© পবিত্র রায়
কৃষক বিদ্রোহের প্রায় তিন সপ্তাহ পার হলো।কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের দাবি মেনে।আইনের অনেক কিছুই সংশোধনী আনতে চলেছে।তা সত্ত্বেও আন্দোলন থামার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।ইতিমধ্যে পাঞ্জাবের কৃষকরা শারজিল ইমাম, উমর খালিদ,গৌতম নভলাখা সহ দেশদ্রোহের অভিযোগে জেলবন্দিদের মুক্তির দাবি তুলেছে।অন্য আরও একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে যে পাঞ্জাবে ফসল ঘরে তোলার পর পড়ে থাকা বাকি অংশ আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার নৈতিক অধিকারের আইন তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে।অর্থাৎ পরিবেশ দূষণ হোক বা পরিবেশের যত ক্ষতিই হোক না কেন,কৃষকদের সুবিধার নাম করে সেইসব অন্যায় কাজ করার অধিকার তাঁদের দিতে হবে। প্রথম কথাই হলো,যারা মার্সিডিজ গাড়ি চেপে এসে মদের দোকান থেকে দামি বিদেশি মদ কিনে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হয়েছে,এঁরা কারা ? এঁরা কি কৃষক, না’কি পাঞ্জাবি জোতদার ? আর যদি সত্যিই এঁরা কৃষক হয়ে থাকে,তাহলে মানতেই হয় মোদির শাসনামলে ভারতের কৃষকরা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গিয়েছে।সারা পৃথিবীর উন্নত দেশের কৃষকরাও বোধকরি পাঞ্জাবের কৃষকদের চাইতে উন্নতি করতে সক্ষম হয়নি।আর এই কৃষিবিল যদি সত্যিই কৃষক বিরোধী হয়ে থাকে,তাহলে দেশের বাকি অংশের কৃষকরা কোথায়? বিক্ষোভে সামিল হতে দেখা যাচ্ছে শুধুই পাঞ্জাবি জোতদারদের ! তাহলে কি আমরা ভাবব যে এই আন্দোলন শুধুমাত্র পাঞ্জাবি জোতদারদের অধিক সুবিধা পাওয়ার জন্য ? শুধুই কি পাঞ্জাবি কৃষকরাই বুদ্ধিমান যে তাঁরাই কৃষিবিলের কৃষক বিরোধিতা ধরে ফেলেছে? আর বাকি সব রাজ্যের কৃষকরা বোকা ? বাকি ভারতের কৃষকরা এই আন্দোলন সমর্থন না করায় ধরে নেওয়া যেতে পারে এই আন্দোলন শুধু পাঞ্জাবি কৃষকদের একাংশের মাত্র।
ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে পিতা জওহরলাল নেহরুর অনুকরণে দেশের প্রতি বেশ দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতি করে গিয়েছেন।মুসলমান ও কাশ্মীরের জন্য আলাদা আইন করে,চিনের সাথে বন্ধুত্বের বাহানায় অরুণাচলের ও আকসাই চিনের জমিদান-আরও বহু দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতি করেছেন নেহরু।আর ইন্দিরা ? ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে পাঞ্জাবের ভিন্দ্রানওয়ালেকে মদত দিয়ে মাথায় তুলে পরে খুন করলেন,নিজেও খুন হলেন।খালিস্তানি আন্দোলন পাঞ্জাবের কত নিরীহ মানুষের প্রাণ নিল, সে হিসেব কে’ই বা আর রাখে ! সরকারী প্রচেষ্টায় বর্তমানে খালিস্তানিদের আন্দোলন স্তিমিত তথা শেষ দেখা গেলেও সেটা খুব সম্ভবতঃ শেষ হয়নি। জঙ্গল থেকে বাঘ তুলে আনা গেলেও বাঘের মন থেকে জঙ্গল তোলা যায় না-ঠিক তেমনই পাঞ্জাবের একটি দেশ বিরোধী জনতার মন থেকে খালিস্তান নামক শব্দটা তুলে ফেলা যায়নি,সেটি মনে করিয়ে দিল এই আত্মঘাতী কৃষক আন্দোলন। স্বর্ণ মন্দির অভিযানের পর শিখ বাহিনীর একটা অংশ বিদ্রোহ করেছিল।বর্তমানে জানা যাচ্ছে,ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার জন্য ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্স’ ও ‘বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল’ এর ১৬ জন নেতা নাগাড়ে শিখ জওয়ানদের উস্কানি দিয়ে চলেছে।অর্থাৎ মহামতি ইন্দিরা সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের কত বড় ক্ষতি করে গিয়েছে,সে কথা ভাবতেই শিউরে উঠতে হচ্ছে। তার সাথে সংবিধানে ‘সেকুলার’ জুড়ে দেওয়া! আহা, কি মহীয়সী ছিলেন ইন্দিরা !
