© শ্রী সূর্য শেখর হালদার
“ What’s in a name that which you call a rose by any other name would smell as sweet. “
( নামে কি আসে যায়? গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তার গন্ধ
সুন্দরই থাকবে। )
শেকসপিয়র তাঁর রোমিও জুলিয়েট নাটকে এই বক্তব্য বলিয়েছিলেন জুলিয়েটকে দিয়ে। জুলিয়েট ক্যাপুলেট বংশের মেয়ে, আর তার ভালোবাসার পাত্র রোমিও হল তাদের শত্রু পক্ষ মন্টেগু বংশের সন্তান। তাই জুলিয়েট এর এই বক্তব্য : মন্টেগু ছাড়া অন্য যে কোন নাম হলেও তো রোমিও সুন্দরই থাকত ! কিন্তু অপরিণত জুলিয়েট বুঝতে পারেনি নামই শেষকালে কত গুরুত্বপূর্ন হয়ে ওঠে। তাই প্রাণ দিতে হয়েছিল তাকে, তার ভালবাসার পাত্র রোমিও ও একই সঙ্গে হারায় প্রাণ।
যাইহোক, আমাদের দেশের স্বাধীনতার পর যখন আমাদের দেশের তৎকালীন বিলিতি শিক্ষায় শিক্ষিত নেতারা আমাদের দেশের নামকরণ করছিলেন, তখন কি পরিণতি বোধ দেখিয়েছিলেন সেটা বিবেচনা করা যেতে পারে।
প্রাচীন কালে আমাদের দেশের নাম ছিল ভারত । এই শব্দটি সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ হল – আলোর সন্ধানে রত ( সংস্কৃত ভা: এর অর্থ আলো , আর রত অর্থ নিয়োজিত) । এই আলো হল জ্ঞানের আলো। সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই আমাদের জাতি জ্ঞানের আলো সন্ধান করছে। পৃথিবীর প্রথম গ্রন্থ ঋগ্বেদের মন্ত্র ঋষিদের কাছে দৃশ্যমান হয়েছে এই ভারতে। এই ভারত ভূমিতে রচিত হয়েছে আদি কাব্য রামায়ণ। শ্রী ভগবান এই ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে অর্জুনকে দিয়েছেন পরম জ্ঞানের আলো, দেখিয়েছেন তাঁর বিশ্বরূপ । তাই স্বাধীনতার পর দেশের নাম কি ভারত হওয়া উচিত ছিল না ?
আসুন, দেখা যাক স্বাধীন দেশের সংবিধানে দেশের নাম কি লেখা হলো? এটি আছে ভারতের সংবিধানের এক নম্বর ধারাতে । এখানে দেশের নাম উল্লিখিত হল এভাবে :
India, that is Bharat, shall be a Union of States.
( ইন্ডিয়া যেটা ভারত , সেটা হবে অনেক রাজ্যের সংযুক্তি তে গঠিত একটি যুক্ত রাজ্য )
অর্থাৎ ভারত নামের আগে চলে এল একটি শব্দ – ইন্ডিয়া । এই ইন্ডিয়া নামের উৎপত্তি নিয়ে অক্সফোর্ড এর অভিধান কি বলছে দেখুন –
Via Latin from Greek India, from Indos, the name of the River Indus, from Persian Hind, from Sanskrit sindhu ‘river’, specifically ‘the Indus’, also ‘the region around the Indus’ (compare with Sindhi). Both the Greeks and the Persians extended the name to include all the country east of the Indus.
এর অর্থ এটাই বোঝায় ইন্ডিয়া আসলে একটি গ্রীক শব্দ যা লাতিন ভাষাতে প্রবেশ করেছে। গ্রীক গণ সংস্কৃত সিন্ধু ( অর্থ সমুদ্র) নদীকে ইন্ডাস বলত, তার থেকেই এসেছে ইন্ডিয়া শব্দ । আর এই বকচ্ছপ মার্কা শব্দ হয়ে গেল আমাদের দেশের প্রথম বা শুভ নাম। ভারত এর মত সুন্দর অর্থ যুক্ত শব্দ দ্বিতীয় নাম।
আজ আপনার যেকোন পরিচয় পত্র যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট দেখুন। সেখানে লেখা আছে আপনি Republic of India এর নাগরিক : ভারতের না। সত্যি কি বিচিত্র এই দেশ ! আর তার থেকেও আরো বিচিত্র এই দেশের এলিট নেতারা যাঁরা বিলিতি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের দেশের সুন্দর নাম বদলে বিদেশিদের দেওয়া নামকে আপন করছেন ! এনাদের উত্তরসুরিরা আজও আছেন। তাঁদের দেখলে ঈশপের গল্পের ময়ূরপুচ্ছ লাগানো দাঁড় কাক এর গল্প মনে পড়ে। আজ আমাদের স্বাধীনতা লাভের পঁচাত্তর বৎসর অতিক্রান্ত। আমরা আগামী দিনে বিদেশী সংস্কৃতি অনুসরণ করব নাকি স্ব বা নিজস্ব সংস্কৃতিকে আঁকড়ে দেশকে বিশ্বগুরু রূপে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করব সেটা ভাবার সময় উপস্থিত।