Articles

ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধে দলিতদের অবদান

(মূল নিবন্ধটি প্রকাশিত হয় Bharat Voice পোর্টালে গত ৪ঠা জুন, ২০২৩ তারিখে। লেখক: অমিত আগরওয়াল)

অনুবাদ: Roy Chaudhary

সাধারণ জনগণের ভেতর একটি সাধারণ ধারণা হল যে, দলিতরা কখনই হিন্দুদের প্রতি কোন সহানুভূতি দেখাতে পারে না, যারা ১৮৫৭ সালে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং তারা সর্বদা ব্রিটিশদের পক্ষে ছিল। ভীমা কোরেগাঁও ঘটনাটি ১৮১৮ সালের ১লা জানুয়ারী পেশোয়া এবং ব্রিটিশদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে দলিত সৈন্যদের মধ্যে একটি যুদ্ধের একটি প্রধান উদাহরণ। যাইহোক, এই ধরণের ঘটনা খুব কমই ছিল। অনেক দলিত সুন্দরভাবে দেশের জন্য অবদান রেখেছেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছেন, প্রায়শই স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে তাদের জীবনও উৎসর্গ করেছেন। তা সত্ত্বেও, তাদের মধ্যে অনেকেরই অবদান লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়ে গেছে, কিন্তু এখন সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে তাদের অবদানগুলো পুনরায় সম্মানিত হচ্ছে।

এই নিবন্ধটি সেইসব দলিতদের নিয়ে যারা দেশের জন্য নিজেদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন সংক্ষিপ্তভাবে তাদের জীবন নিয়ে আলোচনা করবঃ

মাতাদিন বাল্মীকি: মাতাদিন বাল্মীকি ছিলেন একজন দলিত স্বাধীনতা সংগ্রামী যিনি ১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিদ্রোহের প্রাদুর্ভাবের অব্যবহিত পূর্বের ঘটনাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ব্যারাকপুরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি কার্তুজ উত্পাদন ইউনিটে একজন বাল্মীকি কর্মী ছিলেন যিনি ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের মাধ্যমে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন।

চাকরিতে তাঁর কাজ ছিল মৃত পশুর শরীর থেকে চামড়া তোলার কাজ। উচ্চ বর্ণের লোকেরা এটিকে নিম্ন বর্ণের পেশা হিসাবে বিবেচনা করতেন। মঙ্গল পান্ডে তখন ঐ কোম্পানিতে চাকরিরত একজন সৈনিক। মঙ্গল পান্ডে একদিন মাতাদিনের কাছে জল চেয়েছিল, কিন্তু মাতাদিন দলিত এটা শুনে পান্ডে সেই জল প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। মাতাদিন রেগে গিয়ে বললেন, “ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নিয়ে গর্বিত হচ্ছ, নাহ?, তাহলে গরু-শুয়োরের চর্বি দিয়ে তৈরি কার্তুজ মুখ দিয়ে কীভাবে কামড়াবেন?” এটি হিন্দু ও মুসলমান উভয়কেই জাগ্রত করেছিল এবং এভাবেই প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের আসল ট্রিগার। তবে অন্যরা তাদের যথাযথ স্বীকৃতি পেলেও তিনি অজানা ছিলেন। যাইহোক, দেরীতে হলেও, সরকার এবং জনগণ জাগছে, ইতিহাস জানতে পারছে। মাতাদিনের অবদানকে স্বীকার করছে। ২০১৫ সালে, মিরাটের একটি ক্রসিংকে শহীদ মাতাদিন চক নামকরণ করা হয়েছিল।

ঝালকারিবাই: তিনি মহারাষ্ট্রের কোলি বর্ণের একজন দলিত যোদ্ধা ছিলেন। তিনি রানী লক্ষ্মীবাইয়ের বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন, যিনি স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। দরিদ্র এবং নিরক্ষর হওয়া সত্ত্বেও, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ যোদ্ধা এবং চমৎকার ঘোড়ায় চড়ায় পারদর্শী। রানীর সাথেও তার একটা অদ্ভুত মিল ছিল। তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে, ঝাঁসির রানী তাকে সেনাবাহিনীর মহিলা শাখায় অন্তর্ভুক্ত করেন, যেখানে ঝালকারিবাইকে যুদ্ধের জন্য গুলি চালানো এবং কামান চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।

