© অরূপ কৃষ্ণ সাহা
https://www.facebook.com/arupkrishna.saha
দেশভাগের পূর্বে বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার কুমারখালির বিখ্যাত বণিক এবং জমিদার পরিবার হিসেবে আমার পূর্বপুরুষের খ্যাতি ছিলো।
বংশপরম্পরায় আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যবসা বাণিজ্যে এতোটাই প্রসার ঘটিয়েছিলেন তৎকালীন নদীয়া জেলার কুষ্টিয়ার কুমারখালির গ্রামীণ পরিবেশে বিনিয়োগ করার মতো সুযোগ ছিলো না।

পরবর্তীতে ব্রিটিশদের সাথে চা শিল্পে বিনিয়োগ করলেন আমার পিতামহের বাবা। আমাদের পরিবারের সবচাইতে গর্বের বিষয় হলো লন্ডনের TEA MUSEUM এ ব্রিটিশ ভারতের সর্বপ্রথম চা উৎপাদনকারীর নামের তালিকায় আমার পিতামহের ঠাকুরদা’র নামটি আজও পাথরে খোদাই করা আছে।
শিলিগুড়িতে আমাদের পরিবারের ৫ টি চায়ের বাগান ছিলো।
চায়ের বাগান গুলোর নাম ছিলো ১. আমবাড়ি ২.নদীয়া ৩.লক্ষী ৪.সাহাবাদ ৫.মনখুশি।
আমাদের চা বাগান গুলো নামকরণের পেছনেও রয়েছে আলাদা আলাদা ইতিহাস।
বাগানের নামকরণ “নদীয়া” করা হয়েছিল যেহেতু আমরা তৎকালীন নদীয়া জেলার কুষ্টিয়ার অধিবাসী।
“সাহাবাদ” মানে আমাদের বংশের পদবী যেহেতু সাহা।
শিলিগুড়িতে আমাদের চা বাগানের পাশেই একটি রেলস্টেশনের নাম ছিলো “আমবাড়ী” সেই নাম অনুসারে চায়ের বাগানের নামকরণ হয় আমবাড়ী।
তবে “লক্ষী” এবং “মনখুশি” চা বাগানের নামকরণের ইতিহাস আমার জানা হয়নি।
আমার মা এখনও এই বাগানের একজন শেয়ারহোল্ডার।
আমার পিতামহের নাম স্বর্গীয় প্রভাস চন্দ্র সাহা তার পিতার নাম ছিলো স্বর্গীয় জানকি নাথ সাহা।আমার পিতামহ অল্প বয়সেই তার স্ত্রীকে হারায়।এজন্য তিনি তার সন্তানদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। তার তিন পুত্র এবং দুই কন্যা।
আমার পিতামহ কে দেখেছিলাম তিনি ছিলেন শিশুর মতোই সহজ সরল এবং বড্ড উদার মনের মানুষ। আমার পিতামহ যেখানেই যেতেন তার সাথে সবসময় দুটো বড় ট্র্যাঙ্ক থাকতো।
একটিতে নিজের কাপড় চোপড় এবং অন্যটিতে অন্যান্য জিনিসপত্রের সাথে চকচকে ছোট্ট অ্যালুমিনিয়ামের বাক্স।
আমার পিতামহ সবসময় এই অ্যালুমিনিয়ামের বাক্সটিকে মহামূল্যবান সম্পদের মতোই তালাবদ্ধ অবস্থায় আগলে রাখতেন। এমনকি বাক্সটি ধরা ছোঁয়া সকালের জন্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল।
বলে রাখছি আমার পূর্বপুরুষ এতোটাই বিত্তশালী ছিলো যে মশলা বাটার হামুর দিস্তটিও সোনার ছিলো।
একদিন অ্যালুমিনিয়ামের ছোট্ট বাক্সটি কোন কারণে খোলা অবস্থায় পাই।
কৌতূহল বশত বাক্সের ঢাকনা খুলি এই ভেবে সেখানে হয়তো ডায়মন্ড অথবা মহামূল্যবান কোন সম্পদ আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু বাক্সটির উপরের অংশ খুলেই যা দেখি সেটা দেখে খুব হতাশ হই এক টুকরো মাটির দলা আর কিছু পাথর ছাড়া কিছুই নেই।
হতাশা এবং ক্ষোভের সাথে এসব নিয়ে আমার পিতামহের মুখোমুখি হই।
কি সব ছাইপাঁশ আর মূল্যহীন মাটি রেখেছো এই বাক্সে?
ঠাকুরদা বললেন, তোমার কাছে এটা মূল্যহীন হতে পারে কিন্তু আমার কাছে অমূল্য সম্পদ এই মাটি। এই মাটি আমার জন্মভিটা কুষ্টিয়ার কুমারখালির মাটি। ঠাকুরদা মৃত্যুর সময় পর্যন্ত এই মাটি নিজের সাথে যত্নসহকারে রেখেছিলেন।
সেদিনের সেই অভিজ্ঞতার পর থেকে আমি আমার পূর্বপুরুষের ভিটেমাটির প্রতি অন্যরকম একটা টান অনুভব করি। আমার বাবা কমল কৃষ্ণ সাহার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা যদিও কলকাতায় কিন্তু তিনি রসায়নে M.S.C করার পর কুষ্টিয়ার একটি বিখ্যাত কলেজে শিক্ষকতা করতে গিয়েছিলেন।
৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে শিক্ষকতা করেছিলেন।
কিন্তু পরবর্তীতে দেশভাগ হওয়ার পর তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন।
এরপর নিজের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটির খোঁজ করতে এবং আমার বাবা কুষ্টিয়ার যে বিখ্যাত কলেজে শিক্ষকতা করেছিলেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তেমন কিছু খোঁজ পাইনি।শুধু কুষ্টিয়ায় গিয়ে একটি পোস্টারে দেখতে পাই।
” হরিনাথের জেলা কুষ্টিয়া “
বিখ্যাত লেখক হরিনাথ অথবা কাঙাল হরিনাথ হলেন আমাদের পরিবারের নিকট আত্নীয়।
আমার পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি সন্ধান বলতে শুধু এতটুকুই জেনেছি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালির আমলা সদরপুরের বাসিন্দা ছিলেন তারা।
বাংলাদেশে কুষ্টিয়ায় আমার পূর্বপুরুষের ফেলে আসা বাড়িঘরের কি অবস্থা তা আদৌ জানতে পারবো কি না জানিনা।
তবে কারো যদি জানা থাকে অনুরোধ করবো প্লিজ জানাবেন।