Opinion

নাথুরাম গডসে লহ প্রণাম

© স্বরূপ কুমার ধবল

গতকাল 14 ই নভেম্বর সারা ভারতবর্ষের মানুষ সাড়ম্বরে পালন করল শিশু দিবস। আমাদের শ্রদ্ধেয় ভারতবর্ষের প্রথম মনোনীত প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর জন্ম দিবস পালিত হল, যিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা বিপ্লব এবং বিশেষত হিন্দু জাতির জন্য কিছুই করেননি।

কাকতালীয় ভাবে আজ 15 ই নভেম্বর, বুধবার। ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার এই শুভ লগ্নে বাঙালি বোনেরা আজ ব্যস্ত ভাইয়ের মঙ্গলার্থে যমের দুয়ারে কাঁটা দেওয়াতে।

১৯৪৬ সালে নোয়াখালী দাঙ্গার পর সুদূর মহারাষ্ট্র থেকে বোনের ইজ্জত ও প্রাণ রক্ষার্থে ছুটে এসেছিলেন এক ভাই। প্রায় ৫০ হাজারের অধিক পুরুষকে নোয়াখালীতে মুসলিমরা হত্যা করেছিল। গান্ধীজী এই ঘটনায় কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। বরং শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে বলেছিলেন হিন্দু নারীরা যেন নিজ নিজ গ্রামে ফিরে গিয়ে মুসলিমদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে, প্রয়োজনে তাদেরকে বিয়ে করে সুখে ও শান্তিতে বসবাস করেন। নোয়াখালী দাঙ্গায় বিপদগ্রস্ত হিন্দু নারীদের প্রতি এই ছিল আমাদের প্রিয় বাপুজীর পরামর্শ । গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং এ আমাদের জাতির জনক হিন্দু নিধনের মাস্টারমাইন্ড সুরাবর্দীকে সমর্থন জানিয়েছিলেন । গান্ধীজী যদি সেই ভাবে জেদ ধরতেন তাহলে দেশ কখনোই বিভক্ত হতো না। দেশ বিভক্ত হবার পর হিন্দু নর-নারীকে যেভাবে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল গান্ধীজী সেক্ষেত্রে ছিলেন নিশ্চুপ । গান্ধীজীর একতরফা মুসলিম তোষণ মেনে নিতে না পেরে হিন্দুদের রক্ষা করার জন্য যে ভাই সেদিন স্বেচ্ছায় নিজের বলিদান দিয়েছিলেন তাকে কে স্মরণে রাখে ?

এই দিনটির বিশেষত্ব অনেকেই জানি না। 1949 সালের 15 ই নভেম্বরও ছিল বুধবার। আম্বালা জেলে স্বাধীন ভারতবর্ষের দুই দেশপ্রেমিক, হিন্দু জাতির ত্রাণকর্তা নাথুরাম গডসে এবং নারায়ণ আপ্তে’কে সকাল আটটার সময় ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। নিজের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও প্রকাশ্য জনসভায় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী নামক মুসলিম তোষামোদকারী এবং হিন্দু জাতির সর্বনাশ সাধনকারী ব্যক্তিটিকে হত্যা করার অপরাধে তাদের ফাঁসি হয় আজকের দিনে। স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম ফাঁসি। পরাধীন ভারতবর্ষে দেশকে ভালোবাসার জন্য বহু বিপ্লবী ফাঁসির দড়ি স্বেচ্ছায় বরণ করে নিয়েছিলেন, তার ইতিহাস আমরা সকলেই জানি। কিন্তু স্বাধীন ভারতবর্ষে স্বদেশ ও স্বজাতিকে ভালোবাসার জন্য স্বেচ্ছায় ফাঁসির দড়ি বরণ করে নিয়েছেন তার ইতিহাস অনেকেরই অজানা।

