২০০৮ সালের ২৩শে আগস্ট ওড়িশার কন্ধমাল জেলার চকপাড়া গ্রামের জালেশপাতা আশ্রমে নৃশংসভাবে খুন হন স্বামী লক্ষনানন্দ সরস্বতী মহারাজ(৮২)। সেই সঙ্গে আশ্রমের আরও ৪ কোন সন্ন্যাসীও খুন হন। সেই সময় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন নবীন পট্টনায়েক।
খুনের কারণ হিসেবে প্রথম থেকেই খ্রিস্টান মিশনারীদের যোগ সামনে আসে। পরে খুনের তদন্তের জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করেছিল ওড়িশা সরকার। সেই তদন্তে স্পষ্ট হয় মাওবাদী-খ্রিস্টান মিশনারী যোগ। খ্রিস্টান মিশনারী সংস্থা ‛World Vision’-এর কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। তদন্তে এও পরিষ্কার হয় যে স্বামীজিকে খুন করতে খ্রিস্টান মিশনারী সংস্থা প্রচুর অর্থ দিয়েছিল মাওবাদীদের।
স্বামী লক্ষনানন্দ সরস্বতী আদিবাসী কল্যানে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কন্ধমাল জেলায় আশ্রমের মধ্যেই আদিবাসী শিশুদের জন্য গড়ে তুলেছিলেন আবাসিক স্কুল। বিপদে-আপদে ছুটে আসা দরিদ্র আদিবাসীদের কোনোদিন ফিরিয়ে দিতেন না তিনি। এছাড়াও, মিশনারীদের প্রভাবে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত আদিবাসীদের স্বধর্মে ফিরিয়ে আনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। আদিবাসীরা রীতিমতো ভগবান হিসেবে মান্য করতো তাকে।
কিন্তু তিনি খ্রিস্টান মিশনারীদের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন। কারণ লক্ষনানন্দ সরস্বতীর কারণে ধর্মান্তরণ কাজ বাধা পাচ্ছিলো। পরিকল্পনা হয় লক্ষনানন্দ সরস্বতীকে খুন করার। মোট ৮ বার হামলা হয় তাঁর ওপর। কয়েকবার আহত হলেও বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। একাধিকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন নিরাপত্তা চেয়ে। কিন্তু ওড়িশা সরকার ওই সাধুর নিরাপত্তায় ৪ জন লাঠিধারী পুলিশ মোতায়েন করেছিল।
ঘটনার দিন অর্থাৎ ২০০৮ সালের ২৩ শে আগস্ট রাত্রি ৮টা নাগাদ আশ্রমে হানা দেয় সশস্ত্র মাওবাদীদের একটি দল। সেই সময় মন্দিরে পূজা করছিলেন স্বামীজী ও তাঁর সঙ্গীরা। এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় তাদের।
লক্ষনানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে ছুটে আসেন আদিবাসীরা। পরের দিন স্বামীজীর মৃতদেহ নিয়ে শুরু হয় মিছিল। আর তা থেকেই ছড়িয়ে পড়ে দাঙ্গা। স্বামীজীর খুনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ আদিবাসীরা হামলা চালান খ্রিস্টানদের ওপর। তথ্য অনুযায়ী, বহু বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। হামলা করা হয় চার্চেও।
সেদিন ধর্ম রক্ষায় প্রাণ বলিদান দিয়েছিলেন স্বামীজী।লক্ষনানন্দ সরস্বতী মহারাজ। তার চরণে রইলো আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।