ্যামাপ্রসাদ। তিনি গান্ধীকে বারবার এই ভুল না করতে বললেন। কিন্তু গান্ধী শুনবেন না।
শ্যামাপ্রসাদ ১৯শে ১৯৪৪ গান্ধীকে যে চিঠি লিখলেন তার শেষ অংশ টা ছিল এরকম- আপনি জানিয়েছেন যে আপনি যখন আপনার শর্ত নিয়ে আলোচনা করবেন তখন একজন ভারতীয় হিসেবে এই আলোচনা করবেন, হিন্দু হিসেবে নয়। কিন্তু একজন ভারতীয় হিসেবে আপনি যখন শুধু মুসলমানদের দাবি নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন এবং এই ব্যাপারে জিন্নাকেও তোষণ করতে প্রস্তুত, তখন আমিও একজন ভারতীয় হিসেবে হিন্দুদের ন্যায্য অধিকার ও দাবির কথা তুলতে পারব না কেন? যদি একজন ভারতীয় হিসেবে আপনি আপনার পরিচয় দিতে চান তবে আমার অনুরোধ একজন ভারতীয় হিসেবে কেবলমাত্র ভারত ভারতীয়দের কথাই চিন্তা করুন।
ফলে ব্রিটিশ গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হল – It seems clear that shocked Shyama Prasad Mukherjee put his case very strongly to Gandhi add an and an did not means matter former is the most determined character who will stick at nothing and I shall say he will get a good deal of support for many congressmen especially in Bengal one report States that he reminded Gandhi that had said on one occasion that in device ability in the wise civility indivisible is is is God and be checked me e before you visit India
কিন্তু দুর্ভাগ্য গান্ধী জিন্নার সাথে দেখা করেই ক্ষান্ত হলেন না, বরং দেশভাগের সম্মতি জানিয়ে দেন। খুব দুঃখিত শ্যামাপ্রসাদ তার রোজনামচা লিখলেন, মুসলিম লীগের প্রতিপত্তি ইংরেজ পোষণে বাড়েনি- কংগ্রেস ও তার নেতৃবৃন্দ অনেক সময় লীগের আবদার সহ্য করেছেন, তাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন, জিন্নাহর পায়ের তলায় গান্ধী প্রমূখ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা লুটিয়ে পড়েছেন। এই সর্বনেশে তোষণ নীতির ফলে লীগের শক্তি আরো বেড়ে উঠেছে। আমি দিল্লি থেকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এলাম দেখলাম, একটা হিন্দু জাগরণের সাড়া পড়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে আপস যে অবাস্থব সবাই বুঝছেন। কিন্তু কংগ্রেসের নেতারাও এই কথা বলতে শুরু করায় সাধারণ লোকেরা হিন্দু মহাসভার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে উদাসীন হয়ে উঠেছিল। কংগ্রেস খুব একটা বড় ধাপ্পা আশ্রয় নিয়েছিল। তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, কিন্তু তারা self-determination for territorial unit মানতে প্রস্তুত, কিন্তু কাউকে তারা জোর করে ভারতে রাখতে চায় না। যেসব অঞ্চলে মুসলমান বেশি সেখানে সবাই মিলে যদি মিলিত ভাবে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন চায় কংগ্রেস তাতে বাধা দেবে না আমরা এর প্রতিবাদ করি তাহলে দেশকে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
১৯৪৬ সালের ১৬ ই আগস্ট মুসলিম লীগ যে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দিয়েছিল কলকাতায় তার ভয়াবহতা তাকে দ্যা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং বলে আখ্যায়িত করেছিল। ভারত সেবাশ্রম সংঘ থেকে আনন্দবাজার সহ বিভিন্ন পত্রিকায় আহ্বান জানানো হয়েছিল- বিভিন্ন জায়গা হইতে খবর আসিতেছে যে বহু হিন্দু নারী অপহৄতা হইয়াছে। তাদের খোঁজ পাইলে নিম্নের কোন নম্বর অথবা ভারত সেবাশ্রম সংঘের বালিগঞ্জ অফিসে যোগাযোগ করুন।
