© শ্রী সূর্য শেখর হালদার
মণিপুরে সম্প্রতি একটি ভয়াবহ জাতি দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে(Violence in Manipur)। এর প্রধান কারণ উপজাতি এবং হিন্দুদের ব্যাপকভাবে হিন্দু থেকে খ্রিষ্টানে ধর্মান্তকরণ। ইতিহাস বলছে মধ্যপ্রাচ্যের দুটি আব্রাহামিক মতবাদ – ইসলাম ও খ্রিস্টান, কোন কালে একে অপরের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারেনি, এমনকি অন্য কোন ধর্ম বা সংস্কৃতির সঙ্গেও এই দুই ধর্মমত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই দুই আব্রাহামিক মতবাদের দর্শনের মধ্যেই নিহিত আছে দাঙ্গার বীজ। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখব যে তারা এই জাতি দাঙ্গা উপভোগ করে এবং সময় সময় এটা তাদের একটি ব্যবসাতে পরিণত হয়। এই দুই আব্রাহামিক মতবাদের আরেকটি সাদৃশ্য হলো উভয়েই দুর্বল জাতি পেলে গণহত্যার মধ্য দিয়ে তাদের বিনষ্ট করতে চায়। আবার কখন , কিভাবে শান্তিপূর্ণ সম্প্রদায় রূপে বিশ্বের সহানুভূতি অর্জন করতে নিজেদের অত্যাচারিত রূপে সকলের সম্মুখে তুলে ধরতে হবে সেটাও তারা ভালোভাবে জানে।
মণিপুর শব্দের অর্থ মণি – মানিক্যের নগর। মণিপুরের কথা আলোচিত হয়েছে মহাভারতে। মহাভারতের অন্যতম চরিত্র অর্জুনের স্ত্রী চিত্রাঙ্গদা ছিলেন এই মণিপুরের রাজকন্যা। পরবর্তীকালে অর্জুন ও চিত্রাঙ্গদার পুত্র বভ্রুবাহন মণিপুর শাসন করেন। সেই সময় থেকেই মণিপুর মূলত হিন্দুদের আবাসস্থলে পরিণত হয়। এখানকার অধিকাংশ রাজাই বৈষ্ণব দর্শনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। মণিপুরী নৃত্যও ভারত ভূমির অন্যতম বিখ্যাত একটি প্রাচীন নৃত্য। এই নৃত্যের মধ্যে আমরা শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলার বিবরণ পেয়ে থাকি যা প্রাচীন মণিপুরের বাসিন্দাদের হিন্দু ধর্মের প্রতি আনুগত্যের নিদর্শন। এই বৈষ্ণব পরম্পরা মণিপুরের ভূমিতে প্রাচীনকাল থেকেই প্রথিত হয়েছে।
মণিপুরের এই সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয় উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে যখন মণিপুরের ভূমিতে ব্রিটিশদের আগমন হয়। ব্রিটিশদের সঙ্গে আসে খ্রিস্টান মিশনারীরা। তাদের মিশন বা লক্ষ্য ছিল খ্রিস্টান ধর্মের বিস্তার এবং শুরুতেই তারা তাদের লক্ষ্যের সফলতা পায় নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে। এই দুই স্থানে মণিপুরের অনেক পূর্বেই হিন্দুদের খ্রিস্ট ধর্মে পরিবর্তন করার কাজ আরম্ভ হয়। যেহেতু এই অঞ্চলে এর আগে কোন বিধর্মীর অনুপ্রবেশ ঘটেনি, তাই মিশনারীদের সফলকাম হতে সুবিধা হয়। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দ ভারতে আগমন ঘটে আর্থিংটন অ্যাবরিজিনস মিশনারি গ্রুপের অন্যতম মিশনারি উইলিয়াম পেটিগ্রিউয়ের। সেই সময় উত্তর-পূর্ব ভারতে খ্রিস্টান ধর্মের বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছিল আমেরিকান ব্যাপ্টিস্ট ফরেন মিশন সোসাইটি। সুতরাং তিনি ব্যাপ্টিস্ট সোসাইটির হয়ে ধর্ম পরিবর্তনের কাজে নেমে পড়লেন।
মানচিত্র লক্ষ্য করলে আমরা দেখব যে মণিপুর প্রদেশটি পাহাড় এবং উপত্যকা এই দুই অংশ। এখানে পাহাড়ে মূলত উপজাতিভুক্ত মানুষেরা থাকে আর এই উপজাতির নাম কুকি। সমতল অঞ্চলে মূলত বসবাস করেন মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ। উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বর্তমান ছিল।
