আহমদিয়ারা মুসলিম নয়, তাই ওদের নামাজ পড়ার অধিকার নেই। এমনকি ওদের মসজিদ যেনো না থাকে। এই মর্মে পুলিশকে হুমকি দিয়েছিল পাকিস্তানের ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী ‘তেহরিক-ই-লাব্বাইক’(TLP)। সেই হুমকির ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে আহমদিয়া গোষ্ঠীর মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলো। ঘটনা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তর্গত ঝিলাম এলাকার কালা গুজরান এলাকার।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর দেওয়া খবর অনুযায়ী, শুক্রবার TLP স্থানীয় পুলিশকে একটি চিঠিতে জানায় যে আহমদিয়াদের নামাজ পড়ার অধিকার নেই। কারণ ওরা মুসলিম নয়। সেই চিঠিতে আরও হুমকি দেওয়া হয় যে হয় পুলিশ মসজিদের মিনার ভেঙে দিক, নতুবা তাঁরা মসজিদ আক্রমণ করবে।
সেই হুমকি চিঠি পাওয়ার পরই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের ডেকে পাঠায় পুলিশ। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় যে নামাজ পড়ার কিংবা মসজিদ নির্মাণ করার কোনও অধিকার নেই তাদের। তাই মসজিদের মিনার এবং মসজিদ ভেঙে ফেলতে হবে।
সেই মত ওই এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে মসজিদের মিনার ভেঙে ফেলে। পাশাপাশি মসজিদের একটি বড় অংশও ভেঙে ফেলা হয় এবং মসজিদের বাকি অংশ নিজেদের ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানে আহমদিয়া মুসলিমদের উপরে নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। আহমদিয়া গোষ্ঠীর নিজেদের মুসলমান হিসেবে দাবি করলেও তাদেরকে মুসলমান মানতে নারাজ পাকিস্তানের মাটিতে সক্রিয় ইসলামিক মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলি। এমনকি পাকিস্তানের জনতার একটা বড় অংশ আহমদিয়াদের মুসলমান বলে মনে করেন না। কেউ কেউ আবার আহমদিয়া গোষ্ঠীর লোকেদের নিচু জাতের মুসলমান বলে মনে করেন। আর এর কারণেই বারবার তাদের উপরে আক্রমণ নেমে আসে।
এই বছরের ১১ই জুলাই, ঈদের কুরবানী দেওয়ায় সিন্ধু প্রদেশের হাফিজাবাদ এলাকায় আহমদিয়া মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। অভিযোগে বলা হয় যে কুরবানী দিয়ে ইসলামের অবমাননা করা হয়েছে।
সিন্ধু প্রদেশে নামাজের জন্য মসজিদ নির্মাণ করায় ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে FIR দায়ের হয়েছিল আহমদিয়া গোষ্ঠীর লোকজনের বিরুদ্ধে। আর সেই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন স্থানীয় উঁচু জাতের মুসলমানরা।
এই বছরের এপ্রিল মাসে পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত আহমদিয়া গোষ্ঠীর একটি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ইসলামিক মৌলবাদী মানসিকতার জনতা।
এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে করাচীতে অবস্থিত আহমদিয়া গোষ্ঠীর একটি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল মুসলিম জনতা। পুলিশ শুধু দাঁড়িয়ে থেকে দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল।
তবে পাকিস্তানের মাটিতে লাগাতার আহমদিয়া গোষ্ঠীর মুসলমানদের উপরে নির্যাতন হলেও আশ্চর্যজনকভাবে নীরব মুসলিম বিশ্ব। আহমদিয়া গোষ্ঠীর মানবাধিকার নিয়ে একটি শব্দও খরচ করতে দেখা যায়নি কোনও মানবাধিকার সংগঠনকে।