© অমিত মালী
মন্দির(Mandir) হিন্দুদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র স্থল হিসেবে বিবেচিত। হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দুদের আধ্যাত্মিক শক্তি যুগিয়ে এসেছে মন্দির। কিন্তু ভারতের মাটিতে মন্দিরের বর্তমান পরিস্থিতি কেমন? অতীতই বা কেমন ছিল? মন্দিরকে কেন্দ্র করে যে অর্থনীতিক কাঠামো ছিল অতীতে, তা বর্তমানে কোথায়? এসব একাধিক বিষয় নিয়ে ইংরেজি ভাষায় দুই খন্ডে গবেষণামূলক বই লিখেছেন সন্দীপ সিং।
সন্দীপ সিং দেশের জাতীয়বাদী মহলে সুপরিচিত নাম। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি হিন্দু মন্দির নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। এর আগেও একাধিক বই লিখেছেন পেশায় অধ্যাপক সন্দীপ সিং। তবে এবারের তাঁর কাজ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
বইটির প্রথম খন্ডে রয়েছে মন্দিরের নির্মাণ শৈলী, মন্দিরের বর্তমান পরিচালনা ব্যবস্থা, মন্দিরকে ঘিরে গড়ে ওঠা অর্থনীতি ও বিবিধ বিষয়।
দ্বিতীয় খন্ডে রয়েছে কিভাবে হিন্দু সমাজ মন্দির সংরক্ষণ করতে পারে, কিভাবে হিন্দু সমাজ মন্দিরগুলিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে নিজেদের কল্যাণে ব্যবহার করতে পারে।
প্রথম খন্ডে(Temple Economics) লেখক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। মন্দিরের ইংরেজি প্রতিশব্দ টেম্পল নয়, ‘মন্দির’ হোক। লেখকের মতে কোনও বিদেশী শব্দ নয়, মন্দিরকে বর্ণনা করা হোক মন্দির হিসেবে। তারপরই লেখক ধাপে ধাপে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। অতীতে মন্দির ছিল সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু। মন্দিরকে ঘিরেই ভারতীয় সভ্যতার সমাজ ব্যবস্থা, অর্থ ব্যবস্থা, শাসন, শিক্ষা দীক্ষা গড়ে উঠেছিল। আর এসবই বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ১০০ কোটি হিন্দুর দেশে মন্দির পরিণত হয়েছে দর্শনীয় স্থান হিসেবে। হিন্দু সমাজের কাছে হিন্দু মন্দির আজ অবহেলিত। সরকারের কাছে মন্দির শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের যন্ত্র মাত্র। মন্দিরে প্রবেশে বিশেষ টিকিট কেটে ঢোকা, বিশেষ পূজার নামে বেশি অর্থ তো রয়েছে। কিছু কিছু মন্দিরে আবার রয়েছে ভিআইপি দর্শন ও পূজার ব্যবস্থা। আর এতে করে সমাজের একটি অংশ মন্দির ও তা থেকে উপার্জিত অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মন্দিরের উপার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ হিন্দু সমাজের কোনও কাজে লাগেনি। মন্দিরে দান হিসেবে জমা পড়া অর্থ হিন্দু সমাজের মধ্যে ধর্ম জ্ঞান প্রচারের কাজে লাগেনি।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন লেখক। মন্দিরকে ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে বেশ কিছু কর্পোরেট সংস্থা। বেশ কিছু কর্পোরেট সংস্থা হিন্দুদের শ্রদ্ধা ও ভক্তিকে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনে নেমে পড়েছে। এ বিষয়ে হিন্দু সমাজকে সচেতন হতে হবে, উল্লেখ করেছেন লেখক।
এছাড়াও, মন্দির শব্দটি ধীরে ধীরে পবিত্রতা হারাচ্ছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এমনকি সরকার যথেচ্ছভাবে মন্দির শব্দের ব্যবহার করছে। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের নামের সঙ্গে মন্দির শব্দটি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে মন্দির শব্দ জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ মন্দির ও বিদ্যালয় সম্পূর্ণ আলাদা কেন্দ্র।
দ্বিতীয় খণ্ড অর্থাৎ ‘A decade for Manidrs’(Mandiron Ke Liye Ek Dashak)- এ লেখক দেশের একাধিক মন্দিরের নির্মাণ শৈলী, কিভাবে বহু মন্দির ভেঙে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে, সেই সব তথ্য তুলে ধরে মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি মন্দিরের উদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় খন্ডের ছত্রে ছত্রে মন্দির রক্ষার ব্যাপারে পাঠকদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছেন লেখক। সেই সঙ্গে মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণে যে কিছু সমস্যা ও বাধাও যে রয়েছে, তা অবশ্য উল্লেখ করেছেন তিনি। প্রাচীন মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ করা অতি আবশ্যক। বিশেষ বিশেষ মন্দির সরকার রক্ষণাবেক্ষণ করলেও তা কেবলমাত্র দর্শনীয় স্থান হিসেবে রয়ে গিয়েছে। সেই সব মন্দির তার আগের গৌরব ফিরে পায়নি। সেই সব মন্দিরে পুজোও হয়না। বরং দেশের আইন সেই সব মন্দিরের পূজা করা অপরাধ।
কিন্তু বড় বড় মন্দির বাদ দিলেও দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে লক্ষ লক্ষ মন্দির। সেই সব মন্দির ভগ্নপ্রায়, রুগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে মন্দিরের অপূর্ব সব নির্মাণ শৈলীর নিদর্শন। হারিয়ে যাচ্ছে হিন্দু সভ্যতার গৌরব।
লেখক মন্দির উদ্ধার আন্দোলনে রাজমাতা অহল্যা বাই হোলকারের ভূমিকা শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন।
সেই সঙ্গে লেখক উল্লেখ করেছেন কিভাবে দেশের একটি অংশ মন্দিরকে বদনাম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সিনেমা, সাহিত্য, ছবি ও কার্টুনের মাধ্যমে। মন্দির সম্বন্ধে হিন্দু সমাজের উদাসীনতার কারণে এসব গোষ্ঠীর সাহস দিন দিন যে বেড়েই চলেছে, তাও প্রমাণসহ উল্লেখ করেছেন লেখক।
তাই লেখকের মতে গৌরবময় ভারতীয় সভ্যতা যদি রক্ষা করতে হয়, তবে মন্দির রক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য। মন্দির না বাঁচলে ভারতীয় সভ্যতা বাঁচবে না। আর তাই তিনি মন্দির রক্ষার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন বারবার। আর এই দুই খন্ডের গবেষণাধর্মী বই অবশ্যই উদ্বুদ্ধ করতে পারে। আর লেখকের মতে মন্দির রক্ষার আন্দোলনে প্রথম কাজ হবে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে মন্দিরকে মুক্ত করা।
বইটি কিনতে ক্লিক করুন নিচের লিংকে: –