অচর্চ্চিত কাজী নজরুল ইসলাম



Updated: 28 December, 2023 7:33 am IST
ছবি: 'সিপিআইএমের কাকাবাবু' কমরেড মুজফফর আহমেদ, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও ফজলুল হক
ছবি: 'সিপিআইএমের কাকাবাবু' কমরেড মুজফফর আহমেদ, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও ফজলুল হক

© শ্রী অনিমিত্র চক্রবর্তী

নিঃসন্দেহে, কবি নজরুল ইসলামের নব কলেবরে উত্থান ঘটেছে সম্প্রতি। তাঁর চির বৈরী, মাত্র কিছুদিন পূর্বেও তাঁকে প্রথম ঘোষিত ‘লাভ জেহাদি’ আখ্যা দেওয়া হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের একাংশের মধ্যেও তাঁর প্রতি সপ্রশংস মনোভাব প্রত্যক্ষ হচ্ছে। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই; ব্যক্তিগত চিন্তাকে জনসমক্ষে প্রকাশ করার মৌলিক অধিকার রয়েছে ভারতবর্ষের একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের কাছে। তাতে ক্ষেদ নেই বরং রয়েছে এক জিজ্ঞাসা।

১৯২০র দশকে প্রমীলা দেবীর সাথে তাঁর বিবাহ তৎকালীন সমাজে, হিন্দু ও মুসলমান উভয় পক্ষেই এক তীব্র ঘূর্ণিঝড় ও বাদানুবাদের সৃষ্টি করে। তাঁর প্রথম স্ত্রী নার্গিস আসার খানম যাঁকে কেন্দ্র করে তিনি ছায়ানট; পূবের হাওয়া; চক্রবাক কাব্য গ্রন্থের বেশ কিছু কাব্যের রচনা করেন। যদিও পারিবারিক বাদানুবাদে এই বিবাহ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। প্রমীলা দেবী তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী, অতএব। এবং নজরুল বেশ কিছুকাল প্রখ্যাত স্বদেশী রাজনৈতিক নেতা শ্রী হেমন্ত কুমার সরকারের আশ্রয়ে কৃষ্ণনগরে অতিবাহিত করেন, সাথে তাঁর পত্নী শ্রীমতী প্রমিলা দেবী ও শাশুড়ি মাতা শ্রীমতী গিরিবালা দেবী। তাঁর চার সন্তানের নামও তৎকালীন সমাজের রোষমুক্ত হতে পারেনি (হিন্দু ও মুসলমান উভয় পক্ষের)। সন্তানেরা হলেন কৃষ্ণ মোহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুল্বুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ। সমকালীন ও পরবর্তীযুগের বামপন্থীদের কাছে এই নামকরণ মুক্তমনের অগ্রদূত রূপে উপস্থিত ও উপাস্য হয় যদিও এইরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেই মুগ্ধ বামপন্থী/কম্যুনিস্টদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না।

কিন্তু প্রশ্ন ওঠে তাঁর নিজস্ব ধ্যানধারণা, ধর্মমত ও রাজনৈতিক দিশা নিয়ে। নিঃসন্দেহে, এটি একটি প্রহেলিকা এখনও। অনেকেই তাঁকে চিরকালীন অস্থিরচিত্ত রূপে ভেবেছেন। কিন্তু তাঁর অভিন্নহৃদয় বন্ধু কমরেড মুজফ্ফর আহমেদ (সিপিআইএমের কাকাবাবু) – র কথায়, “নজরুল ইসলাম মার্কসবাদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। সমাজের ইতিহাস, শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস মার্কসবাদের এই মোদ্দা কথাটি সে মানত। তার কবিতায় সাম্যবাদের সুর রয়েছে। সাম্যবাদের দর্শনের নাম দ্বন্দ্বমূলক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ। একইসঙ্গে এই দর্শনের নাম দ্বন্দ্বমূলক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ। একইসঙ্গে এই দর্শনে বিশ্বাসী ও অধ্যাত্মবন্দী কেউ হতে পারল না, অথচ, নজরুল ইসলাম অধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। যে ছাত্ররা নজরুল ইসলামের সাহিত্য নিয়ে চর্চা করেছেন তাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে এটা কি করে সম্ভব হল? এর উত্তর আমি ওপরে দিয়েছি, অবশ্য তা আমার উত্তর। অনেকেই অবশ্য আমাদের সঙ্গে একমত হবেন না জেনেও আমি বলব নজরুল যখন অধ্যাত্মিক সাধনা করতে গিয়েছিল তখন সে পরিপূর্ণরূপে সুস্থ ছিল না। দ্বন্দ্বমূলক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদের কোন কোন সূত্র সে মানত ঠিকই কিন্তু এই দর্শনটি সে যে কখনও আয়ত্ত করেনি একথাও ঠিক।” (কাজী নজরুল ইসলাম প্রসঙ্গে। পৃ: ১৬০। বিংশ শতাব্দী ১৯৫৯)

