© পন্ডিত সুভাষ চক্রবর্তী
(৩)
উপপুরাণ:–
১. সনৎকুমার
২. নরসিংহ/নৃসিংহ
৩.বায়ু
৪. শিবধর্ম
৫.আশ্চর্য
৬.নারদ
৭.নন্দিকেশ্বর
৮.উশনস্
৯.কপিল
১০.বরুণ
১১.শাম্ব
১২.কালিকা
১৩.মহেশ্বর
১৪.কল্কি
১৫.দেবী
১৬.পরাশর
১৭.মরীচী
১৮.সূর্য/ভাস্কর
উপপুরাণগুলি পরবর্তীকালে রচিত হয়েছিল, আকারে ও মাহাত্ম্যে ক্ষুদ্র এবং ন্যূন। বোধহয়, বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্মাচরণের সহায়করূপে কিংবা মহাপুরাণের পরিশিষ্ট হিসাবে উপপুরাণগুলি রচিত
হয়েছিল।
পুরাণের মূল্য—–
ইতিহাসে ও ধর্মীয় বিবর্তনে বৈদিক যুগের উত্তরকালে সমাজ বিবর্তিত হতে থাকে। সপ্তসিন্ধুর উপকূল থেকে গঙ্গাযমুনার ধারায় মধ্যভারত থেকে পূর্বভারত ও কিছুটা দক্ষিণে আর্যরা ছড়িয়ে পড়ে।
এই পর্বে আর্যদের সংগে আদিবাসী নিষাদ ও অস্ট্রিক
এবং দ্রাবিড়দের সংঘর্ষ হয়েছে। কালক্রমে, আর্য-
অনার্যদের সংস্কৃতিসমন্বয়ের চিহ্ন সমাজশরীরে ফুটে
উঠেছে। ফলে,আর্যদের ধ্যান-ধারণা ও জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন ফুটে ওঠে।
বৈদিক ঔপনিষদিক জ্ঞান-বাদ ও কর্মবাদের জায়গায়
আর্য ধ্যান-ধারণায় দ্রাবিড়ীয় ভক্তিবাদ প্রবেশ করে।পুরাণগুলিতে এই সমন্বয় যুগের পরিচয় পাই—ভক্তিবাদের ক্রমাভিব্যক্তি ও দৈবশক্তির পরিবর্তে এল ব্রহ্মা- বিষ্ণু-মহেশ্বরের প্রাধান্য। ব্রাহ্মণরা বেদ কুক্ষিগত করলো, অন্য বর্ণের বৈদিক আচরণ নিষিদ্ধ
হলো। এইভাবে পুরাণের জনপ্রিয়তা ও প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলো। তবু, পুরাণ বেদের পরিপূরক, অনেক বেদার্থকে পুরাণ যুগোপযোগী করে সর্বসাধারণ্যে প্রচার করেছে।
(৪)
পুরাণে বহুদেবতার উল্লেখ থাকায় মনে হতে পারে হিন্দুরা বহুদেবতাবাদী।
কিন্তু, ত্রিমূর্তির আড়ালে আছে একেশ্বরবাদ। পুরাণ-
গুলিতেই প্রথম পৌত্তলিকতা ও সাম্প্রদায়িকতার সন্ধান পাওয়া যায়। প্রাক্-পুরাণযুগে দেবতার বিগ্রহ নির্মিত হলেও বিগ্রহ উপাস্য ছিল না—ছিল
তার অন্তর্নিহিত শক্তি। পুরাণগুলিতে প্রথম লক্ষ্য করা যায় বিগ্রহের প্রাধান্য, গুরুত্ব- যা ভক্তকে প্রতিমা পূজার প্রতি আসক্ত করে তোলে।
কখনো কখনো বিশেষ দেবতার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অন্য দেবতাদের হীন প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এইভাবে বৈষ্ণবপুরাণ, শৈব পুরাণ বা শাক্ত পুরাণ, ব্রাহ্ম পুরাণ প্রভৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গী সৃষ্টি হয়েছে।
সমসাময়িক যুগের জীবন চর্চার পরিচয় রয়েছে পুরাণ-
গুলিতে। ধর্মবিষয়ে পুরাণগুলি খনি। অনেকে বলেন
পুরাণ হচ্ছে ভারতের জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশ্বকোষ। হিন্দু-
ধর্মের বিভিন্ন শাখার অভ্যুজয়ের ইতিহাস, তীর্থস্থানের
প্রসঙ্গে ভৌগোলিক অবস্থান, নদনদী, পর্বত, জাতিবর্ণের বর্ণনা, জাতীয়তাবোধের অঙ্কুরোদগম, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যাগযজ্ঞের কথা, শ্রাদ্ধ কথা ও বর্ণাশ্রমবিধি সম্পর্কে পুরাণগুলিই প্রামাণিক। প্রাচীন ভারতকে জানতে হলে পুরাণ অপরিহার্য।
(ক্রমশঃ)