কিন্তু জিন্না যেভাবে চেয়েছিলেন দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং সেভাবে হয়নি। একতরফা হত্যাযজ্ঞ নয়, মুসলিম লীগের নারকীয়তার বদলা নেওয়া হয়েছিল ওদের ভাষায়তেই। তাই বাঙালি হিন্দু কে সবক শেখানোর জন্য মাত্র ১৮% শতাংশর বাঙালি হিন্দুর জনসংখ্যা নোয়াখালীকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। খুন, লুট, ধর্ষণ এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছে ছিল যে স্বয়ং সুচেতা কৃপালনি বলেছিলেন, এর প্রতিরোধ করার জন্য যদি আমাকে অহিংসা ছাড়তে হয় আমি তাতেও রাজী। নোয়াখালী সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক ছিল, মুসলমান মেয়েরাও এই দাঙ্গায় দাঙ্গাকারী মুসলমান পুরুষদের সাথে হিন্দুদের নিধন এবং লুটে অংশগ্রহণ করেছিল
ঘটনার গতি প্রকৃতি দেখে শ্যামাপ্রসাদ বুঝতে পারছিলেন, ভারতবর্ষের ভাগ আটকানো যাবে না। কারণ কংগ্রেস যে বিশ্বাসঘাতকতা করছে ভারতবর্ষের মানুষ তা বুঝতে পারছে না। একদিকে কংগ্রেস বলছে, তারা দেশভাগ মানবে না, অন্যদিকে গান্ধী নিজে জিন্নাহর সাথে মিটিং করছেন দেশভাগের স্বপক্ষে। কমিউনিস্টরা দেশভাগের স্বপক্ষে জনমত গঠন করতে শুরু করেছেন। দেশের বেশিরভাগ হিন্দু মানুষ বুঝতেই পারছেন না আসল সত্য কে বলছেন। বরং তারা গান্ধীর বক্তব্য সত্য বলে মনে করছেন, যে দেশ ভাগ হবে না, দেশভাগ হলে তারঁ মৃতদেহের উপর দিয়েই দেশভাগ হবে।
শ্যামাপ্রসাদ এবার পরিষ্কার জানালেন, দেশভাগ যদি করতে হয়, তাহলে বাংলা এবং পাঞ্জাবকে ও ভাগ করতে হবে। কারণ শ্যামাপ্রসাদ পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলেন, দেশভাগ হলে বাঙালি হিন্দুর আর থাকার জায়গা থাকবে না। শ্যামাপ্রসাদ যে সঠিক ছিলেন তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ সিনধীদের দুরবস্থা। তারাও দেশ ভাগ হলে পালিয়ে এসেছেন। কিন্তু যেহেতু একজন শ্যামাপ্রসাদ তারা পাননি, তার ফলে তারা সিন্ধু থেকে পালিয়ে এসে ছাদ ভাড়া নিয়ে থেকেছেন, কিন্তু নিজের দেশ তৈরি করতে পারেননি।
মুসলমান মনস্তত্ত্ব, কোরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক সত্যতার উপর দাঁড়িয়ে
শ্যামাপ্রসাদ এটা বুঝতে পেরেছিলেন, ইসলামিক পাকিস্তানের বাংলায় বাঙালি হিন্দু তাদের ধর্ম নিয়ে বাঁচতে পারবে না। তাই তিনি জোরালো দাবি করলেন, দেশভাগ হলে, বাংলা ও পাঞ্জাবকেও ভাগ করতে হবে।
জিন্না প্রমাদ গুনলেন। কারণ শ্যামাপ্রসাদ গান্ধী বা নেহেরু নন। তাই জিন্না তার বিরক্তি প্রকাশ করলেন- sinister move actuated by fight and bitterness।
লীগের নেতা আক্রম খান বললেন, অবিভক্ত বাংলা আর পাঞ্জাব নিয়ে পাকিস্তান তৈরি করতে হবে। কমিউনিস্টরা মুসলিম লীগের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন মুসলমানদের রাজনৈতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব “বর্ণহিন্দু”চক্রান্ত।
জিন্না পরিস্কার বললেন, what what is the the use of of Bengal without Calcutta
সুরাবর্দী বললেন – আমরা রিচ প্রাইস অফ ক্যালকাটা ছাড়া পূর্ব পাকিস্তান নেব না।
শেষ চেষ্টা হিসেবে জিন্না শরৎচন্দ্র বসু, কিরণশঙ্কর রায় ও কমিউনিস্টদের কাজে লাগালেন।
সুরাবর্দী র নেতৃত্বে তারা দাবি তুললেন “ইউনাইটেড united and free bengal within free India।
কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র স্বাধীনতা পত্রিকা (01.06 1947) – বঙ্গভঙ্গ রোধ করুন ঐক্যবদ্ধ ভারতে বাংলা করুন।
কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ বুঝতে পেরেছিলেন, কংগ্রেস কে ভরসা করলে বাঙালি হিন্দু আর বাচঁতে পারবে না। তাই বাঙালি হিন্দুদের জন্য চাই নিজস্ব বাসভূমি বা home land।
১৫ই মার্চ ১৯৪৭ হিন্দু মহাসভার সম্মেলনে বাঙালির জন্য হোমল্যান্ড এর প্রস্তাব দেওয়া হল। সমর্থনে এগিয়ে এলেন বাংলার সমস্ত বিদগ্ধজন, ঐতিহাসিক রমেশ মজুমদার, সুনীতি চট্টোপাধ্যায়, পন্ডিত রাম শংকর ত্রিপাঠি। শ্যামাপ্রসাদ বাংলা ভাগের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বললেন, পূর্বের অভিজ্ঞতা আমরা দেখেছি যে হিন্দুরা কোনোভাবেই একটা ইসলামিক পাকিস্তানে বেঁচে থাকতে পারবে না। ওই সম্মেলনে ঠিক হয়, বাংলা ভাগের প্রস্তাব এর সমর্থনে ব্যাপক জনমত তৈরি করা হবে।
হিন্দু মহাসভার শ্যামাপ্রসাদের এই ঐতিহাসিক ভূমিকা স্বীকৃতি দিল বাংলার জনগণ। ২৩.০৩.১৯৪৭ এর অমৃতবাজার পত্রিকা জানালো, ৯৮.৩০% বাঙালি হিন্দু বাংলা ভাগের পক্ষে। মাত্র ০.৬% বাঙালি হিন্দু বাংলা ভাগের বিপক্ষে।
৪ই এপ্রিল ১৯৪৭এ তারকেশ্বরে হিন্দু মহাসভার তিনদিনব্যাপী Bengal Partion Covension শুরু হয়। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
শ্যামাপ্রসাদের বললেন, বাঙালি হিন্দুদের বেঁচে থাকার আর কোন উপায় নেই। এটা বাঙালির জীবন মরণের প্রশ্ন।
শ্যামাপ্রসাদ এর এই বাংলা ভাগের বিরোধিতায় নামলেন স্বয়ং গান্ধী । কারণ গান্ধী এবং কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারা ভাবছিলেন বাংলা বিদায় হোক। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ 29 জানুয়ারি 1946 কংগ্রেস কমিটির তরফ থেকে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে যে মন্তব্য করা হয়েছিল, সেখানে আসাম অসম এবং সীমান্ত প্রদেশের প্রসঙ্গ থাকলেও বাংলার হিন্দু অধিবাসীদের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। গান্ধী অসম
ক্যাবিনেট মিশন এর বৈঠকে যোগদান না করার পরামর্শ দিলেও, বাংলা সম্পর্কে নিরব ছিলেন।
শ্যামাপ্রসাদ তার মিশন এ ডিটারমাইন্ড ছিলেন। 1947 সালের 7 ই মে মেঘনাথ সাহা, যদুনাথ সরকার, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রভৃতি বুদ্ধিজীবীরা বাঙালি হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য একটি আলাদা প্রদেশের দাবি তোলেন। শনিবারের চিঠি লেখে ” যাওয়ায় ভালো।”
প্রবাসীকে বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব স্থিরভাবে বিবেচনা করা উচিত।
কলকাতা কর্পোরেশনের 37 জন কাউন্সিলর বাংলার হিন্দু ও জাতীয়তাবাদীদের জন্য একটি আলাদা বাসভূমি চাই।
এমনকি কিরণশঙ্কর রায় বিধান রায় ও শ্যামাপ্রসাদ কে জানান, কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে তারা বাংলা ভাগের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করবেন।
সুরাবর্দী মাউন্টব্যাটেন এর সাথে দেখা করে বারবার অনুরোধ করলেন কোনভাবেই যেন শ্যামাপ্রসাদের দাবি না মানা হয়।
২৮ শে মে ১৯৪৭ বরোজ মাউন্টব্যাটেন কে লিখেছিলেন, বাংলা ভাগ হলে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে
গন্ডগোল করবে। তিনি আরো জানান যে ব্যাপক পরিমাণে অস্ত্র ও বোমা মজুদ করা হয়েছে।
২০.০৬.১৯৪৭ এ বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি তে বাংলা ভাগের প্রস্তাব পাস হয়। তাই বলা যায় ২০ শে জুন ১৯৪৭ পশ্চিমবাংলার জন্মদিন।
