ভারতজুড়ে রঙের উৎসব



Updated: 24 March, 2024 5:10 am IST


© ড. কল্যাণ চক্রবর্তী

রঙের উৎসব, আলোর উৎসব, ফসলের উৎসব, অবগাহনের উৎসব প্রভৃতি হিন্দুধর্মের বহুমুখী বৈচিত্র্যকে তুলে ধরেছে। দোলপূর্ণিমা ও হোলিখেলাকে কেন্দ্র করে সারা ভারত জুড়েই রঙের উৎসব চলে। সে উৎসবের প্রেরণা বাসন্তী-প্রকৃতির রঙের মোহনা, পুষ্পপল্লবের অনুপম সৌকর্য। প্রকৃতির রঙের অনুকরণে মানুষও সাজতে চায়, সাজাতে চায়।
“তোমায় সাজাব যতনে কুসুমে রতনে
কেয়ূরে কঙ্কণে কুঙ্কুমে চন্দনে।।
কুন্তলে বেষ্টিব স্বর্ণজালিকা, কণ্ঠে দোলাইব মুক্তামালিকা,
সীমন্তে সিন্দুর অরুণ বিন্দুর– চরণ রঞ্জিব অলক্ত-অঙ্কনে।।”

“ফাগুনে আগুন/চৈতে মাটি/বাঁশ বলে শীঘ্র উঠি।” গ্রাম বাংলার একটি পরিচিত কৃত্য হল বাঁশ বাগানের মেঝেতে ফাগুনমাসের সন্ধ্যায় অগ্নিসংযোগ। শীতকাল থেকেই বাঁশঝাড়ের তলায় পুরু হয়ে থাকে পাতার রাশি। বাঁশবাগানে হাঁটলে পা দেবে যায়। বড়রা বলেন, “ওদিকে যাস নে, চন্দ্রবোড়া সাপ থাকে।” বাঁশঝাড় পিট-ভাইপারের পছন্দের আস্তানা। গ্রামের ছেলের দল কিন্তু বাঁশবাগানে খেলে বেড়ায়। প্রতি বছর ফাগুনে আগুন জ্বালানোর বন্দোবস্ত করে সাপের চিরস্থায়ী বাসা ভাঙা হয়। বসন্ত ঋতুতে গ্রামাঞ্চলে সন্ধ্যা নামলেই দাউদাউ জ্বলে ওঠে এক একটি বাঁশবাগান। গাঁয়ের মানুষ বলেন, বাঁশঝাড়ে পটাশ সারের চাহিদা নাকি এতে মেটে! বাঁশ পটাশ-প্রিয় গাছ। অযত্নে লালিত ঝাড়ে পটাশের সেই চাহিদা মেটাবে কে? ওই ইকোসিস্টেমে বর্ষাকালে পাতাপচে আপনা থেকেই সার হয়। আর বসন্তে পাতা পুড়িয়ে দিলে সারের যোগান বাড়ে। তারপর এক কোদাল, দুই কোদাল আশেপাশের মাটি তুলে দেওয়া হয় ছাইয়ের উপরে, বাঁশের গেঁড়োর গোঁড়ায়। দেখতে দেখতে তাগড়াই হয়ে ওঠে বর্ষার জলে। এটা বাগানীদের দীর্ঘদিনের লোকজ্ঞান। খনার বচনে এভাবেই বাঁশঝাড় পরিচর্যার কথা আছে।

পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশের হিন্দুপ্রধান কোনো কোনো এলাকায় দোলপূর্ণিমার আগের দিন হিন্দু কিশোর-কিশোরীরা চাঁচড় বা বুড়ির ঘর পোড়ায়। সম্ভবত এ এক প্রাচীন সান্ধ্য-কৃত্যের ধারাবাহিকতা। হোলিকাসুর বধেরও আগে এর শুরু। আজ এ বাগান, কাল সে বাগান পোড়ে গ্রাম বাঙ্গলায়। কিছু কঞ্চি-বাঁশ হয়তো পুড়ে যায়, গৃহস্থও সজাগ থাকেন। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজনে পুকুরের জল ব্যবহার হয়।

