© পবিত্র রায়
ঢাকার আদালতে দাঁড়িয়ে প্রজ্ঞা দেবনাথ নাকি বলেছেন যে সে জঙ্গি হওয়ার জন্য ধর্মান্তরিত হয়েছে।প্রশ্ন হলো জঙ্গি হওয়ার সাথে ধর্মান্তরিত হওয়ার সম্পর্ক কি ? আমাদের দেশে বহু জঙ্গি সংগঠন আছে, যেমন খালিস্তান পন্থী, বোড়ো, মণিপুরী, বৈরী নাগা,নকশাল পন্থী প্রভৃতি।এদের জঙ্গি হওয়ার জন্য তো ধর্মান্তরিত হতে হয়নি ! তাহলে কোন্ আদর্শ অনুসরণ করে প্রজ্ঞা ধর্মান্তরিত হলো ? যদি জঙ্গি হওয়ার জন্যই সে ধর্মান্তরিত হয়ে থাকে,তাহলে বাংলাদেশ যাওয়ার প্রয়োজন কি ছিল ?এখানেই তো প্রয়োজনীয় জঙ্গি কার্যক্রম চালাতে পারত! খাগড়াগড় কান্ড তথা আরও বহু বিষয়ে আমরা দেখেছি যে বাংলাদেশি জঙ্গিরা আমাদের দেশকে নিশানা করেছে। সুতরাং জঙ্গি হওয়ার জন্যই যে সে ধর্মান্তরিত হয়ে বাংলাদেশ চলে গিয়েছে,একথা মান্য করা যায় না। প্রশ্ন হলো,প্রজ্ঞা দেবনাথের মনে হঠাৎ করে জঙ্গি হওয়ারই বা বাসনা কেন হলো? জন্মের সাথে সাথে কেউ জঙ্গি হয়না। বিভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মস্তিষ্ক ধোলাই করার পর একটি মানুষ জঙ্গি হয়ে ওঠে।ব্যক্তিগত আক্রোশে কেউ জঙ্গি হয়না,জঙ্গি হয় সমষ্টিগত আক্রোশ ও হিংসার ফলে।যতটুকু এপর্যন্ত জানা গিয়েছে, তাতে তেমন কোনও আক্রোশের জন্ম তার মনে হয়েছিল বলে প্রমাণ মেলে না। তাহলে কেন জঙ্গি হওয়ার বাসনা হলো ?
জঙ্গি হতে হলে বাংলাদেশ যেতে হবে, এইমত মস্তিষ্ক বিকৃতির রহস্যটা কি ? প্রজ্ঞা কি বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র মনে করে বা করতো ? না’কি বাংলাদেশ একটি ইসলামি দেশ বলে সেটাকে জঙ্গিদেশ সমার্থক মনে করতো ? আর সত্যিই যদি বাংলাদেশ একটি জঙ্গি দেশ হতো,তাহলে প্রজ্ঞাকে গ্রেফতার কেন করা হলো ? আসল কথা হলো,প্রজ্ঞা জঙ্গি হওয়া নিয়ে যা বলছে,সেটা সরাসরি মিথ্যা বৈ নয়।এটা তাকে শিখিয়ে দিয়েছে জঙ্গি সংগঠনের সাথীরা।তারা প্রজ্ঞার নিজের উপর জঙ্গি হওয়ার দায় চাপিয়ে দিয়ে হাত ধুঁয়ে ফেলতে চাইছে। আসলে প্রজ্ঞার জঙ্গি হওয়ার নেপথ্য কারণ লুকিয়ে আছে তার পড়াশোনা করার জীবনে।প্রথমেই প্রজ্ঞাকে জঙ্গি শিক্ষা দেওয়া হয়নি।তাকে প্রথমে বিশেষ এক ধর্মের মাহাত্ম্য শেখান হয়েছে- যেখানে স্বর্গ প্রাপ্তি অবশ্যই বলা হয়েছে। সেই স্বর্গ আর অদম্য যৌনতার আকর্ষণে প্রজ্ঞা প্রথমে ধর্মান্তরিত হয় বলে ধারণা করা যেতে পারে।আর ধর্মান্তরিত হওয়ার পর শেখানো হয়েছে,সত্ত্বর স্বর্গ পাওয়ার একমাত্র রাস্তা হলো জেহাদি জঙ্গি হয়ে মৃত্যুবরণ করা।
প্রজ্ঞা কি অনুতপ্ত হয়ে স্বধর্মে তথা পিতা-মাতার কাছে ফিরতে চাইছিল ? আর তারজন্যই কি জঙ্গি দল আটঘাট বেঁধে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিল ? বহু প্রশ্নের উত্তর কিন্তু মিলছে না।বাংলাদেশের তদন্তকারী দল কি একবারও প্রজ্ঞাকে জিজ্ঞাসা করেছে যে কেন সে জঙ্গি হতে চাইল ? যদি জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকে,তাহলে তার উত্তর কি দিয়েছে সে ? খুন করে যদি কেউ সরাসরি স্বীকার করে,তাহলেও সেটা গৃহীত হয়না- তাঁকে প্রমাণ দিতে হয়।প্রজ্ঞা কি জঙ্গি হতে চাওয়ার মানসিকতার কারণের কোনও প্রমাণ দিয়েছে ? যদি প্রমাণ না দিয়ে থাকে,তাহলে প্রজ্ঞার কথার সত্যতার কোনও ভিত্তি নেই। প্রজ্ঞার বিষয়ে সম্পূর্ণ সত্য উদ্ধার করতে হলে ভারত-বাংলাদেশ’কে মিলে তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।মূল ভূমিকা হিসেবে ছাত্র জীবনের শেষ পাঁচটি বছর আঁতশ কাঁচের তলায় ফেলে বিচার করতে হবে । দেখতে হবে ওর সহপাঠী কারা ছিল,কি তাঁদের আগে-পরের কার্যাবলী।তবেই মিলতে পারে প্রজ্ঞা রহস্যের নেপথ্য কারণ। রহস্য উদ্ঘাটনে এগিয়ে আসতে হবে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের ইনটেলিজেন্স দফতরকে প্রজ্ঞা কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছে জেহাদি হাত লম্বা হয়ে শিক্ষাঙ্গনকেও গ্রাস করতে চলেছে ।