এখনো সেই অবস্থার যে বিরাট পরিবর্তন হয়েছে এমন নয়; উভয়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানও হতো স্বাভাবিক নিয়মে। ফলত: সনাতন ধর্মের মধ্যে পূজিত হতে থাকে কুকী উপজাতির বিভিন্ন দেবতা।
পেটিগ্রিউ প্রথমে উপত্যকার বাসিন্দা এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে তাঁর কাজ শুরু করেন। কিন্তু সেখানে তাঁকে প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়। তাই তিনি মণিপুরের পার্বত্য এলাকা উখরুলে চলে আসেন।
মণিপুরের পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর মতামত ছিল এইরূপ যে নাগা কুকিদের সঙ্গে উপত্যকার সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের বরাবর সুসম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এটাও বাস্তব যে কুকিরা প্রচন্ড রক্ষণশীল এবং তাদের নিজেদের সমাজের মধ্যে প্রেতাত্মাদের প্রতি যে বিশ্বাস আছে সেটাকেও তারা যথেষ্ট মর্যাদা দেয়।
তিনি পার্বত্য অঞ্চলের কুকিদের সাহায্যের জন্য বিদ্যালয় ও ডাক্তার-খানা চালানো আরম্ভ করেন। সেসময় বঙ্গ ভাষা এই এলাকার শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের ভাষার মর্যাদা পেতো কিন্তু এখানকার বেশিরভাগ মানুষই বঙ্গভাষা বলতে পারতো না। পেটিগ্রিউ এই পরিস্থিতিতে এই এলাকায় প্রচলিত তাংখুল ভাষা শেখাতে আরম্ভ করেন। তিনি এই ভাষাতে বাইবেলও অনুবাদ করেন এবং শীঘ্র তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ওয়াটকিন রবার্ট, ডি জি ক্রজিয়ার, ইউ এম ফক্স প্রভৃতি মিশনারিরা খ্রীষ্টের বাণী প্রচার করতে থাকেন। পরে ব্রিটিশ সরকার এই এলাকায় খ্রীষ্টের বাণী প্রচার প্রচারের জন্য পেটিগ্রিউকে “কাইজার-ই-হিন্দ” উপাধিতে ভূষিত করে।
ক্রিশ্চান ধর্ম বিস্তারের পরিচিত পদ্ধতি হলো প্রথমে স্থানীয়দের বোঝানো যে তাদের ধর্ম, জীবন- পদ্ধতি, সংস্কৃতি – এই সকল বিষয় হল আদিম ও অসভ্য। এখানে কুকিদের বোঝানো হয় যে তাদের সমাজের চিরাচরিতভাবে পুজিত দেবদেবীরা, শিরচ্ছেদ পদ্ধতি ( headhunting), ভাত থেকে তৈরি করা মদ পান, খোলামেলা যৌনতার পরিবেশ, উদ্দাম আনন্দের বহিঃপ্রকাশ, অর্ধনগ্ন পোশাক এমনকি তাদের চুল কাটবার পদ্ধতি – সবই বর্বর ও অসভ্য। তারপর তাদের বলা হয় যে এক শক্তিশালী গডের কাছে প্রার্থনা করতে যার দূত জলকে মদে পরিণত করতে পারেন। মিশনারীদের লক্ষ্যই ছিল স্থানীয় এলাকার শাশ্বত পরম্পরাকে মূলোচ্ছেদ করা এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিষিয়ে দেওয়া যাতে করে তারা অচিরেই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যাইহোক এত প্রচেষ্টা সত্বেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত ধর্মান্তকরণকারীদের সংখ্যা এতই নগণ্য ছিল, যে এলাকায় তাদের মিলিত সংখ্যা তিন অঙ্কের নীচে ছিল। কিন্তু প্রতি দুটি গ্রামের একটিতে চার্চ প্রতিষ্ঠা হতে থাকে। উইলিয়াম পেটিগ্রিউ ধর্মান্তকরণের এত কম সংখ্যা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন যে ধর্মান্তকরণের বীজ রোপিত হয়ে গেছে। গডের ইচ্ছা হলেই তার শক্তি ও প্রভাবে অসংখ্য হৃদয়ের পরিবর্তন সম্ভব হবে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সকল অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে দেয়। এই সময়ে নিজেদের হয়ে যুদ্ধ করবার জন্য ব্রিটিশদের প্রয়োজন হয় প্রচুর সংখ্যক শ্রমিক ও যোদ্ধার। নাগা কুকিরা কিন্তু ব্রিটিশদের হয়ে যুদ্ধ লড়তে সম্মত হয় না: তার পরিবর্তে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে । ১৯১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ চলে দুই বছর ধরে। পরিশেষে ব্রিটিশ সরকার এই বিদ্রোহ দমন করে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর এত দীর্ঘস্থায়ী ও খরচ সাপেক্ষ সামরিক অভিযান ব্রিটিশদের করতে হয়নি, যা এই বিদ্রোহ দমন করতে ব্রিটিশদের করতে হয়েছিল। এই ব্রিটিশ বিরোধী যুদ্ধ বর্মা , নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে ছড়িয়ে থাকা কুকিদের ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছিল। আবার উল্টো দিক থেকে দেখলে কুকিদের এই ঐক্যবদ্ধতা মিশনারীদের ধর্ম প্রচারের কাজকে সহজ করে দিয়েছিল। আগে তাদের বিভিন্ন প্রকার বিশ্বাস সম্পন্ন উপজাতিদের আলাদা আলাদা করে বোঝাতে হচ্ছিল। যেহেতু, এখন তারা ঐক্যবদ্ধ একই উপজাতিতে পরিণত হয়ে গেল, তখন তাদের ধর্মান্তকরণ করবার ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করার সুযোগ মিশনারীরা পেল। উত্তর-পূর্ব ভারতে খ্রিস্টান ধর্মান্তকরণ গতি লাভ করে।
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মণিপুরে খ্রিস্টান ছিল মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ। এই সময়ে ধর্ম পরিবর্তনের পশ্চাতে সহায়ক হয়ে ওঠে নেহেরু – এলইন চুক্তি। এই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু মনে করেন উপজাতিদের শুধুমাত্র নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন রূপে পর্যবেক্ষণের জন্য ছেড়ে রেখে দেওয়া উচিত নয় এবং সেই সঙ্গে বাইরের সমাজ থেকে উপজাতির মানুষদের রক্ষা করা উচিত। এর ফলে মূল স্রোতের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে কুকিদের যোগাযোগ বিনষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু খ্রিস্টান মিশনারিরা উপজাতিদের বিষয়ে গবেষণার সুযোগে উপজাতি সমাজের মধ্যে অবাধ যাতায়াত আরম্ভ করে। এর ফলাফল হয় আরো মারাত্মক। সারা ভারত যখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠে তখন উপজাতিরা পায় চার্চ আর বাইবেল। আজও কোন পর্যটক উত্তর-পূর্ব ভারতে গেলে তার মনে হবে টাইম মেশিনে করে সে কয়েক শতাব্দী পশ্চাতে চলে এসেছে। এলউইনের ষড়যন্ত্র বোঝার ইচ্ছা বা ক্ষমতা সম্ভবত নেহেরুর ছিল না। তাই তিনি এহেন এলউইনকে নেফা ( অরুণাচল প্রদেশের তৎকালীন নাম ) সরকারের নেতাত্ত্বিক উপদেষ্টা রূপে নিযুক্ত করেন।
ফলাফল স্বরূপ ক্রিশ্চান জনসংখ্যা ১৯৬১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২০%। তার সঙ্গে বর্মা থেকে নাগাদের অনুপ্রবেশের ফলে খ্রিস্টান জনসংখ্যা কিছু বছরের মধ্যে হয়ে যায় ৪১%, যা সনাতন ধর্মাবলম্বী মেইতেইদের সমান। এভাবে প্রদেশের জনবৈচিত্রের বিরাট এক পরিবর্তন দেখা যায়, যেখানে হিন্দু মেইতেইরা খুব বেশি হলে ওবিসি কোটার সুযোগ সুবিধা লাভ করে। সেটাও সম্ভব হয় কয়েক বছরের আন্দোলন ও প্রতিবাদের পর। যেহেতু এসটি(ST) মর্যাদা নেই, তাই মেইতেইরা মনিপুরের পার্বত্য