© শ্রী সূর্য শেখর হালদার
অন্তিম পাংগাল – এই নামটি কতজনের পরিচিত জানা নেই।
সে আমাদেরই দেশের মেয়ে। এক বঞ্চিত হতভাগ্য মেয়ে। এমন এক মেয়ে যাকে আপাতত হেরে যেতে হল ফুটেজখোর এক নাটুকে রাজনীতি আর তার সামনে ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের অসহায় আত্মসমর্পনের কাছে।
ভারতীয় কুস্তির জগৎ কিছুদিন আগেই এক এক ভয়ংকর অভিযোগে আলোড়িত হয়েছিল। একথা আমরা সবাই জানি। অভিযোগ ছিল কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি তথা গোন্ডা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ ব্রিজ ভূষণ সারণ সিংয়ের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ হল মহিলা কুস্তিগীরদের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের অভিযোগ। অভিযোগকারীদের বয়ান অনুযায়ী তিনি বেশ কয়েক বছর আগেই এই কান্ড ঘটিয়েছিলেন। অবশ্যই এইসব অভিযোগ প্রমাণ হয়নি, কিন্তু সেই অভিযোগকে ঘিরে আন্দোলন নামে নতুন দিল্লির রাজপথে। প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের সমর্থন করে যে কোন ঘটনায় ‘মোদী শুড রিজাইন ‘ দাবি তোলা সেক্যুলার বিরোধী দলের নেতারা। গঙ্গায় অলিম্পিক পদক বিসর্জন দেওয়া, সরকারি চাকুরী ছাড়ার নাটক পর্যন্ত হয়। কেন্দ্র সরকার শেষে পরিস্থিতি সামাল দিলেও আজ সামনে আসছে এই আন্দোলনের প্রকৃত উদ্দেশ্য। কি সেই উদ্দেশ্য? আসুন দেখা যাক।
এই আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন যেই সব বিখ্যাত কুস্তিগীর তাঁরা হলেন সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়া, সঙ্গীতা আর ভিনেশ ফোগট। এনারা নিজ নিজ বিভাগে আন্তর্জাতিক পদক জয়ী। কিন্তু ব্যাক্তিগত বিভাগের খেলায় নিয়ম হল যে যতই পদক জয়ী হোক না কেন দেশের হয়ে কোন আন্তর্জাতিক ইভেন্ট যেমন অলিম্পিক গেমস, এশিয়ান গেমস ইত্যাদিতে অংশ নিতে হলে ট্রায়ালে খেলতে হবে। কিন্তু এইসব সিনিয়র কুস্তিগীরদের দাবি ছিল যে তাঁরা ট্রায়াল না খেলেই আসন্ন হ্যাংঝাউ এশিয়ান গেমসে অংশ নেবেন। হ্যাঁ সেই দাবি তাঁদের কয়েকজনের পূরণ হল এবং অবশ্যই নতুন , উঠতি একজন কুস্তিগীরকে বলি দিয়ে। তাঁর নাম অন্তিম পাংগাল। হ্যাঁ তিনিও একজন নারী। এখন কিন্তু মোদী বিরোধী মিডিয়া, সেক্যুলার নারীবাদী, উদারপন্থী – সবাই চুপ। কেউ অবশ্য মিনমিন করে বলতেই পারেন ওনারা পদকজয়ী, তাই ব্যতিক্রমী নিয়মে ওনাদের পাঠানোর ব্যবস্থা আছে। অবশ্যই আছে। কিন্তু সেই নিয়মেই ভিনেশের প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়েটাকেও পাঠানোর কথা ফেডারেশনের। মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই জুনিয়র ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ আর সিনিয়র এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্সশিপে মেডেল আছে ওর। ইনি সিনিয়র ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ এখনও পাননি একটাও, যেমন পাননি কমনওয়েলথ – এশিয়াড – অলিম্পিক। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে কি করবেন সেটা সময়ের সাথে মিলিয়ে নেবেন। সুযোগ – এটাই একমাত্র চাওয়া মেয়েটার কারণ কাল সবাইকে গুঁড়িয়ে দিয়ে একতরফাভাবে ৫৩ কেজি ক্যাটাগরি ( ভিনেশ ফোগোটের বিভাগ ) ট্রায়াল জিতে নিয়েছেন অন্তিম। কিন্তু তবু অন্তিম সামনের এশিয়াডে স্ট্যান্ড বাই খেলোয়াড় , কারণ এই বিভাগে তথাকথিত নির্যাতিতা নাটুকে ভিনেশ ট্রায়ালে না নেমেই সিলেক্টেড! কুস্তি মহলের একজনও এমন নেই যে ৫৩ কেজি মহিলা বিভাগে অন্তিম হারানোর মত কাউকে দেখতে পেয়েছে। হ্যাঁ, অভিনেত্রী ভিনেশকে মাথায় রেখেই বলছে সবাই। সম্প্রতি ট্রায়ালে বাঘা বাঘা কুস্তিগীর, যাঁরা নিয়মিত প্র্যাকটিসে ছিলেন, বিদায় নিয়েছেন জুনিয়র আর উঠতি তারকাদের কাছে। বিদায় নেওয়া তারকাদের মধ্যে আছেন সরিতা মোর, অংশু মালিক প্রমুখ। প্র্যাকটিস না করে এই অবৈধ সুযোগ পাবার জন্য আন্দোলন করা ভিনেশ সম্ভবত উড়েই যেতেন সেখানে।
অবশ্য ভিনেশ উড়েই গেছেন, বিদেশে। সরকারের টাকায় স্পেশাল ট্রেনিং করছেন উনি। ওসব অবশ্য অন্তিমদের কপালে জোটে কম। ভোট হোক বা কুস্তির ট্রায়াল – সিম্পেথির নাটক না করলে যে জেতা যায় না সেটা দিনের আলোর মত স্পষ্ট। দিল্লি থেকে কলকাতা, গোটা দেশে।
ছেলেদের ৬৫ কেজি বিভাগেও একই ঘটনা । সেখানে ট্রায়াল না খেলেই সরকারি খরচে এশিয়ান গেমসে অংশ নিতে চলেছেন বজরং পুনিয়া। সেখানেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সেই সব ভারতীয় কুস্তিগিররা যাঁরা আন্দোলন না করে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করবার জন্য অভ্যাস করেছেন। কিন্তু কুস্তি ফেডারেশন এখন ভিনেশ আর বজরং-এর পক্ষে সওয়াল করছে। দিল্লী হাইকোর্ট হাত তুলে নিয়েছে বিষয়টা থেকে।
অন্তিম ফাংগাল মোটামুটিভাবে সোনার নীচে কিছু নিয়ে ফিরতো না। খুব খারাপ ফল হলে রূপো। এশিয়ান সার্কিটে ওর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এখনও নাম পাঠায় নি গেমসের জন্য। তা ছাড়া অন্তিম উঠতি তারকা, অস্তমান সূর্য নয়।
এশিয়াডে একটা নিশ্চিত মেডেল অনিশ্চিত হয়ে গেল ভারতের জন্য। তার সাথে একটা মেয়ের ভাগ্যও। এমন একটা মেয়ে যাঁকে কুস্তির আখড়ায় ভারতের মেরি কম বলে ডাকা শুরু হয়ে গেছিল ইতিমধ্যেই।
অন্তিম পাংগাল শুধু সুযোগ চেয়েছিলেন। ট্রায়ালে জিতেও আন্দোলন, ফেডারেশন আর কোর্টের কাছে হেরে গেলেন তিনি। হ্যাঁ, এর আগেও একই ঘটনা ঘটেছে। ট্রায়ালে ফর্মে থাকা ভিনেশের সাথে ছোট্ট অন্তিম ৩-৩ ড্র করেছিল ম্যাচ। অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে লবি করে সেবারেও নিজের নাম সিলেক্ট করিয়ে নিয়েছিলেন ভিনেশ।
চিনে রাখুন মেয়েটাকে। অন্তিম পাংগাল। আমাদেরই দেশের মেয়ে। আজ কাঁদতে কাঁদতে কুস্তি ছাড়তে চাইছে ঠিকই। তবে একদিন বিশ্বজয় করবেন তিনি। আপাত অনিশ্চিত ভাগ্য নিয়েই একদিন বিশ্বমঞ্চে দেশের পতাকা ওড়াবে মেয়েটা, সেটাও খুব শিগগিরই। মিলিয়ে নেবেন। আর এই যে বঞ্চনা কেন হল ? জবাব কি দেবেন সেক্যুলার রাজনীতির নেতৃবৃন্দ ? বসবেন যন্তর মন্তরে ধর্নায় ? জবাব চাইবেন সেক্যুলার নারীবাদীগণ ? আজ চুপ কেন বেরিয়ে আসুন গর্ত থেকে , নাহলে বলতে বাধ্য হব ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেই তাঁর পক্ষ আপনারা নেন : আর সেটা নাহলে বৈধ কারণ থাকলেও কোন নারীর পাশে আপনারা দাঁড়ান না ! হ্যাঁ নারীদের বঞ্চনা দুর করা নয় : রাজনীতি আপনাদের প্রধান উদ্দেশ্য। আপনারা দেশের লজ্জা।