© সূর্য শেখর হালদার
১৭. উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে দলিত তরুণকে পিটিয়ে হত্যা :-
2018 সালের 31 জানুয়ারি অমিত কুমার গৌতম নামক 27 বছর বয়সী এক যুবকের গাধী কান্ডারী নামক এলাকাতে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়। এলাকাটিতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বাস এবং এলাকাটি উত্তরপ্রদেশের হাথরাসের এর অন্তর্গত । ওই তরুণের ক্ষতবিক্ষত দেহটি একটি মসজিদের নিকট থেকে উদ্ধার করা হয়। সূত্রের খবর একটি মোটর বাইককে কেন্দ্র করে এই কলহের সূত্রপাত । তাতেই এই দলিত তরুণ প্রাণ হারায়। অমিতের পরিবার পাঁচজন মুসলিম যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করে। এরা হলো আলম, সাদ্দাম, খালিদ, সুকেল এবং আশু।
১৮. উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্জ সাধারণতন্ত্র দিবসের শোভাযাত্রায় চন্দন গুপ্তার হত্যা :-
2018 সালের 26 জানুয়ারি চন্দন গুপ্তা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। উত্তর প্রদেশের কাশগঞ্জে সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে যে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা হচ্ছিল, সেখানেই তাকে গুলি করা হয় ।পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের এই শহরে চন্দন কে হত্যা করার পর এক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সূচনা হয়। কমপক্ষে তিনটি দোকান দুটি বাস এবং একটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ।তার বাবা-মা দাবি করে যে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ ‘এই শ্লোগান দিতে অস্বীকার করায় তাকে হত্যা করা হয়।
2018 সালের 31 জানুয়ারি পুলিশ সেলিম নামক এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে ।সে এই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত বলে জানা যায় । তারপর 2018 সালের 8 ফেব্রুয়ারি চন্দন গুপ্তার মূল হত্যাকারী আসিফ জিমওয়ালা আদালতের প্রধান বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
১৯. জনসমক্ষে মূত্রত্যাগের প্রতিবাদ করায় ই রিক্সা চালক রবিন্দর কুমারের হত্যা:
2017 সালের জুন মাসে এই মর্ম বিদারক হত্যাকাণ্ডটি সংঘঠিত হয়। উত্তর দিল্লির 32 বছর বয়সী এক ই- রিকশাচালক রবীন্দর
কুমারকে 5 জন ছাত্র মিলে প্রহার করে হত্যা করে। ঘটনার কারণ হল রবীন্দর তাদের জনসমক্ষে মূত্র ত্যাগ করতে বাধা দিয়েছিল। মূল ঘটনাটি ঘটে 2 জুন বেলা 1:30 মিনিটে। রবীন্দর তখন তার দ্বিপ্রহরের খাবার খেতে যাচ্ছিল । এই সময় এসে দেখে দুটি টিন এজার ছেলে GTB মেট্রো স্টেশন এর কাছে মুত্র ত্যাগ করছে। ছেলেগুলোকে অপ্রস্তুতে ফেলে রবীন্দর তাদের অর্থ রাশি সাহায্য করতে চায়, যাতে তারা সাধারণ শৌচাগারে গিয়ে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে পারে। উল্লেখ্য এই শৌচাগার একটু দুরেই অবস্থিত ছিল।
ছেলে দুটি তার সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেয়। এই স্থান ত্যাগ করার পূর্বে তারা রবীন্দরকে ভয় দেখায় এবং বলে তারা খুব শীঘ্র রবীন্দরের মুখ
