বিজেপির মুসলিম তোষণ ও পসমন্দা মুসলিমদের পা চাঁটা

© অমিত মালী

হঠাৎ করেই তথাকথিত হিন্দুর স্বার্থ রক্ষাকারী পার্টি হিসেবে পরিচিত বিজেপির মুসলিম প্রেম একটি অতিরিক্ত জেগে উঠেছে। যাদের জন্য এই প্রেম জেগে উঠেছে, তাঁরা আবার বিজেপিকে মুসলিম বিরোধী দল হিসেবেই মনে করে। তবুও ‘পসমন্দা’ মুসলিমদের জন্য বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে স্বয়ং ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ নরেন্দ্র মোদীর চিন্তার অন্ত নেই। তাদের উন্নতির জন্য, বিকাশের জন্য সবরকম পদক্ষেপ নিতে পিছপা হচ্ছেনা বিজেপি।

তবে বাংলায় একটা কথা আছে; ‘খেতে দিলে শুতে চায়’। বিজেপির প্রেম ও ভালোবাসা পেয়ে পসমন্দা মুসলিমদের অবস্থা সেই একই। বিজেপির প্রেম পেয়ে পসমন্দা মুসলিমরা একের পর এক দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের দাবি জানালেও এখন সেখান থেকে এগিয়ে SC কোটায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দাবি জানাতে শুরু করেছেন তাঁরা। 

এখানে বলে রাখা ভালো গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের জুলাই মাসে স্বয়ং হিন্দু হৃদয় সম্রাট নরেন্দ্র মোদী পসমন্দা মুসলিমদের বিকাশের কথা বলেছিলেন। তারপরই বিজেপির ওবিসি মোর্চা লখনৌ শহরে পসমন্দা মুসলিমদের সম্মেলনের আয়োজন করে। সেই সম্মেলন থেকে আওয়াজ ওঠে যে পসমন্দা মুসলিমরা পিছিয়ে আছে। তাদের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নতির জন্য সরকার পদক্ষেপ নিক। পদক্ষেপের মধ্যে সংরক্ষণ দেওয়ার দাবি সবচেয়ে জোরালোভাবে শোনা গিয়েছিল। 

সেই সময় এই ঘটনা নিয়ে বিজেপির অন্ধ ভক্তরা ভোট ব্যাংকের অঙ্ক শুনিয়েছিলেন। তাদের কথায় উত্তর প্রদেশ ও বিহার নির্বাচনে এই শ্রেণীর মুসলিমরা একটা বড় ফ্যাক্টর। তাই তাদের ভোট পেতে গেলে মন পাওয়া জরুরি। তাই তাদের কাছে টানতে এমন পদক্ষেপ। তাছাড়া বিজেপির মন্ত্র হলো ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ হলো বিজেপির মন্ত্র। তাই এতে দোষের কিছু নেই।

কিন্তু অতীত পর্যালোচনা করলে এটা অদ্ভুত মনে হয় যে পসমন্দা মুসলিমদের জন্য হিন্দুদের ভোটে জয়লাভ করা বিজেপিকে কেনো উদ্যোগ নিতে হবে। পসমন্দা মুসলিমদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া পসমন্দা মুসলিম মানহাজ’-এর সভাপতি হলেন আলী আনোয়ার। তিনি জেডি-ইউ দলের সমর্থনে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন। তাছাড়া পসমন্দা মুসলিমরা বরাবরই বিজেপি বিরোধী দলগুলোর সমর্থক। অতীতে নির্বাচনে দেখা গিয়েছে কোনও বিধানসভা কিংবা লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী যে প্রার্থী শক্তিশালী, তাকেই ঢেলে ভোট দিয়েছেন তাঁরা। ওই রাজ্যগুলিতে বিজেপি বিরোধী দলগুলো সরকারেও ছিল দীর্ঘদিন। সে সময়ে পসমন্দা মুসলিমদের জন্য কেনো বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠবে।

তবে ইতিমধ্যেই পসমন্দা মুসলিমরা নানা দাবি জানাতে শুরু করেছেন। ওবিসি কোটায় অন্তর্ভুক্তির দাবি তুলতে শুরু করেছেন একদল পসমন্দা মুসলিম। আর একদল পসমন্দা মুসলিম আবার SC কোটায় সংরক্ষণ দেওয়ার দাবি তুলছেন। পুরো খেতে দিলে শুতে চাওয়ার মতো কেস। আর যদি ভোটের কথা ভেবে সংরক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে চায় বিজেপি, তবে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আর আগামীদিনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার তা করে কিনা, সেটাই দেখার।

তবে একটা কথা না বললেই নয়। যে হিন্দু কোনওদিন বিজেপিকে ভোট দেয়না, সেও বিশ্বাস করে যে বিজেপি হিন্দুর স্বার্থ রক্ষাকারী দল। আর সাধারণ হিন্দুর এই মানসিকতার সুযোগ নিয়েছে বিজেপি। হিন্দু ভোটকে ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ ভেবে মুসলিম ভোট পেতে তোষণ শুরু করেছে বিজেপি। মাদ্রাসার আধুনিকীকরণ করা, এক হাতে কম্পিউটার, এক হাতে কোরআন, সাচার কমিটির রিপোর্ট-এর বেশিরভাগ লাগু করা, CAA নিয়ে নীরবতা, কাশ্মীরে হিন্দু পণ্ডিতদের হত্যা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসা, ইসলামিক মৌলবাদের বিরুদ্ধে মুখ না খোলা বিজেপির নির্লজ্জ মুসলিম তোষণেরই লক্ষণ। আপনি মানতে পারেন কিংবা নাও মানতে পারেন। এটাই বাস্তব। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Sorry! Content is protected !!