বিচারপতি খোসলা অবসর গ্রহণের পর জানিয়েছিলেন, নাথুরাম গডসের জবানবন্দি শোনার পর আদালতের সমস্ত নরনারী অঝোরে কেঁদে ছিলেন, এক অসম্ভব রকম নীরবতা ছিল আদালত কক্ষে। যদি পুনর্বিচারের সুযোগ থাকত কিংবা জনগণের হাতে বিচার করার সুযোগ দেওয়া হতো তাহলে তাদের ফাঁসি হতো না। ফাঁসির আদেশ জারি হবার পর যেকোনো অভিযুক্ত তিনবার ফাঁসি মুকুব করার জন্য আবেদন করতে পারেন, কিন্তু জহরলাল নেহেরুর সরকার এই কেসে আগে থেকেই এক আইন জারি করে সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

ফাঁসির মঞ্চে ওঠার আগে জেলা সমাহর্তা শ্রী নরোত্তম সহগল জানতে চেয়েছিলেন তাদের কাছে কোন স্মারক আছে কি না বা তার অনুমোদন আছে কিনা ? তখন তিনি জানতে পারেন ফাঁসির মঞ্চে ওঠার আগে তারা হাতে করে বয়ে এনেছিলেন একটি করে ভাগবত গীতা, একটি করে অবিভক্ত হিন্দুস্থানের মানচিত্র, আর একখণ্ড গেরুয়া পতাকা। ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে তাদের দুজনের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল-
“অখন্ড ভারত অমর রহে
বন্দে মাতরম্”
তারপরেই এক অপ্রাকৃতিক নিস্তব্ধতা চারিদিকে।

মৃত্যুর আগের দিন অর্থাৎ 14/11/1949 তারিখে নাথুরাম গডসে তার ছোটভাই দত্তাত্রয়’কে একখানি পত্র লিখে জেল কর্তৃপক্ষকে প্রদান করেছিলেন, তাতে লেখা ছিল-

আমার প্রিয় দত্তাত্রয়,
আমার মরদেহ নিয়ে শেষকৃত্য সাধনের দায় তোমাকে দেওয়া হয়েছে – তুমি যে কোন রীতিতে তা করতে পার। কিন্তু আমি এখানে একটা সুনির্দিষ্ট আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে চাই।
সিন্ধুনদের তীরে আমাদের প্রাগৈতিহাসিক ঋষিরা বেদ মন্ত্র রচনা করেছিলেন । তাই সিন্ধু হচ্ছে আমাদের ভারতবর্ষ বা হিন্দুস্থানের ।
স্বাধীন হিন্দুস্থানের পতাকা যখন আবার পবিত্র সিন্ধুনদের তীরে বইবে তখন আমার চিতাভস্ম সেখানে বিসর্জন দিও। সে হবে আমার এক পবিত্র দিন।
আমার এই চিতাভস্ম বিসর্জন দিতে যদি কয়েক পুরুষ অপেক্ষা করতে হয় তাতে কিছুই এসে যাবে না। আমার চিতাভস্ম রক্ষা করো। আর তোমার জীবনকালে যদি সে দিন না আসে তবে পরবর্তী পুরুষের হাতে তুলে দিও সেই চিতাভস্ম, আর তার কাছে বলো আমার এই আকাঙ্ক্ষার কথা। যতদিন আমার আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হয় ততদিন পুরুষানুক্রমে এমনি করে চলো। আর সরকার যখন কোর্টে পেশ করা আমার জবানবন্দির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে, সেদিন তুমি এটা প্রকাশ করো। আমি তোমাকে এ ব্যাপারে প্রতিভূ রেখে গেলাম।
নাথুরাম বিনায়ক গডসে
14/11/1949
আম্বালা জেল

নিজের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও যে নাথুরাম গডসে গান্ধীজিকে হত্যা করেছিলেন কেবল অখন্ড ভারতবর্ষ এবং হিন্দু জাতিকে রক্ষার জন্য, তাঁর প্রতি রইল প্রাণ ভরা ভালোবাসা, গভীর শ্রদ্ধা ও প্রণাম।
অহিংসা পরম ধর্ম:
ধর্ম হিংসা তদৈব চ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Sorry! Content is protected !!