বাস্তব বুঝতে মাউন্টব্যাটেনের বিলম্ব হলো না। ৩ রা জুন ১৯৪৭ মাউন্টব্যাটেন প্ল্যানে স্পষ্ট ঘোষণা হলো যে বাংলা ও পাঞ্জাবে বিভাজনের পক্ষে একটিও ভোট বেশী পড়লে বিভাজনের সিদ্ধান্তই কার্যকরী হবে। স্থির হলো যে ২০ শে জুন বেঙ্গল ল্যাজিসলেটিভ এসেম্বলীতে তিন পর্যায়ে ভোট হবে( তখন মোট প্রতিনিধি সংখ্যা ২৫০)। প্রথমে সম্পূর্ণ সভার। তারপর মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গের প্রতিনিধিদের। তারপর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম অংশের প্রতিনিধিদের। ততোদিনে হিন্দু প্রতিনিধিদের ইতিকর্তব্য নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। তৃতীয় পর্বের ভোটে বাংলার পশ্চিম অংশের প্রতিনিধিরা ৫৮-২১(পক্ষে ভোট দেওয়া ৫৮ জন ই হিন্দু) ভোটের ব্যবধানে নিজেদের জয় ছিনিয়ে আনলেন।
জিন্না, সুরাবর্দীদের স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ করে ভারতরাষ্ট্রের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ নামক স্বতন্ত্র প্রদেশের জন্ম দিলেন। বাঙ্গালী হিন্দুর হোমল্যান্ড। নিজস্ব ভূখন্ড।
কৃতজ্ঞ হিন্দু বাঙালি সেদিন শ্যামাপ্রসাদের ঋণ ভোলেনি। ২৪ শে জুন ১৯৫৩ র আনন্দবাজার পত্রিকার
প্রথম পাতায় ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মৃত্যু নিয়ে যে খবর বেরিয়েছিল তা এরকম :
” ইহার পর সংবাদপত্রগুলির বিশেষ প্রভাতী সংস্করণ মারফৎ কলিকাতার সমস্ত জনসাধারণ এই নিদারুণ সংবাদ জানিতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে কলিকাতার সকল কাজ যেন স্তব্ধ হইয়া যায়। কাহাকেও বলিতে হয় নাই। যাহারা সারা দিনের প্রত্যাশায় সবে বিপনি সাজাইয়াছিল, তাহারা উহা বন্ধ করিয়া দেয় এবং যাহারা বিপনি খুলিতে যাইতেছিল তাহারা তাহা অবরুদ্ধ রাখিয়া ডঃ মুখোপাধ্যায়ের বাসভবনের দিকে যাত্রা করে।
” দেখিতে দেখিতে সকল দোকানপাট, বাজার বন্ধ হইয়া গেল। বাস ট্রাম কিছুকাল চলিয়া গতি রুদ্ধ হয়। পায়ে পায়ে হাঁটিয়া দলে দলে অগুনিত অসংখ্য লোক ডঃ মুখোপাধ্যায়ের বাসভবনের সম্মুখে সমবেত হইতে থাকে। তাহাদের প্রিয়তম নেতা বাঙগালার দুলাল কাশ্মীরে নির্বাসনকালে মারা গিয়েছেন, তিনি এই বাসভবনে জাগ্রত জীবনে আর ফিরিয়া আসিবেন না ইহা জানিয়াও শোকে, আন্তরিক উৎকণ্ঠায় লোক এখানে আসিতে লাগিল। যাহারা পারিল উপরে উঠিয়ে আসিল। যাহাদের পক্ষে তাহা দুঃসাধ্য হইল, তাহারা দূরে দাঁড়াইয়া এই ভবনের দিকে তাকাইয়া রহিল। এই বিরাট জনতায় ধনী,দরিদ্র,বৃদ্ধ,তরুণ,কিশোর মিশিয়া গিয়াছে। কলিকাতার বিশিষ্ট ব্যক্তি ও অভিজাতবর্গের মধ্যে কে যে আসেন নাই তাহা বলা কঠিন। অতি সাধারন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরাও কেহ বাদ পড়িয়াছেন কিনা বিপুল জনতার দিকে চাহিয়া তাহাও বলা দুষ্কর। বিপুল জলোচ্ছ্বাসের মতো রাস্তার দুই প্রান্তে জনপ্রবাহ আছে বটে, কিন্তু গৃহ সম্মুখে জনসমাবেশের গভীরতা হ্রাস পাইবার লক্ষণ নাই।
“অফিস-আদালত সবকিছু বন্ধ হইয়া যায়। প্রমোদ অনুষ্ঠান ভবনগুলির দবার সারাদিনের জন্য রুদ্ধ হইয়া যায়। সারা কলিকাতা এক গভীর শোকচছায় নিমজ্জিত হয়। এই দিন আকাশে একবারও রোদ ফুটিয়া উঠে নাই। সূর্য সারাদিন মেঘাচ্ছন্ন ছিল। প্রকৃতি ও কাঁদিয়েছে।
“ডঃ মুখোপাধ্যায়ের বাসভবনে অনেক বয়স্ক বিশিষ্ট ব্যক্তিও উচ্চস্বরে কাঁদিয়েছেন: অপরিচিত ব্যক্তির চোখে অবিরাম অশ্রু। কেমন করিয়া জনসাধারণের চিত্তে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ এমনভাবে আসন প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন?”
২০ শে জুন পশ্চিমবাংলার প্রতিষ্ঠা বাঙালি হিন্দুর বিজয় দিবস।