১৮৫৭ সালে, জেনারেল হিউ রোজ একটি বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে ঝাঁসি আক্রমণ করেন। রানী তাঁর ১৪০০০ সৈন্য নিয়ে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হন। তিনি কালপিতে পেশওয়া নানা সাহেবের সেনা ক্যাম্পিং থেকে ত্রাণের অপেক্ষায় ছিলেন, কিন্তু সেই ত্রাণ আসার আগেই জেনারেল রোজ তান্তিয়া টোপেকে পরাজিত করেছিলেন। এদিকে, দুর্গের একটি ফটকের দায়িত্বে থাকা দুলহাজি ব্রিটিশদের পাশে এসে ঝাঁসির দুর্গের দরজা খুলে দেন। ব্রিটিশরা দুর্গে প্রবেশ করলে লক্ষ্মীবাই তার ছেলে ও পরিচারকদের নিয়ে ভান্ডারি গেট দিয়ে কালপিতে পালিয়ে যান। ঝালকারিবাই, রানীর সাথে তাঁর সাদৃশ্যের সুযোগ নিয়ে, ছদ্মবেশে জেনারেল রোজের শিবিরে রওনা হন এবং নিজেকে রানী ঘোষণা করেন। এই চালাকি ব্রিটিশদের বিভ্রান্ত করে, আর লক্ষ্মীবাই নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট সময় পান।

তাঁর অবদান বর্তমান সময়েই শুধুমাত্র স্বীকার করা হয়েছে। ভূপালের গুরু তেগ বাহাদুর কমপ্লেক্সে ঝালকারি বাইয়ের মূর্তিটি ২০১৭ সালে উন্মোচন করা হয়েছিল। তার স্মরণে, ঝাঁসি দুর্গের ভিতরে পঞ্চমহলে একটি জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছিল। সরকার তাকে চিত্রিত করে একটি পোস্টাল স্ট্যাম্পও জারি করেছে।

উদা দেবী পাসি: তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী যিনি ১৮৫৭ সালের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আওধ”র(Awadh) ষষ্ঠ নবাব ওয়াজিদ আলী শাহের মহিলা দলের সদস্য ছিলেন। তিনি এবং অন্যান্য দলিত মহিলা অংশগ্রহণকারীদের এখন “দলিত বীরাঙ্গনা” হিসাবে স্মরণ করা হয়। হযরত মহলের সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক মক্কা পাসির সাথে তার বিয়ে হয়েছিল।

উদা দেবী সেই জেলার রানী বেগম হযরত মহলের কাছে যুদ্ধে নাম লেখাতে গিয়েছিলেন, যিনি তাকে তার কমান্ডে একটি মহিলা ব্যাটালিয়ন গঠন করতে বলেছিলেন। যুদ্ধে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর, উদা দেবী ১৮৫৭ সালের নভেম্বরে সিকান্দারবাগের যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ভীষণ বুদ্ধিমতী ছিলেন, তিনি একটি পিপল গাছে উঠে লুকিয়ে ছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যরা অগ্রসর হতেই গুলি করতে শুরু করেন এবং অনেক ব্রিটিশকে হত্যা করেন। যদিও পরে তাকে হত্যা করা হয়। পিলিভীতের পাসিরা (The Pasis of Pilibhit ) তার বলিদানের বার্ষিকী স্মরণে ১৬ নভেম্বর দিনটি উদযাপন করে।

বাঁকে চামারঃ বাঁকে চামার (Banke Chamar ) উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরের বাসিন্দা। বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর, চামার এবং তার ১৮ জন সহযোগীকে ‘বাগী’(বিদ্রোহী) ঘোষণা করা হয়। গ্রেপ্তারের পর চামারকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।

বাঁকে চামার ছিলেন ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী, যিনি জৌনপুর থেকে বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যুদ্ধের ব্যর্থতার পর, ব্রিটিশরা তার মাথার জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার ৫০,০০০ টাকা ঘোষণা করে, সে সময় দুটি গরুর দাম ছিল মাত্র ৬ পয়সা।

কিন্তু একজন ভারতীয় বিশ্বাসঘাতক রমাশঙ্কর তিওয়ারি(একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সৈনিক) তাকে ধরিয়ে দেন। সেই বিশ্বাসঘাতক রমাশঙ্কর ব্রিটিশদেরকে বাঁকে চামার ও তার সহকর্মীদের অবস্থান সম্পর্কে জানিয়ে দেন। তাই বৃটিশরা তাদের ধরতে সৈন্য পাঠালে বাঁকে চামার অনেক ব্রিটিশ সৈন্যকে হত্যা করলেও শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশরা তাদের বন্দী করে। পরে তাকে এবং তাদের ১৮ জন সহযোদ্ধাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

চেতরাম জাটাভ এবং বল্লুরাম মেহতার: যুদ্ধের সময়, উভয়ই অন্যান্য বিপ্লবীদের সাথে রাস্তায় নেমেছিলেন এবং উত্তর প্রদেশের এটাওয়াতে(Etah of UP) ব্রিটিশদের আক্রমণ করেছিলেন। সদাশিব মেহরে এবং চতুর্ভুজ বৈশ্যও এই সংগ্রামে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে কোনো সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয় ছাড়াই যুদ্ধ ব্যর্থ হয়। তাদের গ্রেফতার করা হয়, গাছে ঝুলিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনা ইতিহাসের একটি বিস্মৃত অধ্যায় হয়ে রয়ে গেছে।