কমরেড আরও লিখছেন, “নজরুলের রোগের প্রথম সূচনা কখন হয়েছিল তা বলা কঠিন। সে নিজে নিশ্চয়ই তার ভেতরে এই রোগের আবির্ভাবটা অনেক আগেই টের পেয়েছিল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সে যদি কোন বিশিষ্ট চিকিৎসকের কাছে যেত তাহলে আজ আমাদের দেশ তাকে এইভাবে হারাত না। তাহলে আমাদের চোখের সামনে আজ এক জীবন্মৃত নজরুলকে দেখতে হত না। দেশের কত দুর্ভাগ্য যে নজরুলের যখন বিজ্ঞানের আশ্রয় গ্রহণ করা উচিত ছিল, তখন সে আশ্রয় নিয়েছিল অধ্যাত্মিকতার কোটরে। এই অধ্যাত্মিকতা যে কি তা আমি জানি না, তবে তা রোগের ঔষধ নয়।”…একথা বহুলরূপে প্রচারিত ও সমর্থিত নজরুল প্রিয় সন্তান বুলবুলের অকস্মাৎ প্রয়াণে কাতর হয়ে শরণ নেন প্রখ্যাত, প্রণম্য ক্রিয়াযোগী শ্রী বরদাচরণ মজুমদারের এবং তিনি ক্রিয়াযোগ অভ্যাসে অনুবর্ত্তী হন। এর অল্পকালের মধ্যেই তাঁর মধ্যে দুরারোগ্য ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং বাকি জীবন, দুঃখজনকভাবে জীবন্মৃত হয়েই অতিবাহিত করেন। …..তাই আমরা বরং মনোনিবেশ করি তাঁর সক্রিয়তার যুগের প্রতি।

বিশেষত, সেই যুগে যখন তাঁর ধর্মমত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে পরস্পর বৈরী দুই, হিন্দু-মুসলমান সমাজ হতেই। এবং একথাও সত্য, নজরুল রাণু সোমকে (প্রখ্যাত লেখিকা শ্রীমতী প্রতিভা বসু) গান শেখানোর জন্য ঢাকা শহরে তিনি হিন্দু যুবকদের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছেন। মুসলমান সমাজ হতে নজরুলের প্রতি অভিযোগ ছিল, তিনি কালীপূজা করেন। এ প্রসঙ্গে শ্রী নিতাই ঘটকের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তাঁর ‘অতীত দিনের স্মৃতি’ গ্রন্থের ৪২ পৃষ্ঠায় শ্রী ঘটক লিখেছেন, “সীতানাথ রোডে থাকাকালীন কবিকে হিন্দুশাস্ত্র বিশেষভাবে চর্চা করতে দেখেছি। অনেকে বলেন কালীমূর্তি নিয়ে কবি মত্ত হয়েছিলেন- একথা ঠিক নয়। আমি কখনো তাঁকে এভাবে দেখিনি।”

তাহলে হিন্দু ধর্ম বিষয়ক কবিতা, গানের রচনা কেন? এই প্রসঙ্গে তিনি নিজেই উত্তর দিয়েছেন, “আমি হিন্দু-মুসলমানের মিলনে পরিপূর্ণ বিশ্বাসী। তাই তাদের কুসংস্কারে আঘাত হানার জন্যই মুসলমানী শব্দ ব্যবহার করি, বা হিন্দু দেব-দেবীর নাম নিই। অবশ্য এর জন্য অনেক জায়গায় আমার সৌন্দর্যের হানি হয়েছে। তবু আমি জেনে শুনেই তা করেছি।” [শব্দ-ধানুকী নজরুল ইসলাম, শাহাবুদ্দিন আহমদ, পৃষ্ঠা ২৩৬,২৩৭]…………….১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই ডিসেম্বর রবিবার কলিকাতা এলবার্ট হলে বাংলার হিন্দু-মুসলমানের পক্ষ থেকে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বিপুল সমারোহ ও আন্তরিকতা সহকারে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, “কেউ বলেন, আমার বাণী যবন, কেউ বলেন, কাফের। আমি বলি ও দুটোর কিছুই নয়। আমি শুধুমাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। [নজরুল রচনাবলী – ৮, পৃষ্ঠা ৩, ৫]