পাঞ্জাবের এই কৃষক আন্দোলনের নেপথ্য চিত্রটা একটু অন্যভাবে দেখা যায় না কি। গমের ফলনে পাঞ্জাব সেরা,একথা আমরা সবাই জানি। এত গম যায় কোথায়? পাঞ্জাব সরকার মান্ডি থেকে চড়া দামে এই গম ক্রয় করে এফ সি আই’ এর গুদাম ভর্তি করে রাখে। তবে এই গুদাম থেকে কিন্তু সমস্ত গমের মুক্তি মেলেনা। একটা বড় অংশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট হলেও মুক্তি নেই।গুদাম সাফ করার নামে সেই গম চলে যায় লিকার কোম্পানীর কাছে। পাঞ্জাবের এতবড় আন্দোলন চলেছে খালিস্তানের নামে, আমরা কিন্তু কোনদিন বেশ কিছু আগ্রো, লিকার কোম্পানি উপর আক্রমণ নেমে আসতে দেখিনি। আশা করা যায় পাঞ্জাবের বেশ কিছু রাজনীতিক, লিকার কোম্পানি, আগ্রো প্রভৃতিরা এই আন্দোলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এরাই হয়ত দেশের মধ্যে থেকে খালিস্তানিদের অর্থের উৎস ও মদতদাতা।এরা দেখতে পাচ্ছে এই আইন কার্যকর হলে,কৃষকরা মান্ডির বাইরে ফসল বেঁচতে আরম্ভ করলে এদের উপার্জনের মূলে আঘাত পড়বে। খালিস্তানিদের অর্থের যোগানেও খামতি এসে যাবে। আর তাই খালিস্তানীরা ভারতীয় বাহিনীর শিখ জওয়ানদের উস্কানি দিচ্ছে বিদ্রোহ করার জন্য। আর একেই বলে আত্মঘাতী দর্শন।এই মূর্খদের দল জানে না, শিখ জওয়ানদের বিদ্রোহ ও ইন্দিরা হত্যার পর ভারতীয় বাহিনী ভবিষ্যতের আশঙ্কার কারণে বাহিনীতে বহু পূর্বেই নিয়ন্ত্রণ জারি রেখেছে, শিখ জওয়ানদের আর একাধিপত্য নেই। এই উস্কানির ফলে শিখদের ধরাবাঁধা সৈনিকের চাকরির ক্ষেত্রটাও সঙ্কুচিত হয়ে উঠবে বলেই ধারণা করা যায়।
শোনা যাচ্ছে বামপন্থীরা না’কি কৃষক আন্দোলনে গোপণে প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। প্রশ্ন হলো,হঠাৎ করে এতদিন বাদ আন্দোলনে গোপণে প্রতিনিধি পাঠান কেন ? এই আন্দোলনকে সমর্থন দিতে? না’কি এই আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যে টেনে আনা যায় কি’না,সেটা দেখতে ? মনে রাখা দরকার এই কৃষক আন্দোলন কিন্তু কৃষকদের সর্বনাশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তার সাথে আরও একটা কথা মনে রাখলে বামপন্থীরা ভাল করবেন। কথাটা হলো, পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু মার্সিডিজ গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করা কৃষক নেই। অযথা নর্তন কুর্দন করে পোড়া মুখে আর কালি লেপন না করাই বোধহয় যুক্তি সঙ্গত।
ধরা যাক কৃষি বিলের বিপরীতে পাঞ্জাবের কৃষকরা যেটা দাবি করছে, সেটা মেনে নেওয়া হল। আন্দোলন বাদ দিয়ে এই সঘোষিত কৃষকরা সাধারণ জীবনে ফিরে যাবে কি ? সাধারণ জীবনে হঠাৎ করে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু খুবই কম। কারণ অনেক গুলো দাবি মানার পরও দেখা গিয়েছে নতুন করে ফসলের অবশিষ্টাংশ জ্বালিয়ে পরিবেশ দূষণের অধিকার চাইছে।এটা দেওয়া সম্ভব কি? পরিবেশ রক্ষার আইনকে পাল্টাতে হবে শুধু খালিস্তানিদের মর্জি মাফিক।