ভয়াবহ হামলার শিকার মণিপুরের হিন্দুরা: ভেঙে-পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৩৯৩টি মন্দির



Updated: 06 September, 2023 6:53 am IST

মণিপুর(Manipur)-এর মাটিতে হিন্দু বিরোধী হিংসা থামার কোনও লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। এরই মাঝে উদ্বেগজনক খবর সামনে এলো। এক প্রকাশিত সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, শত শত হিন্দু মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মণিপুরে

মণিপুরের হিংসা নিয়ে বিশ্বজুড়ে এক শ্রেণীর মিডিয়া মেইতেই হিন্দুদের দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যস্ত। কিন্তু বাস্তবে খ্রিস্টান কুকি-চিন উগ্রপন্থীদের দ্বারা মেইতেই হিন্দুরা যে আক্রমণের শিকার, তা উঠে এসেছে ওই সমীক্ষা রিপোর্টে।

বেশ কিছুদিন ধরে মণিপুরের হিন্দুদের উপরে ঘটে চলা ভয়াবহ আক্রমণ নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল The Umanglai Kanba Apunba Lup(UKAL) নামে একটি সংস্থা। সেই সংস্থার প্রতিনিধিরা মণিপুরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে কুকি উগ্রপন্থীদের হামলার ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলির ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করেছে। সেই সংস্থার দেওয়া হিসেবে অনুযায়ী, মোট ৩৯৩টি মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেঙে দেওয়া মন্দিরের মধ্যে রয়েছে হিন্দু মন্দির, পূর্ব পুরুষের স্মৃতিতে তৈরী স্মৃতি মন্দির এবং মণিপুরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সানামহী ধর্মের মন্দিরও।

সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এই তালিকা চূড়ান্ত নয়। রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার সময় পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, সেই অনুযায়ী ৩৯৩টি মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সংখ্যা আগামীদিনে আরও বাড়তে পারে।

সংস্থার ‘মেইতেই প্রোটেকশন কমিটি’ এই রিপোর্ট পেশ করে। কমিটির প্রধান মুতুম মানিতন বলেন, ”কুকি-চিন উগ্রপন্থীরা মেইতেইদের মন্দির ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হয়নি, বেশ কয়েকটি স্থানে মন্দিরের ভিতর থেকে মূর্তি বের করে এনে থুতু ফেলা এবং লাথি মারার মতো কাজ করেছে। তারপর মন্দির ভেঙে আগুন দিয়েছে। কিছু জায়গায় মন্দিরে শুধু আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে কুকি-চিন উগ্রপন্থীরা।”

সংস্থাটির দেওয়া তালিকা অনুযায়ী: কাকচিং জেলার ৪১টি মন্দির, চূড়াচাঁদপুরের ৭২টি, বিষ্ণুপুরের ২০টি, টেংনৌপালের ৪৩টি, পূর্ব ইম্ফল জেলার ৩০টি, পশ্চিম ইম্ফল জেলার ৪টি এবং কাংপোকপি জেলার ১৩টি মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়াও, জঙ্গলের দেবী উমাং লাই-এর উদ্দেশ্যে নির্মিত ৪৪ই লাইসাং(উপাসনাস্থল) ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে: টেংনৌপাল জেলার ৩টি, চূড়াচাঁদপুরে ১১টি, কাকচিং জেলায় ৪টি, পূর্ব ইম্ফল জেলায় ৩টি, কাংপোকপি জেলায় ১০টি, বিষ্ণুপুরে ৬টি এবং পশ্চিম ইম্ফল জেলায় ৭টি।

এছাড়াও, কাংপোকপি জেলার ১৬টি প্রাচীন হিন্দু মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে কুকি-চিন উগ্রপন্থীরা। ভেঙে দেওয়া মন্দিরের মধ্যে রয়েছে শিব মন্দির, শ্রী কৃষ্ণ মন্দির। কাংপোকপি জেলার কোয়াব্রু লেইখা অঞ্চলের প্রাচীন শিব মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুরের শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরটিতেও ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় মনিপুরের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত কুকি-চিন সম্প্রদায়কে আক্রান্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রচার করা হচ্ছে যে কুকিদের বহু চার্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কুকিদের পক্ষ নিয়ে সরব। কিন্তু বাস্তবে সনাতন হিন্দু ধর্মের অনুসারী মেইতেই সম্প্রদায় সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত। UKAL প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্টে সেটাই প্রকাশ।