হিন্দু সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করে সিনেমা ব্যবসা: শিল্পীর স্বাধীনতা এবং মাকু লজিক



Updated: 20 June, 2023 10:40 am IST

© অমিত মালী

বর্তমানে দেশে হিন্দুত্বের বাতাস বইছে। যত দিন যাচ্ছে, সেই বাতাসের গতি তীব্রতর হচ্ছে। হিন্দু ধর্ম বা সংস্কৃতিকে অপমান করা কিংবা বিকৃতি করা হলে জনতা আর তা দেখছে না। আর তাই দেশের বেশকিছু পরিচালক হিন্দুত্বের দিক ছুঁয়ে সিনেমা বানাচ্ছেন। আর এই কারণে প্রায় বেশিরভাগ সিনেমায় গণেশ দেবের গান কিংবা অন্যান্য গান দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সেই সব সিনেমা দারুন ব্যবসা করছে, বলা যায় বক্স অফিসে সফল। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে হিন্দুত্বের নাম করে বিকৃতিও ঘটানো হচ্ছে। যেমনটা সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘আদিপুরুষ’ সিনেমায় ভগবান শ্রী রামকে নিয়ে করা হয়েছে।

ভগবান শ্রী রাম সারা বিশ্বের হিন্দুদের কাছে আরাধ্য। শুধু তাই নয়, হিন্দুদের কাছে আদর্শও। কিন্তু ‘আদিপুরুষ’ সিনেমায় সেই শ্রী রাম এবং সীতা মাতার বিকৃতিও ঘটানো হয়েছে। কিন্তু প্রথমে দেশের মানুষকে তা বুঝতে দেওয়া হয়নি। সিনেমার প্রচারে খুব সুচারুভাবে হিন্দুত্বের আবেগকে ব্যবহার করে দেশজুড়ে হিন্দুদের মনে সিনেমা নিয়ে ঝড় তুলেছিলেন পরিচালক, প্রযোজক এবং অভিনেতা ও অভিনেত্রী। এমনকি সিনেমা হলে বজরংবলীর জন্য একটি আসন খালি রাখার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সিনেমা হলে গিয়ে ভুল ভাঙলো দেশের তামাম ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের।

ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা কী দেখলো? আরাধ্য শ্রী রাম, সীতা মাতা এবং বজরংবলীর চরিত্রে বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। পরম্পরাগতভাবে শাস্ত্রে বর্ণিত শ্রী রামের সঙ্গে সিনেমায় দেখানো শ্রী রামের কোনও মিল নেই। সীতা মাতার চরিত্রে নেই মাধুর্য, মায়া মমতা কিংবা সেই ভাব, যা হাজার হাজার বছর ধরে ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের মনে গভীরভাবে প্রোথিত। পরম ভক্ত বজরংবলীর মুখে ব্যবহার করা হলো সস্তা ও অশ্লীল ভাষা – ‘কাপড়া তেরি বাপকা, জলেগী তেরি বাপকি’। এইসব দেখে হিন্দুদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সিনেমাটি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠতে শুরু করেছে দেশজুড়ে।

কিন্তু এত কিছু সত্বেও হেলদোল নেই সিনেমার নির্মাতাদের। কারণ আপাতদৃষ্টিতে চোখে না পড়লেও হিন্দুদের আরাধ্য দেবদেবী নিয়ে ছেলেখেলা করার সাথে সাথে এক গভীর চক্রান্ত যে রয়েছে, তা স্পষ্ট।

কয়েকটি বিষয় পয়েন্ট আকারে তুলে ধরলে তা আরও স্পষ্ট হবে।

প্রথমত, শ্রী রামকে কাল্পনিক বলে প্রমাণ করার চেষ্টা। কারণ যখনই হিন্দুদের প্রতিবাদ উঠতে শুরু করেছে, তখনই একদল লোক শিল্পীর স্বাধীনতা নিয়ে জ্ঞান দিতে শুরু করেছেন। তাদের বক্তব্য এই যে শিল্পী তাঁর কল্পনা মত কাহিনীর নির্মাণ করেছেন। কিন্তু শ্রী রাম তো কাল্পনিক চরিত্র নন। তিনি ঐতিহাসিক চরিত্র এবং হাজার হাজার বছর ধরে ভারতের ঐতিহ্যের অংশ। তাছাড়া, প্রভু শ্রী রাম কেমন ছিলেন, তাঁর জীবন কাহিনী বিভিন্ন শাস্ত্রে বিদ্যমান। তারপরেও এমন বিকৃতি , তা মেনে নেওয়া অসম্ভব।

দ্বিতীয়ত, সিনেমা দেখে কোনওকিছুর সম্বন্ধে একটা ধারণা হয় মানুষের মধ্যে। ফলে সিনেমা ভাবধারা প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিন্তু দেশের বহু মানুষ, যারা রামায়ণ কখনও পড়ে দেখেননি, তাঁরা কী ভাববেন? তাদের মধ্যে ধারণা তৈরি হবে যে প্রভু শ্রী রাম এমনই ছিলেন। ‘আদিপুরুষ’ সিনেমা দেখে তাদের মনের মধ্যে ধারণা তৈরি হবে যে শাস্ত্রে বোধহয় এমনই আছে। কিন্তু সিনেমার পরিচালকরা শাস্ত্রের উল্টোটা দেখিয়ে পার হয়ে গিয়েছেন।

তৃতীয়ত, হিন্দুর সেন্টিমেন্ট নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে এই সিনেমায়। হিন্দুর আবেগকে ব্যবহার করে টাকা কামানোর চেষ্টা করেছেন এই সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজকরা, তা স্পষ্ট।

চতুর্থত, শিল্প স্বাধীনতার নামে সরাসরি হিন্দু ধর্মের অপমান করা হয়েছে। যে কেউ প্রভু শ্রী রামকে নিয়ে সিনেমা বানাতেই পারে। কিন্তু নিজের কল্পনার মতো নয়, শাস্ত্রের মতো করে বানাতে হবে। কিন্তু সেসবে ধার ধারেন না কেউই। কারণে এর আগে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে প্রভু শ্রী রামের একটি ছবি বানানো হয়েছিল। সেটাও কাল্পনিক ছিল। আর এবার পুরো সিনেমা বানানো হলো কল্পনার উপর ভিত্তি করে।

পরিশেষে বলা যায় যে হিন্দুরা অত্যন্ত সহিষ্ণু। আর তার কারণেই হিন্দুর দেবদেবী নিয়ে উপহাস করা হয়। হিন্দুর আরাধ্য দেব শ্রী রামকে নিয়ে গাঁজাখুরি গল্পঃ লিখে সিনেমা বানানো যায়। আর এভাবেই চলছে বহু বছর। কিন্তু আর কতদিন? আমরা কি ভেবে দেখবো না, কেনো শুধু আমার আরাধ্য দেবদেবী নিয়ে এমন হয়? কেনো অন্য ধর্মকে নিয়ে শিল্পীর স্বাধীনতা গজিয়ে ওঠে না? আমরা কি প্রতিবাদ করবো না? আমরা কি এই অন্যায়ের প্রতিশোধ কিংবা প্রতিকার করবো না? একটি ভাবুন। ভাবা অভ্যাস করুন।

(CREDITS: The YouTube video posted inside the Article)