কিন্তু তিনি কি ইসলামে বিশ্বাস করতেন? এর উত্তর নজরুল দিয়েছেন তাঁর ‘আমার লীগ কংগ্রেস’ প্রবন্ধের ৬১ পৃষ্ঠায় “আমার আল্লাহ নিত্য-পূর্ণ -পরম- অভেদ, নিত্য পরম-প্রেমময়, নিত্য সর্বদ্বন্দ্বাতীত। ‘ইসলাম’ ধর্ম এসেছে পৃথিবীতে পূর্ণ শান্তি সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে – কোরান মজিদে এই মাহাবাণীই উত্থিত হয়েছে। ···এক আল্লাহ ছাড়া আমার কেউ প্রভূ নাই। তাঁর আদেশ পালন করাই আমার একমাত্র মানবধর্ম। আল্লাহ লা-শরিক, একমেবাদ্বিতীয়ম। আল্লাহ আমার প্রভু, রসূলের আমি উম্মত, আল-কোরআন আমার পথ-প্রদর্শক। আমার কবিতা যাঁরা পড়ছেন, তাঁরাই সাক্ষী: আমি মুসলিমকে সঙ্ঘবদ্ধ করার জন্য তাদের জড়ত্ব, আলস্য, কর্মবিমূখতা, ক্লৈব্য, অবিশ্বাস দূর করার জন্য আজীবন চেষ্টা করেছি।”

১৯৪০ সালে কলিকাতায় বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতিরি ঈদ-সম্মেলনে প্রদত্ত সভাপতির অভিভাষণে নজরুল বলেছিলেন, “ইসলাম জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করতে পেরেছে।” [নজরুল রচনাবলী – (৭) পৃষ্ঠা ৩৩]

হিন্দুর ‘শ্যামা সংগীত’ রচনা এবং মুসলমানের ‘গজলগীত’ রচনা কবির বিবেচনায় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির এক প্রচেষ্টা।

মৌলভী তরিকুল আলম কাগজে এক প্রবন্ধ লিখে বললেন কোরবানীতে অকারণে পশু হত্যা করা হয়; এমন ভয়াবহ রক্তপাতের কোনো মানে নাই। নজরুল তার জবাবে লিখলেন ‘কোরবানী’ কবিতা। তাতে তিনি বললেন-

ওরে, হত্যা নয়, এ সত্যগ্রহ শক্তির উদ্বোধন,
দুর্বল ভীরু চুপ রহো, ওহো খামখা ক্ষুদ্ধ মন।
…..এই দিনই মীনা ময়দানে
…..পুত্র স্নেহের গর্দানে
……ছুরি হেনে খুন ক্ষরিয়ে নে
রেখেছে আব্বা ইবরাহীম সে আপনা রুদ্র পণ,
ছি,ছি, কেঁপো না ক্ষুদ্র মন।
[নজরুল স্মৃতিচারণ, নজরুল একাডেমী পৃষ্ঠা ৪৩৯ ]

পরিশেষে, ‘নজরুল স্মৃতিচারণ’ গ্রন্থের ৩১৭ পৃষ্ঠায় লেখক জনাব খান মুহম্মদ সালেক বলেন, “১৯৩৯ সালের ৫ আগষ্ট। কোলকাতা বেকার হোষ্টেলে নবীনবরণ অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি করে আনা হয়েছে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী নলিনীরঞ্জন সরকারকে। বিশিষ্ট অতিথি ছিলেন নজরুল ইসলাম আর আব্বাস উদ্দীন। অনুষ্ঠান শেষে কবিকে চা-পানের জন্য নিয়ে যাওয়া হলো হোস্টেলের কমনরুমে। কিছু ছাত্র আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়েছিল। তারা এক টুকরো করে কাগজ কবির সামনে ধরছে আর আবদার জানাচ্ছে কিছু লিখে দেবার জন্য। কবি একটা পেন্সিল হাতে নিলেন। তারপর একজনকে লিখে দিলেন, ‘আল্লাহু আকবর।’ আর একজনকে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসলুল্লাহ।’ আবার কাউকে লিখলেন, ‘খোদাকে চেনো, খোদাকে চিনবে।’ আমিও এক টুকরো কাগজ বের করে সামনে ধরলাম। তিনি লিখলেন, ‘যারা ধৈর্যশীল খোদা তাদের সহায়।’ তাঁর এ ধরণের উক্তি থেকে মনে হয়েছিল তিনি কোন পীর-দরবেশ বা অলি আউলিয়ার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করছেন।”…………..