বিকৃত করে দেবে । সাত ঘন্টা পরে তারা দশ পনের জন বন্ধুকে নিয়ে সেই স্থানে আসে এবং তোয়ালেতে বাধা পাথর এবং লোহার টুকরো দিয়ে প্রহার করে সেই হিন্দু তরুণকে আহত করে । রবীন্দর ভূপতিত হলে তারা পালিয়ে যায়। রবীন্দরের পরিবারের সদস্যরা তাকে নিকটস্থ হসপিটালে নিয়ে গেলে, সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
২০. দিল্লির রাস্তায় দিন দুপুরে সম্ভাবনাময় এয়ার হোস্টেস রিয়া গৌতমের ছুরিকাহত হয়ে নিহত হওয়া :-
2017 সালের 5 ই জুলাই দিল্লির মান সরোবর পার্কের রামনগর এলাকার বাসিন্দা রিয়া গৌতমকে নৃশংসভাবে ছুরি মেরে হত্যা করে আদিল বেন খান নামক এক দুষ্কৃতী। ঘটনাটি ঘটে দিন দুপুরে ব্যস্ত বাজার এলাকায় । রামনগর কলোনির একটি দোকানের বাইরে লাগানো একটি CCTV ফুটেজ থেকে দেখা যায় যে আদিল রিয়াকে আক্রমণ করে এবং তাকে তাড়া করে। তখন সে একটি দোকানে আশ্রয়ের জন্য ঢুকে পরে। তারপর দেখা যায় আদিল একটি ছুরি হাতে সমবেত লোকজনকে ঠেলে সরিয়ে ছুটে চলে যাচ্ছে। রক্তাক্ত সেই তরুণী গুরু তেগবাহাদুর হসপিটালে ভর্তি হয়, এবং তার অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু তার তলপেটের উপরিতলে একটি গুরুতর ক্ষত এবং চেরা কব্জি থেকে অত্যধিক রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হয় । 23 বছরের আদিল খান আর তার দুই সাগরেদ জুনাইদ আনসারী (19) ও ফাজিল রাজু আনসারী (18) মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চ এর দ্বারা বান্দ্রার মফস্বল থেকে 8 জুলাই 2017 তারিখে ধরা পরে।
২১. মুসলিম বন্ধুর পিটুনিতে 14 বছরের যোগেশ কুমারের হত্যা :-
2017 সালের জুন মাসে যোগেশ কুমার নামক এক বালককে রহস্যজনকভাবে নিউ দিল্লি রেল স্টেশনের কাছে মৃত অবস্থায় পরে থাকতে দেখা যায় । তার সারা দেহে এবং মুখে ক্ষতের চিহ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছিল, যে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে । ময়নাতদন্তে প্রকাশ পায় তার দেহের ক্ষত সৃষ্টি হয় তাকে কোন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর ফলে। তার মা সীমা অভিযোগ করে সে তার মুসলিম বন্ধুদের গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে। তারা অর্থের জন্য যোগেশকে অপহরণ করে রেখেছিল এবং অর্থ রাশি দাবি করছিল । তার মাও দাবি করে যে তার বন্ধুরা তাকে একবার যোগেশের কম্পিত , সন্ত্রস্ত কণ্ঠস্বর শুনিয়েছিল।
২২. ডক্টর পঙ্কজ নারাংকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে পিটিয়ে হত্যা :-
2016 সালের 26 মার্চ উত্তেজিত মুসলিম জনতা ডক্টর পঙ্কজ নারাংয়ের বাড়ির চারপাশে সমবেত হয় এবং তার ওপর লাঠি, রড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করে । কারণ ছিল সামান্য একটি ঝগড়া। ডক্টর পংকজের ছেলে রাস্তায় ক্রিকেট খেলছিল, আর সে সময় বাইকে চেপে দুই যুবক খুব জোরে ডক্টরের ছেলের পাশ দিয়ে চলে যায় । একজন উদ্বিগ্ন বাবা হিসেবে তিনি ছেলেগুলিকে বকেন। এর পরেই হাতাহাতি শুরু হয়। আর সেই মুসলিম ছেলে দুটি অনেক লোক নিয়ে ডক্টর পঙ্কজকে মারতে আসে। দিল্লির একটি আদালত চারজন নাবালককে এই অপরাধের কারণে সংশোধনাগারে পাঠায়। আর পাঁচজন অপরাধীর স্থান হয় তিহার জেলে। এরা হল- নাসির, মিশার , আমির, আমীর ও গোপাল।