ভিরা পাসি: তিনি উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলির রাজা বেনি মাধব সিংয়ের নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য রাজাকে গ্রেফতার করা হয়। এক রাতে, ভিরা পাসি কারাগারে প্রবেশ করে এবং রাজাকে পালাতে সাহায্য করে। ব্রিটিশরা তখন বীর পাসিকে বন্দী করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার মাথার দাম হিসেবে ৫০,০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। তবে তাঁরা তাকে ধরতে পারেনি।

পুতালিমায়া দেবী: তিনি ছিলেন একজন গোর্খা আদিবাসী মহিলা, ১৯২০ সালে দার্জিলিংয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ন্যায়বিচারের জন্য লড়াইয়ের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর বাবার আপত্তি সত্ত্বেও, ১৯৩৬ সালে তার গ্রামে কংগ্রেসের অফিস স্থাপিত হলে তিনি নাম নথিভুক্ত করেন। বিভিন্ন বাধা সত্বেও তাঁর সংগ্রাম এবং সক্রিয়তা সেখানেই থামেনি, কারণ তিনি হরিজন সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা দলিতদের শিক্ষা লাভের জন্য সংগঠিত করার কাজ করছিল। তিনি একটি মহিলা সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা যুবতীদের দেশপ্রেমিক এবং জাতীয়তাবাদী হয়ে ওঠার প্রেরণা দিত। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়, তিনি একটি বিশাল জনসভা সংগঠিত করেছিলেন, যার ফলে ব্রিটিশ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল।

পুতালিমায়া দেবী ভারতের স্বাধীনতার পরেও সমাজ সেবিকা হিসেবে তার সক্রিয়তা অব্যাহত রেখেছিলেন। তৎকালীন ভারত সরকার তাকে “স্বতন্ত্র সেনানী” এবং “তাম্রপত্র” উপাধি দিয়েছিল। লোকেরা তাকে শ্রদ্ধায় “মাতাজি” বলে ডাকত, কারণ তিনি ১৯৮৪ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেবাকাজ এবং সমাজের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন এবং কর্সিয়াং মহকুমা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি এবং দার্জিলিং জেলা কমিটির সহ-সভাপতি হিসাবে কাজ করেছিলেন।

হেলেন লেপচা ওরফে সাবিত্রী দেবী: হেলেন লেপচা ১৯০২ সালে সিকিমে জন্মগ্রহণ করেন। পরে সিকিম থেকে এসে দার্জিলিংয়ে বসবাস করতে থাকেন। শীঘ্রই তিনি গান্ধীজির ডাকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। গান্ধীজির ডাকা স্বদেশী আন্দোলন তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তাঁর আশেপাশের গ্রামে মানুষদের স্বদেশী জিনিস কেনা এবং বিদেশি জিনিস ত্যাগ করার পাশাপাশি চরখা চালিয়ে দেশী বস্ত্র বানানোর জন্য জোরদার প্রচার শুরু করেন। এছাড়াও, সমাজের পিছিয়ে পড়া, দরিদ্র মানুষদের জন্যও সেবা কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। ১৯২০ সালে বিহারে বিশাল বন্যা হয়। সেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সেবায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন হেলেন লেপচা। সেই সময় তাঁর সেবা কাজ স্বয়ং গান্ধীজিকে মুগ্ধ করেছিল। গান্ধীজি তাকে সবরমতী আশ্রমে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। সেবা কাজে মুগ্ধ গান্ধীজি হেলেনের নাম দেন “সাবিত্রী দেবী”।

সরোজিনী নাইডু এবং জওহরলাল নেহরুর মতো নেতাদের সাথে তার দৃঢ় সম্পর্ক ছিল এবং স্বাধীনতার জন্য তাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন। তিনি অসহযোগ আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং বিদেশী পণ্যের বিরুদ্ধে দ্বারে দ্বারে অভিযান পরিচালনা করেন, যার জন্য ব্রিটিশরা পরে তাকে বন্দী করে। একজন উপজাতীয় হওয়ায় তিনি উপজাতীয় চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখতেন। তিনি পরে শেরপা অ্যাসোসিয়েশন এবং অন্যান্য উপজাতি সংগঠনের মতো কার্সিয়ং-এর বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপারসন হন।

এই সমস্ত যোদ্ধারা নিপীড়নমূলক বর্ণ কাঠামোর ভেতর জন্ম নিয়েও পাশাপাশি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। জাতপাত ও বর্ণবাদের ঊর্ধ্বে উঠে তারা প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রশংসনীয় কাজ করেছিলেন।

তাদের সংগ্রাম, সেইসাথে তাদের সাহসিকতার মুহূর্তগুলি অবশ্যই আমাদের জানা উচিত। আলোচনা, বই এবং মিডিয়ার মাধ্যমে এসব মানুষদের বীরগাথা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে জানাতে হবে। তবেই ভারত তার প্রান্তিক মানুষের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে পারবে।

( CLICK HERE to read the original Story)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Sorry! Content is protected !!