একথা ঠিক, হিন্দু মহাসভা তথা পরবর্তীকালের জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কবি নজরুলকে আর্থিক সাহায্য করেছিলেন এবং তার প্রতুত্তরে নজরুল তাঁকে এক আবেগমথিত পত্র লেখেন যাতে শ্যামাপ্রসাদের ব্যক্তি মাধুর্যের প্রতি তাঁর আপন মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। যদিও এটিও ঠিক শ্যামাপ্রসাদ ব্যক্তিগতভাবে এক অত্যন্ত আবেগপ্রবণ ব্যক্তি ছিলেন। সম্ভবত, এই আবেগপ্রবণতাই তাঁকে স্বল্পদিনের জন্য হলেও কম্যুনিস্টদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত সোভিয়েত-সুহৃদ সঙ্ঘের সভাপতি হতে প্রেরণা দিয়েছিল। “………..নজরুল মানবিক গুণে সমৃদ্ধ ছিলেন, ইসলামে তাঁর পূর্ণ আস্থা ছিল। তিনি হিন্দু শাস্ত্র নিয়ে চর্চ্চাও করেছেন কিন্তু তিনি হিন্দু হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি কখনও। নজরুল যত চর্চ্চা করেছেন হিন্দু শাস্ত্র নিয়ে তার চেয়ে অধিক চর্চ্চা করেছেন”- বক্তা, প্রখ্যাত ভাষাতাত্বিক ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।

প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত গায়ক আব্বাসউদ্দীনের “গুরুর পদে প্রেম ভক্তি হলো না মন হবার কালে/আর কি রে তোর সাধন-ভজন/অনুরাগের সময় গেলে” গানটি একসময় আলোড়ন তুলেছিল হিন্দুদের মধ্যে। অবেহে হিন্দুরা ভেসে গিয়েছিলেন। কিন্তু আব্বাসউদ্দীনের সুললিত সঙ্গীতের জন্যই অবিভক্ত বঙ্গের বৃহদাংশে পাকিস্তান আন্দোলন উল্কার বেগে ছড়িয়ে পড়ে; আব্বাস মুসলিম লীগ ও পাকিস্তানের দৃঢ় সমর্থক ছিলেন। আগামী কোন হিন্দু সম্মেলনে কি একই গানটি শোনা যাবে?

……ভারতের জাতীয় সঙ্গীত “জন-গণ-মন” র (প্রথম আট পংক্তি জাতীয় সঙ্গীত) তৃতীয় অনুচ্ছেদে রয়েছে, “পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পন্থা, যুগ-যুগ ধাবিত যাত্রী।
হে চিরসারথি, তব রথচক্রে মুখরিত পথ দিনরাত্রি।
দারুণ বিপ্লব-মাঝে তব শঙ্খধ্বনি বাজে
সঙ্কটদুঃখত্রাতা।
জনগণপথপরিচায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে॥”…………..যা নজরুলের ‘পার্থসারথী’ গীতির চেয়ে কোন অংশে কম নয়।

আবেগে উন্মত্ত হয়ে ওঠা হিন্দুর এক বিশেষ অপগুণ। এবং এই অনিয়ন্ত্রিত আবেগই তার ধ্বংসের মূল কারণ। শুধুমাত্র বহিঃশত্রুকে দায়ী করে সকল দোষ হতে পরিত্রাণ পাওয়ার প্রচেষ্টাও হিন্দুর এক বংশ-পরম্পরাগত ব্যাধি। তাই আজকের বাঙ্গালী হিন্দু বিস্মৃত হয়েছে বেদান্তরত্ন শ্রী হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, গীতাশাস্ত্রী শ্রী জগদীশ চন্দ্র ঘোষের মতো মনস্বীদের। হিন্দুকে অধ্যয়নে, শ্রমে সময় ব্যয় করতে হবে যদি সে আপন অস্তিত্ব রক্ষা করতে চায়, অগ্রসর হতে চায় পুনরায়। বাঙ্গালী হিন্দুর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির সংখ্যা অন্তহীন; তাঁদের পুনর্বার আলোকিত করার মাহেন্দ্রক্ষণ এটি। এবং এটিও বলা প্রয়োজন, ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত ব্যতিরেকে হিন্দু নেতৃত্ব অনেকাংশেই আপোষকামী; pragmatism তথা বাস্তববাদিতার দোহাই দিয়ে নজরুলকে মহিমান্বিত করার প্রচেষ্টাও সেই আপোষেরই ফল।

(ছবি: ‘সিপিআইএমের কাকাবাবু’ কমরেড মুজফফর আহমেদ, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও ফজলুল হক।)

(উপরের নিবন্ধটি ‘কাঞ্জিক কাহনে’ ইতিপূর্বে প্রকাশিত।)