২৩. বেআইনি গো হত্যা বন্ধ করতে গিয়ে বজরং দলের কর্মী প্রশান্ত পূজারীর হত্যা:-
2015 সালের অক্টোবর মাসে বজরং দলের সক্রিয় কর্মী প্রশান্ত পূজারীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় । কারণ তিনি বেআইনি গোহত্যা বন্ধ করতে চেয়ে ছিলেন। যারা বেআইনি গোহত্যা করেছিল তারা ছিল PFI ( Popular Front of India) এর সদস্য। এটি একটি মুসলিম সমর্থিত গ্রুপ ।পূজারীকে দিনের আলোয় 6 জন বাইক আরোহী লোক বাজারের মধ্যে আক্রমণ করে এবং সেই দিনই আঘাতপ্রাপ্ত পূজারীর মৃত্যু হয়।
এইগুলি হলো নির্মমভাবে হিন্দু হত্যার কয়েকটি ঘটনা । যে নৃশংসতার সঙ্গে এই হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছে তা বিশ্বাস এর অতীত । কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই ঘটনা গুলি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। বেশিরভাগ বাম- উদারনৈতিক সংবাদমাধ্যম এগুলিকে গণপিটুনির ঘটনা বলতে অস্বীকার করেছে। এমনকি উল্লেখ পর্যন্ত করেনি। এই ঘটনাগুলিকে বিকৃত অথবা আড়াল করা হয়েছে যেহেতু এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হল হিন্দু।
আসলে মূল স্রোতের সংবাদ মাধ্যম নিরোর অতিথির ভূমিকা পালন করছে। তারা খুব যত্ন সহকারে তাদের ন্যারেটিভকে তৈরি করে, যেমনভাবে রাজনৈতিক নেতারা তৈরি করে । উদ্দেশ্য হল মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখা । তারা যে ন্যারেটিভ বাজারে প্রকাশ করে, সেখানে আক্রমণকারী সর্বদা হিন্দু। এখানে মনে করা যেতে পারে কিভাবে রাজদীপ প্রশান্ত পূজারী হত্যাকে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ দান করেছিল; অথবা সোনিয়া গান্ধীর NAC কিভাবে Communal Violance Bill আনতে চাইছিল যেখানে যে কোন আক্রান্ত হবে মুসলিম আর আক্রমনকারী সর্বদা হিন্দু।
এখানে কিভাবে দিল্লির হিন্দু বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয় সে কথাও স্মরণ করা যেতে পারে। এই দাঙ্গা আসলে শুরু হয় নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে, যখন মুসলিম জনতা NRC আর CAA এর বিরোধিতা করে আক্রমণ আরম্ভ করে। সংবাদমাধ্যম কিন্তু তখন তার চোখ বুজে
ছিল যাতে এটাকে পরে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা বলে প্রচার করতে পারে।
এই ন্যারেটিভ প্রচারের জন্য হিন্দুকে কখনো আক্রান্ত হিসেবে দেখানো যাবে না, এমনকি যখন হিন্দু নৃশংসভাবে হত্যা হবে তখনও না। সংবাদমাধ্যম তখন চোখ সরিয়ে থাকবে ,দেখবে না আক্রান্ত কারা, কারণ তাদের ধর্ম সেই ধর্মটা নয় যে ধর্মকে আক্রান্ত বলে দেখালে রাজনৈতিক ফায়দা লোটা যাবে।
এই অনৈতিক কাজের কারণ হলো গভীর হিন্দু ভীতি এবং ভারতের বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম হল বামপন্থী মতবাদ ঘেষা । তবে সংবাদমাধ্যম ভুলে গেলেও এইসব আক্রান্ত হিন্দুদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে এবং এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যাতে নৃশংসতার শিকার হিন্দুরা সংখ্যালঘু তোষণের ভিড়ে হারিয়ে না যায়।
(সমাপ্ত)
তথ্যসূত্র: OpIndia.com