ছোটোবেলায় দোলের আগের দিন ন্যাড়াপোড়া করতাম, কোথাও একে ‘চাঁচর’ বলে। কোথাও ‘বুড়ির ঘর’ পোড়ানো। পাড়ার দিদা-ঠাকুমাদের চোখে জল আসে সেদিন। অনেকেই পূর্ব পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। তাদের চোখের সামনেই খড়ের বাড়ি, দড়মার বেড়া, শোবার ঘর পুড়িয়ে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে এক একটি বীভৎস আক্রমণে। গতযৌবনা ছিন্নমূল উদ্বাস্তু রমণীরা আরও একপ্রস্ত কেঁদে নেন লুকিয়ে। জানি না, এর কোনো ফাইল প্রকাশিত হবে কিনা! তবে ছোটোরা এটা জানি, বাঁশপাতা আর কঞ্চি সাজিয়ে দারুণ ‘বুড়ির ঘর’ তৈরি হয়। দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় শুকনো নারকেলের পাতা, সুপারির খোলপাতা, আম-জাম-পেয়ারা পত্রের স্তূপ, শুকনো কচুরিপানার ভাঁড়ার। নেড়াপোড়ার বহ্নিসজ্জা রীতিমতো পাহারা দিয়ে রাখতে হত আমাদের। এই পাহারা দুর্বলচিত্তের কাজ নয়। পাড়ার দুষ্টছেলের কাজই ছিল চুরি করে অন্যের চাঁচর জ্বালিয়ে দেওয়া। কোনো কোনো জায়গায় এই চুরির নাম ‘যওন-জ্বালি’। এই ‘যওন’ কথাটি কী থেকে এসেছে ভাষাবিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন। অনেক সময় জোর করে চাঁচর জ্বালানো নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় অশান্তি হতো৷

চাঁচর জ্বলছে। ক্যাম্প-ফায়ারের মতো তার চারপাশে গোল হয়ে আয়োজকেরা দাঁড়িয়ে আছি। পূর্ণিমার চাঁদ আরও উজ্জ্বল, আরও মোহময় হয়ে উঠছে। হাততালি দিয়ে ছড়া কাটছি, “আজ আমাদের নেড়াপোড়া/কাল আমাদের দোল/পূর্ণিমার ওই চাঁদ উঠছে/বলো হরি বোল।” সমবেত কণ্ঠে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আবারও বলি “হরি বোল। হরি বোল।” হরিনামের মাধুর্যে কিশোর কিশোরীর অন্তঃকরণ তখন আবেগে উদ্বেল। আগুনের আলো, পুবে পূর্ণশশী — এক অসামান্য পরিবেশ! পরের দিন দোল। খেলার আয়োজন নিয়ে তাই আমরা মশগুল হই। আরেকপ্রস্ত আলোচনা চলে।

আজকাল ভেষজ আবীর নিয়ে হৈচৈ হলেও, চার দশক আগে আমরা ছেটোরা বাড়িতে ভেষজ আবীর বানিয়েছি কত! অভাবের সংসারে ওটুকু রঙ-আবীর সংগ্রহ করা তখন কঠিন হয়ে পড়তো। সরস্বতী পূজায় কাঁচা হলুদ, নিম, মুসুরি ভেজানো বাটা, তেল মিশিয়ে সারা গায়ে মেখে স্নান করতে যেতাম। তখনই আইডিয়া হল, হলুদ-বাটা বেশ মানানসই রঙ। বেটে নিতাম শ্বেত আর রক্ত চন্দন, ওগোলো সুগন্ধি। নানান রঙের গাঁদার পাপড়ি, নীলকণ্ঠ ফুল, অতসী, কল্কে পাপড়ি বেটে নিতাম। পাপড়ির মণ্ডে আঠালোভাব আনতে তরি-তরকারির খোসার আঠা মিশিয়ে দিতাম। যেমন ঝিঙে, পটল, লাউ, শশা ইত্যাদির বোঁটার দিকটি কেটে নিলেই আঠা বেরিয়ে আসতো। আমরা চামচ দিয়ে চেঁচে নিতাম। একটি থালার মাঝে রেকাবিতে রাখা থাকতো সামান্য আবীর। বাকী ছোটো গোল বাটিতে উদ্ভিদ-মণ্ড সাজিয়ে নিয়ে দোল খেলতে বেরোতাম। দুষ্ট ছেলেরা হাসে৷ পাড়ার দিদিরা নিজেরাই এসে মেখে নেন ভেষজ আবীর, চট করে পাওয়া যেতো না তখন। আর আমাদেরও দিদিরা বেশ করে মাখিয়ে দিতেন। “এই তো, রূপচর্চা হয়ে গেলো। এরপর যা বাঁদর রঙ খেলা হবে, তা এই মণ্ডের উপরেই পড়বে। চামড়ার ক্ষতি হবে না কোনো।” রঙের উৎসবে, দোল-হোলির দিন আমরা সবাই কী প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারি না?

