© শ্রী নিত্যানন্দ দাস
ডায়বেটিস কথাটি গ্রিক ভাষা থেকে নেওয়া হয়েছে। মেটিলাস কথাটি ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ হলো ‛মধু’। ডায়বেটিস মেটিলাসের অর্থ হলো শরীর থেকে গ্লুকোজ নিঃশেষিত হওয়া। এটি এমন একটি রোগ যাতে রক্তে শর্করার পরিমান স্বাভাবিকের থেকেওনেক বেশি বেড়ে যায়। তাছাড়া, এই রোগের ক্ষেত্রে শরীর যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে পারেনা। ইনসুলিন হলো রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণকারী প্যানক্রিয়াসের দ্বারা উৎপন্ন হরমোন। এই হলো রক্তে শর্করা সৃষ্টি হওয়ার কারণ।
পৃথিবীব্যাপী ২৩০ মিলিয়ন মানুষ ডায়বেটিসের শিকার। এর মধ্যে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ মিলিয়ন। গবেষকরা ভবিষ্যৎবাণী করেছেন যে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুন হবে। ভারত পৃথিবীতে ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে। অনেকেই জানেন না যে তাঁর ডায়বেটিস আছে কিনা। এমনকি ডায়বেটিস চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা প্রায়শই ভুল করে থাকেন। তৃষ্ণা অনুভব করা, স্বাস-প্রশ্বাসের গন্ডগোল, দাঁতের মাড়ির রোগ ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ। এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মধুমেহ রোগীর অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ২৫ গুন। কিডনির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ১৭ গুন, হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৪ গুন এবং স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুন।
ইনসুলিনের ভূমিকা বা গুরুত্ব
মধুমেহ রোগটি সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে খাদ্য ও পুষ্টির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে হবে। খাদ্যের যখন পরিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তখন শর্করা অর্থাৎ গ্লুকোজ রক্তপ্রবাহের সঙ্গে মিশে যায়। গ্লুকোজ শরীরের জ্বালানির উৎস হিসেবে কাজ করে। ইনসুলিনের কাজ হলো গ্লুকোজকে রক্তপ্রবাহ থেকে পেশিতে নিয়ে যাওয়া, ফ্যাট এবং লিভার সেলে নিয়ে আসা, যেখানে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হবে। ইনসুলিনের অনুপস্থিতিতে গ্লুকোজ স্থানান্তরিত হতে পারে না, কোষের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। রক্তের বর্ধিত শর্করা কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের মধ্য দিয়ে নির্গত হয়।
মধুমেহ রোগের প্রকারভেদ
মধুমেহ রোগের প্রথম টাইপ যা প্যানক্রিয়াসের বিটা-সেল নষ্ট হয়ে গেলে সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে রোগের শৈশব পবস্থায় রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রত্যেকদিন ইনসুলিন ইনজেকশন প্রয়োজন।
দ্বিতীয় টাইপের ডায়বেটিস অতি সাধারন, যা বয়সের পরিণতির সঙ্গে সঙ্গে ঘটে থাকে। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে আমাদের লাইফ স্টাইলের ওপর। শতকরা নব্বই শতাংশ মানুষ এই দ্বিতীয় টাইপের ডায়বেটিস রোগের শিকার। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে রোগের উৎপত্তি।