খালিস্তানি বলার কারণ হলো পাঞ্জাবের প্রকৃত কৃষকরা এই আন্দোলনে আসেনি-এসেছে খালিস্তানিদের মদতদাতা জোতদাররা।এই আন্দোলনকারীরা আরও এক দাবি তুলেছে । শারজিল ইমাম, উমর খালিদ,গৌতম নভলাখাদের মুক্তি দিতে হবে। এই দাবিতে কৃষকদের কোন্ উপকার হবে ? এই দাবি কৃষকদের মুখ থেকে বেরোনোর পর কিন্তু আন্দদোলন আর কৃষকদের আন্দোলন বলে ধরা যাচ্ছে না। সম্পূর্ণ এক রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে দেশ বিরোধীতায় নেমেছে পাঞ্জাবের কৃষকরা বলে মানতে হয়।অথবা বলতে হয়, পাঞ্জাবের এই জোতদার শ্রেণী বিদেশি ভারত বিরোধী শক্তির ক্রীড়নক হয়ে খেলছে।সুতরাং এই জোতদারদের সমস্ত দাবি মানলেও ওরা খুশি হবে না,বরং নিত্য নতুন দেশ বিরোধী দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে কানাডা, ব্রিটেন,পাকিস্তান,চিন প্রভৃতি দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করা খেলা চালিয়ে যাবে।
মুক্তি কীভাবে মিলতে পারে ? আজ কৃষকদের সামনে রেখে ভারতকে অপদস্থ করে চলেছে আমাদের কিছু বৈরী দেশ। এই কিছুদিন আগেও সি এ এ’এর বিরুদ্ধে দিল্লিতে চলেছিল দীর্ঘ এক অবস্থান বিক্ষোভ- আবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও ঘটে গিয়েছে। এবারও কি তেমন একটা দাঙ্গা ঘটানোর প্রচেষ্টা চলবে ? ভারত সরকারের গোয়েন্দা দফতর কী করছে তাদের হাতে কি কোনও তথ্য নেই ? ‘যে জাতি ইতিহাস ও ভূগোল বিস্মৃত হয়,সে জাতির ধ্বংস ত্বরাণ্বিত হয়’ কথা মেনে প্রশ্ন তুলছি,আমরা কি আমাদের তথা বিশ্বের ইতিহাস ভুলতে বসেছি ?না হলে এতদিন কোন্ অধিকারে আহমদ শা আবদালীকে শিখ নিধনে মদত দেওয়া ‘আলা সিং’য়ের পরবর্তী পুরুষ ক্যাপ্টেন অমরিন্দার সিং আবার দেশের শত্রুদের সাহায্য করে চলেছে? কেন্দ্রীয় সরকার কেন চিহ্নিত করছে না ভারত বিরোধী ভারতীয় বেইমানদের? মনে রাখা দরকার, ইসরাইল আগ্রাসী বলে নিজের দেশে বিশ্বাসঘাতক তৈরি হয় না।মিশাইল স্কোয়াড গঠন করে খালিস্তানি আন্দোলন শেষ করে দেওয়া হয়েছিল।সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় শুধু খুন করেই নকশাল আন্দোলন দুমড়ে দিয়েছিলেন।মিউনিখ অলিম্পিকে ইসরাইলি অ্যাথলিটদের খুন করা প্রত্যেক আরব সন্ত্রাসবাদীকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে খুন করে প্রতিশোধ নিয়েছিল মোসাদ। আমার প্রশ্ন হলো,শিখ সন্ত্রাসবাদী নেতাগণ এখনও বিদেশে বসবাস করতে পারছে কেন ? ভারত সরকার এই খালিস্তান সমর্থকদের বিরুদ্ধে এখনই কড়া অবস্থান গ্রহণ করুক।এদের যেমন অমরিন্দার ও অন্যান্য নেতারা উস্কানি দিচ্ছে, বাকি ভারতের কৃষকদের স্বার্থ দেখিয়ে এই বিক্ষোভরত কৃষকদের উপর ক্ষেপিয়ে দেওয়া হোক। আর ৫৮ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তে গতি এনে অমরিন্দার সিং’কে দেশদ্রোহীতার ফল কেমন হতে পারে,ভাল করে বুঝিয়ে দেওয়া হোক।এখনই সময় – না হলো এই বিশ্বাসঘাতকের দল আমাদের জাতীয়তাবাদ শেষ করে দেবে।