অঞ্চলে জমি কিনে বসবাস করতে পারে না। উল্লেখ্য, এই অঞ্চলে শুধু উপজাতিরাই বাস করতে পারে। অতএব, মেইতেইরা শুধুমাত্র ইম্ফল উপত্যকাতেই বসবাস করতে পারে, যা সমগ্র প্রদেশের জমির মাত্র ১০%। বাকি ৯০% জমি সংরক্ষিত উপজাতি জন সমাজের জন্য। অন্যদিকে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী উপজাতিরা অনায়াসেই উপত্যকায় এসে বসবাস করতে পারে। তারা সহজেই ইম্ফল উপত্যকায় জমি কিনতে পারে এবং সরকারি চাকুরীর বড় অংশ নিজেদের দখলে আনতে পারে।
আমেরিকার ব্যাপ্টিস্ট চার্চের অন্তহীন আর্থিক সাহায্য তাদের পক্ষে কাজ করা আরো সহজ করে দিয়েছে। অবৈধ অর্থের আগমনের ফলে কুকি সম্প্রদায়ের অনেকেই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে এবং বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠনে যোগ দিয়ে মনিপুর থেকে হিন্দু মেইতেইদের উচ্ছেদ করতে সচেষ্ট হয়েছে। তারা এখন দাবি করছে পৃথক মাতৃভূমি গঠনের। এই সমস্ত সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধর্ম ও সাংস্কৃতিক বিভেদ, যা খ্রিস্ট ধর্মের আগমনের পূর্বে এই অঞ্চলে ছিল না। ফলত দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শুরু হয়েছে সংঘর্ষ। বর্তমান সংকটের প্রারম্ভ বিগত ২০শে এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মণিপুর হাইকোর্টের একটি রায়কে কেন্দ্র করে। কোর্ট তার রায়ে সরকারকে অনুরোধ জানায় যে হিন্দু মেইতেইদের এসটি(ST Status) রুপে স্বীকৃতি দিতে। এতেই কুকিরা শঙ্কিত হয়ে ওঠে যে এবার মেইতেই সম্প্রদায় পার্বত্য অঞ্চলে জমি কিনতে পারবে।
বর্তমান ভারতে হিন্দুদের দুরবস্থার জন্য প্রাথমিক দায় হলো সংবিধান প্রণেতাদের। প্রত্যেক জাতিকে দেশের মধ্যে ধর্ম প্রচার করতে দেওয়ার সুযোগ তারাই করে দিয়েছে। এর ফলে বহিরাগত খ্রিস্টান ও ইসলাম দেশের মধ্যে বিস্তৃত হয়েছে। সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারার সুযোগ নিয়ে খ্রিস্টান ও ইসলামের ধর্মপ্রচারকরা সনাতন হিন্দু ধর্মের চেয়ে তাদের নিজেদের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ বলে প্রচার করে চলেছে। তাঁরা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যে তাদের আব্রাহামিক সংস্কৃতিকে দেশীয় সংস্কৃতির চাইতে উচ্চ আসনে বসাতে। তাদের মতে দেশীয় সংস্কৃতির বাহক সনাতনী হিন্দুরা হলো পৌত্তলিক, কাফের। তাদের ধর্মমত অনুসরণ করলে ভারতীয়দের বাস্তবিক আধ্যাত্মিক জীবন আরও সুন্দর সুখকর হবে। অনেক হিন্দুই আছে যারা অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র। তাঁরাই ওইসব প্রচারে প্রভাবিত হয়ে ধর্মান্তরিত হচ্ছে। ধর্মান্তকরণের সংস্থাগুলি তাদের কাঁচা টাকার বিনিময়ে ধর্মান্তর করাচ্ছে, আর তাঁরাও তাদের সন্তান-সন্ততিরা ভালো শিক্ষা পাবে এই আশায় পিতৃপুরুষের ধর্ম ও সংস্কৃতি বিসর্জন দিচ্ছে। সেইসঙ্গে তাদের হিন্দু সমাজের জাত প্রথা নিয়ে ভুল তথ্য সহকারে ভুল বোঝানো হচ্ছে। তাদের বোঝানো হচ্ছে যে একটি শক্তিশালী গডকে মানলে সামাজিক সাম্য আসবে।
