World

প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের রপ্তানি বেড়েছে ২৩০০ শতাংশ, পিছিয়ে পড়ছে চীনও

ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প সুফল দিতে শুরু করেছে। গত এক দশকে বিশেষ করে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম যেমন যুদ্ধ জাহাজ, মিসাইল, যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য সামগ্রীর রপ্তানি বেড়েছে ২৩০০ শতাংশ। অন্য দিকে এশিয়া মহাদেশে প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন দ্রুত পিছিয়ে পড়ছে। এক রিপোর্ট অনুযায়ী, গত এক দশকে চীনের প্রতিরক্ষা রপ্তানি কমেছে ২৫ শতাংশ।

গত এক দশকে নিজের দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে জোর দিয়েছে ভারত। ভারতের একশোর বেশি প্রাইভেট কোম্পানি এখন অস্ত্র এবং অন্যান্য যুদ্ধ সরঞ্জাম উৎপাদন করছে। দাম কম, গুণমান ভালো হওয়ার কারণে বিশ্বের বহু দেশে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অস্ত্র। তাছাড়া, ভারতের দেওয়া কম খরচের প্রযুক্তিগত সহায়তাও বিশ্বের বহু দেশের কাছে এখন লোভনীয়। আর তাই বিশ্বের বহু দেশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি করতে বেছে নিচ্ছে ভারতকে। গত ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারত ১৬০ বিলিয়ন টাকা মূল্যের প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি করেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত বর্তমানে বিশ্বের ৮৫টি দেশে অস্ত্র রপ্তানি করে। সেই তালিকায় যুদ্ধ জাহাজ, মিসাইল, রকেট লঞ্চার, লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের বন্দুক ও রাডার সিস্টেম। উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে এই রপ্তানি বেড়েছে গত এক দশকে। তাঁর আগে প্রতিরক্ষা খাতে বিশ্বে দাপিয়ে বেরিয়েছে চীন ও ইউরোপের দেশগুলি। ভারতের পরিচয় ছিল অস্ত্র আমদানিকারক হিসেবে। কিন্তু গত এক দশকে ভারত অস্ত্র আমদানি কমিয়ে দেশে অস্ত্র উৎপাদনে জোর দেওয়ায় ছবি বদলে গিয়েছে। বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানিতে খরচ ৪৬ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬.৭ শতাংশ।

কিন্তু চীন কেন পিছিয়ে পড়ছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের উৎপাদিত সরঞ্জামের নিম্ন মান এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার নামে বিশাল অর্থ দাবির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বহু দেশ। এমনকি সরঞ্জাম কিনে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বহু দেশ। চীন বর্তমান বিশ্বের ৫৩টি দেশে অস্ত্র এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি করে। এদের মধ্যে মায়ানমারের কথাই ধরা যাক। চার বছর আগে বিশাল পরিমান অর্থ খরচ করে চীন থেকে জিএফ-১৭ যুদ্ধ বিমান কিনেছিলো মায়ানমার। কিন্তু চার বছর পার হতে না হতেই খারাপ হয়ে পড়ে আছে অর্ধেক। মায়ানমারের অভিযোগ, ফায়ারিং করার সময় গণ্ডগোল এবং রাডার সিস্টেমের ত্রুটি রয়েছে। মিসাইল ছুঁড়তে গেলেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে সারানোর জন্য বিপুল অর্থ দাবি করছে চীন।

একই অবস্থা নাইজেরিয়া এবং বাংলাদেশেরও। নাইজেরিয়া এফ-৭ যুদ্ধ বিমান কিনেছিলো। বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বিদ্রোহ দমন করতে সেই সব যুদ্ধ বিমান কিনেছিল নাইজেরিয়া। কিন্তু আকাশে উড়তে উড়তে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ভেঙে পড়েছে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ বিমান। খারাপ অবস্থা রাডার সিস্টেমেরও। অর্ধেক সময় কাজ করে না তা। ফলে সব এফ-৭ যুদ্ধ বিমান চীনে ফেরত পাঠিয়েছে নাইজেরিয়া। চীনে তৈরী ছোট ও মাঝারি মাপের যুদ্ধ জাহাজ কিনেও ঠকেছে নাইজেরিয়া। আর বর্তমানে দেশটি অস্ত্র আমদানির জন্য ভারতকে নির্ভরশীল মনে করছে।

একই অবস্থা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেরও। বাংলাদেশ বিপুল অর্থ খরচ করে বেশ কয়েকটি কে-৮ডব্লিউ(K-8W) যুদ্ধবিমান কিনেছিল। কিন্তু অস্ত্র ও বিস্ফোরক বহন করতেই সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশের। পাকিস্তান বরাবর অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা আমদানির জন্য চীনের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু যুদ্দ জাহাজ ও মিসাইল সিস্টেম কিনে ঠকেছে পাকিস্তানও। চীনের বিক্রি করা এফ-২২পি যুদ্ধ জাহাজের যান্ত্রিক ত্রুটি, হঠাৎ ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে বিরক্ত পাকিস্তান নেভি।

সব মিলিয়ে আগামী দিনে অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হিসাবে বিশ্বের নির্ভরযোগ্য গন্তব্যস্থল হয়ে উঠতে চলেছে ভারত। আর এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে বিগত এক দশকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Sorry! Content is protected !!