© শ্রী সূর্য শেখর হালদার
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রকাশিত মাধ্যমিক টেস্ট পেপারে ইতিহাসের একটি প্রশ্ন ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্নটি ছিল প্রদত্ত ভারতের মানচিত্রে আজাদ কাশ্মীর কোথায় অবস্থিত সেটা দেখাতে হবে। এই নিয়ে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। আজাদ কাশ্মীর কি ? কোথা থেকে এল এই শব্দবন্ধ। আমরা জানি যে 1947 সালের 26 অক্টোবরের চুক্তি অনুযায়ী জম্মু কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ , তাহলে আজাদ কাশ্মীর কি ? পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এই বিষয়ে কি বলছে ?
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অধীনস্থ বিদ্যালয়গুলোতে দশম শ্রেণীতে যে পাঠ্য বইগুলি পড়ানো হয় , সেইগুলির অনুমোদন দেয় পর্ষদ নিজেই। নতুন সিলেবাস অনুযায়ী যে সকল ইতিহাস বই বিদ্যালয়গুলিত পাঠ্যপুস্তক হিসাবে বিবেচিত হয় , সেই সকল বইগুলি একটা TB নম্বর প্রাপ্ত হয়। অনুসন্ধান করে দেখা যাচ্ছে যে এইরকম অনেকগুলি TB নম্বর প্রাপ্ত দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইতে আজাদ কাশ্মীর শব্দবন্ধের উল্লেখ রয়েছে। যেমন বাণী সংসদ প্রকাশিত বই ইতিহাস ও পরিবেশ। এই বইয়ের TB নম্বর হল WB TB NO – New Syll – WBBSE/ HISTE (B) / X / 2017 / TO2/ 25; dt 01. 01. 17। এই বইয়ের লেখক হলেন ডক্টর মানস ভট্টাচার্য , প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান , সুধীর রঞ্জন লাহিড়ি মহাবিদ্যালয় , নদীয়া। এই বইয়ের 120 পৃষ্ঠাতে আজাদ কাশ্মীর শব্দটি উল্লেখ রয়েছে।
আরেকটি বই পারুল প্রকাশনীর আধুনিক ভারতের ইতিহাস ও পরিবেশ । এই বইয়ের TB নম্বর হল WB BSE / HISTE ( B) / X / 2017/ T24/ 25 ; dt . 01. 11. 17। এই বইয়ের যুগ্ম লেখক হলেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর অমিত দে এবং হাওড়ার বেলুড় পঞ্চাননতলা মহেন্দ্র বিদ্যাপীঠ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবীর দীর্ঘাঙ্গী। এই বইয়ের 118 পৃষ্ঠাতে একটি মানচিত্রের নীচে আজাদ কাশ্মীর শব্দবন্ধের উল্লেখ রয়েছে। ছায়া প্রকাশনী দ্বারা প্রকাশিত বই ইতিহাস ও পরিবেশ এর 118 নম্বর পৃষ্ঠাতে আজাদ কাশ্মীর শন্ডবন্ধটি উল্লেখ করেছে। এই বইয়ের লেখক হলেন হাওড়ার শোভারানি মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যাপক জি কে পাহাড়ি এবং বাঁকুড়া বিশবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর সুভাষ বিশ্বাস। এই বইয়ের TB নম্বর হল WBBSE/ HISTE ( B) / X/ 2017/ TO5 / 25 dt 01.11.17।
এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণীর টেস্ট পেপার গুলি অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে সেখানেও আজাদ কাশ্মীর শব্দবন্ধ উল্লেখ করে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। যেমন 2018- 19 সালের মাধ্যমিক টেস্ট পেপারের 151 নম্বর পৃষ্ঠা এবং 139 নম্বর পৃষ্ঠায় ইতিহাসের প্রশ্নে দেওয়া হয়েছে আজাদ কাশ্মীর কি ? এই বছরের অর্থাৎ 2022- 23 সালের টেস্ট পেপারের 148 নম্বর পৃষ্ঠাতে অমর ভারত বিদ্যাপীঠের ইতিহাসের প্রশ্নে এবং 172 নম্বর পৃষ্ঠাতে বালুরঘাট খাদিমপুর হাই স্কুলের ইতিহাসের প্রশ্নে দেওয়া হয়েছে ‘ আজাদ কাশ্মীর কি ‘ ।
এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে বিষয়টি বহুদিন ধরেই চলছে। দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ের লেখক, বইয়ের প্রকাশক , পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়ের কতৃপক্ষ ও শিক্ষক – শিক্ষিকাদের সম্মিলিত উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের শিশুমনে আজাদ কাশ্মীর এর ধারণা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি জনমানসে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার আনন্দ বাজার পত্রিকাকে ( 17.01.23) বলেন , ” প্রশ্নে আজাদ কাশ্মীর থাকাটা গ্রহণযোগ্য নয়। ওই বইয়ের সিলেবাস আমরা করলেও এরকম কোন শব্দ নেই। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ওই বইকে অনুমোদন দিলেও প্রকাশকেরও একটা দায়িত্ব থাকে একটা বইয়ের প্রত্যেকটা লাইন দেখা কি সম্ভব? ” । ভেবে দেখুন সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যানের কথা । যে সকল বই পর্ষদের দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে সেগুলিতে কি লেখা আছে সেটা পড়ে দেখার মত মানসিকতা ও সময় পর্ষদের চেয়ারম্যানের নেই। এনারা জানেনই না যে সব বইতে ছোট দের ইতিহাস শেখানো হচ্ছে সেখানে কোন পাতায় কি লেখা আছে ! এনারা কোন যোগ্যতায় তাহলে এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ত্ব পেলেন? আবার টেস্ট পেপারে বিষয়টি নজরে আসতে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বিগত 17 জানুয়ারী 2023 তারিখে একটি ভ্রম সংশোধন মূলক বিজ্ঞপ্তি : মেমো নম্বর : DS ( Aca) / 29/ T/ 79 প্রকাশ করে জানায় টেস্ট পেপারে যেখানে যেখানে আজাদ কাশ্মীর শব্দ বন্ধ আছে , সেখানে সেখানে সেই শব্দকে কাশ্মীর রূপে গণ্য করতে। কিন্তু বই গুলোর ক্ষেত্রে কি হবে ? সে প্রশ্নের উত্তর কি এখনও খুঁজছে পর্ষদ!
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা দফতরের অনেক বড় বড় মাথা এখন কারাগারে বন্দী । আর যাঁরা বাইরে থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা চালাচ্ছেন তাঁরা কি ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন , কি তাঁদের মানসিকতা সেটা এই বিতর্কে পশ্চিমবঙ্গের জনগণের সামনে এসে গেল। এর আগেও এই ধরনের ভুল শিক্ষা দেবার অপচেষ্টা এনারা করেছেন। পর্ষদ দ্বারা প্রকাশিত ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ে লেখা হয়েছে ইংরেজি roaming শব্দ থেকে সংস্কৃত রাম শব্দ এসেছে ! রাম নাকি ভারতে বহিরাগত ! আগামী দিনে এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতরের হস্তক্ষেপ এবং এই ধরনের দেশ বিরোধী কুশিক্ষা দেবার কান্ডারী যে সকল বই প্রকাশক , লেখক , শিক্ষক – শিক্ষিকা এবং পর্ষদের কর্মকর্তা রয়েছেন তাঁদের সকলের শাস্তি দাবি করি।