ভারতের সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারা আব্রাহামীক ধর্মমত গুলিকে দেশের মধ্যে প্রচারের অনুমতি দিয়েছে। এই অনুমতি বর্তমানে সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কারণ। পৃথিবীর কোন দেশেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবাধ ধর্ম প্রচারের অধিকারকে মৌলিক অধিকার রূপে স্বীকৃত দেওয়া হয়নি। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, সংবিধান সভার সদস্য লোকনাথ মিশ্র, যিনি পরবর্তীকালে একাধিক রাজ্যের রাজ্যপাল হন; তিনি ২৫ নম্বর ধারার উপর বিতর্কের সময় সংখ্যালঘুদের ধর্ম প্রচারের অধিকারকে মৌলিক অধিকার করার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি সংবিধান সভার বিতর্কে বলেছিলেন যে নিজেদের মধ্যে ধর্ম প্রচারের অধিকার নাগরিকদের থাকতেই পারে; কিন্তু সংবিধানের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে এলে পরবর্তীকালে পরিস্থিতির অবনতি হবে। তিনি হিন্দু ধর্মকে অন্য ধর্মের আক্রমণ ও ধর্মান্তরনের কবল থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে ইসলাম হিন্দু ধর্মের চিন্তাধারার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। আর খৃষ্টান ধর্ম শান্তিপূর্ণভাবে পিছনের দরজা দিয়ে হিন্দু সমাজকে আক্রমণ করছে। তাদের আক্রমণের শিকার হলো হিন্দু সমাজের প্রান্তিক মানুষ, যাদের তারা ধর্মান্তরিত করে খ্রিস্টান বানায়। হিন্দুদের উদারতার অপব্যবহার এভাবেই ঘটছে এবং এমন দূরদৃষ্টিহীন রাজনীতি হিন্দু সংস্কৃতিকে হত্যা করছে।
যাইহোক, তাঁর এই প্রস্তাব অন্য সদস্যরা মেনে নেননি। তাঁরা যুক্তি দেখান যে হিন্দু ধর্ম অন্য ধর্মের আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রবলভাবে সক্ষম। সে কারণেই এই অসঙ্গত ধারা সংবিধানে যুক্ত হয় এবং হিন্দু সমাজের প্রবল ক্ষতি সাধনের হেতুতে পরিণত হয়। হিন্দু সমাজকে শেষ আঘাত করেন ইন্দিরা গান্ধী। ইমার্জেন্সির সময় (১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ) ৪২ তম সংবিধান সংশোধন করে সোভিয়েত ইউনিয়নের চাপে সংবিধানের প্রস্তাবনাতে সেকুলার শব্দটি তিনি অনুপ্রবেশ করান। এরপর তাঁর করা সংশোধনের অনেক কিছুই পুনরায় সংশোধিত হলেও সেকুলার শব্দটিকে আর সরানো হয়নি।
ধর্মান্তকরণ সারা বিশ্বেই বহু সভ্যতাকে বিনষ্ট করে দিয়েছে। ধর্মান্তকরণ শুধু একটি সম্প্রদায়ের চিন্তা ভাবনার অভিমুখ পরিবর্তন করে দেয় এমন নয়, এর ফলে একটি সম্প্রদায় তাদের পূর্ব পুরুষের জ্ঞান, সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিকতা সবকিছুই হারিয়ে ফেলে। এটি একটি ঘৃণ্য অপরাধ, শারীরিক মানসিক এবং বৌদ্ধিক হিংসা। এই ধরনের হিংসা সংগঠিত হতে না দেওয়াটাই সঠিক পন্থা। এই অবাধ ধর্মান্তকরণ উত্তর ভারতে ভয়াবহ সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। মনিপুরের চার্চগুলো অন্যান্য স্থানের মসজিদের মতো খ্রিস্টান সন্ত্রাসবাদীদের আর্থিক ও নৈতিক সমর্থন দিচ্ছে এবং রসদ যোগাচ্ছে। খোলাখুলি ভাবে চার্চ থেকে হিন্দু হত্যার জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে সন্ত্রাসবাদীদের। মণিপুর সহ সমগ্র দেশ জ্বলছে। পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগ জনক ও পীড়াদায়ক। সঙ্গে চলছে জনবিন্যাস পরিবর্তন। এইসবের ফলাফল যে আগামী দিনে ভয়াবহ হবে সে নিয়ে কোন ভ্রান্তি বা সন্দেহ নেই।
(The above article is composed based on inputs taken from an article published in Bharat Voice Portal. CLICK HERE to read the original Story.)