নেড়াপোড়া হবার আগে আমরা বালতি করে জল রেডি রাখতাম। শেষে বাঁশ পিটিয়ে, জল দিয়ে আগুন নিবিয়ে দিতে হতো। আর খোঁজা হত মাটির হাড়িতে রাখা আলু-রাঙাআলু-কচু-খামালু। ওসব খোসা ছাড়িয়ে সৈন্ধবলবণ, লঙ্কা আর সরষের তেলে মেখে সমবেতভাবে খাওয়া হতো৷ পরদিন পাড়ার গরীব মানুষেরা ন্যাড়াপোড়া-স্থল থেকে সংগ্রহ করতে আসতেন কাঠকয়লা। রঙ ফুরিয়ে গেলে কালি-ভূষো বানানোর জন্য ছাই সংগ্রহ করতাম।

একসময় ফাল্গুনি পূর্ণিমার তিথিতে নববর্ষ উৎযাপিত হত। দোলযাত্রা ছিল তার ধারক ও বাহক। ফাল্গুনি পূর্ণিমার পর চৈত্র মাসকে প্রথম মাস ধরে বারোমাসের হিসেব হত। আর ওই যে আদিবাসীদের ‘বাহা পরব’; ওটাও নববর্ষ ধারণা, নব বসন্তের পুষ্প পরিণতি। তা অনুষ্ঠিত হয় ফাল্গুনি পূর্ণিমার কাছাকাছি সময়ে। বসন্ত-বন্দনার মাধ্যমে নববর্ষের সূচনা বনবাসী-কৌমসমাজের প্রাচীন রীতি। ফুলের পরবে পুষ্পোপাসনার মধ্যে আগামীদিনের খাদ্যের প্রতিশ্রুতি। কারণ ফুল থেকে আসবে ফল। “ফুল কহে ফুরারিয়া, ফল, ওরে ফল,/কতদূরে রয়েছিস বল মোরে বল।/ফল কহে, মহাশয়, কেন হাঁকাহাঁকি, /তোমার অন্তরে আমি নিরন্তর থাকি।” এই যে রূপান্তরের নান্দনিকতা, এটাই খাদ্য-সংস্কৃতি। বাহা পরবে তাই শস্য পাবার আকাঙ্খা এবং তারই প্রেক্ষিতে নববর্ষকে আহ্বান। প্রকৃতির রঙ-রূপ পুষ্প-পল্লব হয়ে ধরা দেয় দোলপূর্ণিমায়, তারপর ফল হয়ে, বীজ হয়ে দেবী অন্নপূর্ণার প্রসাদ রূপে প্রাপ্ত খাদ্য আমাদের বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা নিবৃত্তি করে।

কয়েক দশক ধরে উত্তর ২৪ পরগণায় দোল উৎসব দেখেছি। সাতের দশকে দোল উপলক্ষে যথেষ্ট অসভ্যতামি হত। সমবেতভাবে কাউকে কাউকে চ্যাংদোলা করে নর্দমায়, এঁদো পুকুরে ফেলে দেওয়া হত। আটের দশকে এইসব অনেকটা কমলো। তখন আবীর দিয়ে খেলা যথেষ্ট হত। বাচ্চারা পিচকারি ব্যবহার করতো। আবীর ফুরোলে বাঁদর রঙ, সোনালী/রূপালী রঙ পকেটে নিয়ে ঘুরতো কিশোর-তরুণরা। ওইসব রঙ মাখালে কারও মুখ আর চেনার জায়গায় থাকতো না। রঙ তুলতে খুব সাধ্যসাধনা করতে হত। পুকুর ঘাটগুলি দুপুর একটার পর থেকে রঙ তোলার স্নানার্থীতে ভরে যেত। ন’য়ের দশকে বাচ্চারা বেলুনে ভরা রঙ ব্যবহার করতে শুরু করে দিল। পিচকারির ব্যবহার হতে লাগলো কেবল বেলুনে রঙ গোলা জল ভরতে। এখনকার বিষাক্ত রঙগুলি গায়ে লাগলে জ্বলে যায়। কে শোনে কার কথা! ওই রঙ মাখতেই হবে।

