© অরিন্দম পাল
পর্ব-১৯
কানহোজী নাইক জেধে
…শাহাজী মুক্তিলাভ করলেন ১৬৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই মে, তাঁর সঙ্গে কানহোজী নাইক জেধে দেশমুখ এবং তাঁর এক প্রবীণ কর্মচারী দাদাজী কৃষ্ণ লোহকরেও মুক্তিলাভ করলেন। মুস্তাফাখান এঁদেরও বন্দি করে রেখেছিল।
দাদাজীর বন্দী অবস্থাতেই তাঁর পুত্র রত্নাজী লোহকরের মৃত্যু হয়। মুক্তিলাভের সঙ্গে সঙ্গে শাহাজীরাজা একটুও সময় নষ্ট না কানহোজী জেধের মতো একনিষ্ঠ পরাক্রমী বীরকে এবং দাদাজী লোহকরের মতো প্রবীণ ও সাহসী ব্যক্তিকে শিবাজীর কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। শাহাজীরাজা কানহোজী জেধেকে ডেকে এনে গোপনে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করলেন এবং বললেন ― “কানহোজী, মাবল অঞ্চলে আপনি বিশেষ প্রভাবশালী লোক। আমার পুত্র শিবাজীরাজার আপনার মত নিষ্ঠাবান কর্মীকে বিশেষ প্রয়োজন। আপনি যে সততার সঙ্গে ও সর্বশক্তি দিয়ে শিবাজীকে সাহায্য করবেন – এ বিশ্বাস আমার আছে । সেই কারণেই শিবাজীরাজার অধীনে তার নির্দেশমত কাজ করার জন্য আপনাকে তার কাছে পাঠাচ্ছি । ঐ অঞ্চলের অনেক দেশমুখই “স্বরাজের” সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন । যাঁরা এখনোও দূরে আছেন আপনাকে দেখে তাঁরাও শিবাজীর এই মহৎ কাজে যোগ দিতে এগিয়ে আসবেন। শিবাজী রাজা এখন পুনাতে আছে । আপনার সামনে আদিলশাহী বা মোগলদের সৈন্যরা এলেও বিচলিত হবেন না। স্বরাজের সেবায় শিবাজীর কাছে সকল পরিস্থিতিতে একাত্ম নিষ্ঠার সঙ্গে তৎপর থাকবেন। আপনার উপর আমার বিশেষ ভরসা আছে বলেই আপনাকে শিবাজীর কাছে পাঠাচ্ছি ।”
কানহোজী প্রতিজ্ঞা করলেন যে এখন থেকে তিনি শিবাজী মহারাজের সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন এবং শাহাজীরাজাকে কথা দিলেন, যে তাঁর সমস্ত শক্তি সামর্থ্য দিয়ে তিনি পূর্ণ নিষ্ঠা সহকারে স্বরাজের জন্য কাজ করবেন।
পুনাতে কানহোজী শিবাজী মহারাজের সঙ্গে দেখা করলেন, তাঁকে প্রণাম করে শাহাজিরাজার পত্র তাঁকে দিলেন। দুর্গম জাওলী অঞ্চল ছিল কানহোজীর নখদর্পনে । ঐ অঞ্চলের পরিচিত বহু বিশ্বস্ত কর্মঠ ও সাহসী ব্যক্তিকে তিনি মহারাজের কাছে হাজির করলেন। কানহোজী মত বিশ্বস্ত ও একনিষ্ঠ ও সহকর্মীকে পেয়ে শিবাজীর মনোবল বহুগুণ বৃদ্ধি পেল। বাদশাহের আদেশে আফজাল খাঁ, জাওলী দখল করার জন্য রওনা হল এবং ঘোষণা করে দিল যে আদিলশাহীর অধিকারভুক্ত ঐ অঞ্চলকে অবাঞ্ছিত লোকেরা জোর করে দখল করে রেখেছে, তার সুব্যবস্থা করার জন্য সে জাওলী রওনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আফজাল কানহোজী জেধেকে নির্দেশ পাঠাল যে তিনি যেন তাঁর অধীনস্থ সৈন্য-সামন্ত নিয়ে আফজল খাঁর হুজুরে হাজির হন। শিবাজীর পরামর্শে কানহোজী যথারীতি আফজল খাঁর সঙ্গে চিঠিপত্রের বিনিময় চালিয়ে যেতে লাগলেন এবং লিখে জানালেন যে তিনি খাঁ সাহেবের নির্দেশমত তাঁর সৈনিকদের প্রস্তুত করেছেন । এইভাবে খানকে জাওলী থেকে বহুদূরে অপেক্ষা করতে বাধ্য করে কালক্ষেপ করতে লাগলেন যাতে এই সুযোগে শিবাজিরাজা পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার সময় পান।
এই ব্যাপারে কানহোজী সম্পূর্ণ সফল হলেন, কারণ ইতিমধ্যে বাদশাহর আদেশে আফজাল খাঁ কে কর্নাটকের দিকে রওনা হতে হল। অতএব, জাওলী অভিযান বাতিল হয়ে গেল ।
(ক্রমশঃ)