জানাই আমার বাড়িতে কী ঘটতো দোলের দিন। ক্লাস এইটের আগে বাবা জীবিত থাকাকালীন তিনি দোলের আগের দিন বাড়িতে এনে দিতেন মাটির ছোটো রাধাকৃষ্ণ, তিন রঙের আবীর, কিছু ফুল-মালা, সঙ্গে বাতাসা, ফুট কড়াই, মঠমিষ্টি। বাড়ীতে তৈরি হত মালপোয়া, পায়েস। দোলের দিন সকালে পুজো হত। বাবা নিজে করতেন পুজো। পুজোর পর মাটির রাধাকৃষ্ণের পায়ে আবীর দিয়ে তারপর বয়স অনুযায়ী বাবা-মা-দাদা-দিদিদের পায়ে আবীর দিতাম। বোনের কপালে দিতাম আবীরের টিপ। বাবা-মা আশীর্বাদ করে কপালে আবীর দিতেন। বাবা কখনো কেমিক্যাল রঙ কিনে দিতেন না। আবীরেই খেলতাম। সুগন্ধি ছিল সেই আবীর। বাড়িতে ছোড়দি শ্বেতচন্দন আর রক্তচন্দন বেটে রাখতেন। চন্দনপাটায় বাসন্তী আর কমলা গাঁদাফুল বেটে নেওয়া হত। এসব দিদিরা আমাদের মুখে ভালো করে মাখিয়ে দিতেন যাতে কেমিক্যাল রঙ বাইরের কেউ মাখালেও ত্বকের ক্ষতি না হয়। তারপর আমরা সকলে ছুটে চলে যেতাম বাইরে দোল খেলতে। সকাল ন’টা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত দোল খেলতাম। অনেক বাড়িতে কাকিমা-জেঠিমার পায়ে আবীর দিলে তারা মুখে মিষ্টি আর জল ঢেলে দিতেন আলতো করে। এসব প্রায় উঠে গেলো নয়ের দশক থেকে। এখন ফ্ল্যাট কালচারে সবাই সবার সঙ্গে মেশেন না। এই দূরত্ব ভাঙা দরকার। মনে আছে আমাদের ছোটোবেলায় বন্ধুদের মধ্যে আড়ি-ভাব ছিল। দোলের দিন সে সব দূর হয়ে যেত, সবার সঙ্গে তখন সদ্ভাব। দোল আমাদের কথা না বলার অভিমান দূর করতো।

ভেষজ আবীর আমরা নিজেরাই বানিয়ে নিতে পারি। চীনা রঙ ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়।
দোল এবং হোলি বসন্তের উৎসব, প্রকৃতি-কেন্দ্রিক আনন্দ-পারম্পর্য। এই দিনগুলিতে প্রকৃতির মধ্যেই থাকা উচিত; প্রাণে এবং মনে প্রকৃতির আনন্দোচ্ছ্বাস অনুভব করা উচিত। কৃত্রিম, ক্ষতিকর রঙ ব্যবহার করে উৎসবকে কলুষিত করার নয়। প্রাকৃতিক ভেষজ রঙ ব্যবহার করে নিরাপদে দোল ও হোলি খেলতে চাই আমরা। বাড়িতে নিজেই তৈরি করে নিতে পারি টাটকা জলরঙ আর আবীর। বাচ্চাদের হাতে সেটাই তুলে দিতে হবে, আর উৎসবের পুরো আনন্দ উপভোগ করতে হবে। শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধিকা প্রকৃতির এক অনির্বচনীয় আনন্দের সাগর। প্রকৃতি-রূপ নারী চেতনার রঙ দিয়ে পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের মন রাঙানোর প্রকাশ করেন। বসন্তী পুষ্পরেণুতে সেজে ওঠে প্রকৃতি, তার কিশলয়, তার নতুন কুঁড়ি। প্রকৃতির রঙ কখন যেন আমাদের মন রাঙিয়ে দেয়, আমরা হয়ে যাই রাধাকৃষ্ণের ঐশী প্রকাশ। মানব মনে ঈশ্বর এসে ধরা দেন রঙের দ্যোতনায়। তাই প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়ে, প্রকৃতির আবীর গুলাল নিয়ে খেলতে চাই বসন্ত-দোল। দুলিয়ে নিতে চাই নিজের মন, কৃত্রিম রঙের হোলিকাসুরকে পরাজিত করতে চাই।

কীভাবে তৈরি করবো প্রাকৃতিক ভেষজ রঙ?
১. লাল-মাটির মাঠে মাঠে এখন পলাশ ফুটে লালে লাল; পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূমের জঙ্গলে জঙ্গলে পলাশ ফুলে বিছিয়ে আছে মাটি। তা কুড়িয়ে সংগ্রহ করে নিন, শুকনো অথবা সতেজ। দক্ষিণবঙ্গের নানা স্থানে পথিপার্শ্বস্থ পলাশে ফুলেও আগুন জ্বলছে! পলাশ পাপড়িগুলিকে বৃন্ত থেকে আলাদা করতে হবে। তারপর সেই পাপড়ি পরিমাণ মতো গরম জলে সেদ্ধ করা হবে। সেদ্ধ হলে পাপড়ি থেকে সম্পূর্ণ পলাশ রঙ বেরিয়ে আসবে। তখন ওই রঙিন জলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ট্যালকম পাউডার মিশিয়ে রোদে শুকিয়ে নিলেই পলাশ ফুল থেকে ভেষজ আবির তৈরি হয়ে যাবে। প্যাকেটে ভরার আগে ওই আবিরে রং ধরে রাখার জন্য কিছু পরিমাণ হলুদের গুঁড়ো মেশানো যায়। ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গাঁয়ের মানুষ তা তৈরি করে বিপণন করতে পারেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে। পলাশ ফুল কুড়িয়ে আপনি নিজেও বাড়ির জন্য রঙ তৈরি করে নিতে পারেন। তরল রঙ ধাতব পিচকারিতে ভরে বা অন্য উপায়ে মাখিয়ে দিন প্রিয় মানুষকে। সে রঙ কখন লাগবে এসে মনে, জানা নেই!
২. একইভাবে পুজো হয়ে গেলে নীলকন্ঠ অপরাজিতার ফুল-মালা থেকে পাপড়ি আলাদা করে নিন। সরাসরি ফুলে, কিনেও নিতে পারেন বাজার থেকে। গরম জলে নীল অপরাজিতা সেদ্ধ করলে নীল রঙ বের হয়ে আসে।
৩. বাসন্তী ও কমলা রঙের আলাদা আলাদা গাঁদা ফুলের জাত রয়েছে, কিনে আনুন। বাড়ির প্রয়োজনে পুজো হয়ে যাওয়া ফুল ব্যবহার করতে পারেন। পাপড়ি গরম জলে সেদ্ধ করে তাতে ট্যালকম পাউডার মিশিয়ে, ভালোভাবে গুলিয়ে, রোদে শুকিয়ে যথাক্রমে হলুদ ও কমলা আবীর তৈরি করুন।
৪. কাঁচা হলুদ সিদ্ধ করে অথবা গুড়ো হলুদ গরম জলে মিশিয়ে প্রাকৃতিক রঙ তৈরি করা যায়। রঙে সুগন্ধি আনতে তাতে তুলসীপাতা, তেজপাতা সেদ্ধ জল মেশান। রঙ তৈরি হলে আলাদা করে সামান্য কর্পূর মিশিয়ে দিন। অন্য ক্ষেত্রেও নানান প্রজাতির তুলসী, তেজপাতা, কর্পূর ব্যবহার করলে সুগন্ধ পাওয়া যাবে।
৫. সবুজ রঙ তৈরি করতে পূর্ণ বিকশিত বেলপাতা শুকিয়ে (ঘরোয়া শিল্প করতে ডেসিকেটরে বেলপাতা শুকাতে হবে) তা গুঁড়ো করে নিন, তা সূক্ষ্ম চালুনিতে ছেঁকে মিশিয়ে দিন ট্যালকম পাউডারে, সবুজ আবীর রেডি!