@ Team Hindu Voice
বর্তমান সময়ে হিন্দু যুবক-যুবতীদের বিভিন্নভাবে ভুল বুঝিয়ে, ভুল তথ্য দিয়ে তাদেরকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণীর ইসলাম ধর্ম প্রচারক। ইসলামে ধর্মান্তরিত করার জন্য তাদের এক বড় হাতিয়ার হলো ‛আল্লো উপনিষদ’। বাস্তবে এইরকম কোনো উপনিষদ বলে কোনো হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ নেই এবং কোনোদিন ছিল না। কিন্তু এটাকে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বলে চালানো হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে এই গ্রন্থে হিন্দুদের মহামদ অর্থাৎ নবী মহম্মদের উপাসনা করতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এই ভুল প্রচার ও প্ররোচনাকে হাতিয়ার করে হিন্দুদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদেরকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য ‛দাওয়াত’ দেওয়া হচ্ছে। কখনও কখনও ঠিক একইভাবে জাকির নায়েকের ভিডিও দেখিয়ে তাদেরকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই জঞ্জাল, যাকে উপনিষদ বলে চালানোর চেষ্টা চলছে, তা কোনোভাবেই হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ নয়- এটা পরিষ্কারভাবে জানা ও বোঝা দরকার।

আল্লো উপনিষদ ও ভবিষৎ পুরাণ নিয়ে কিছু কথা।কিছু নও মুসলিমরা আল্লো উপনিষদের শ্লোক নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে ফেলে।সেখানে নাকি মুসলমানদের ধর্মের কথা বলা হয়েছে।তাই তারা ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং অন্যদের এগুলো দিয়ে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করে।আসলে,এই মূর্খরা বুঝে না যে আল্লো উপনিষদ নামে হিন্দুদের কোন ধর্ম নেই।
মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনকালে রচিত বলে মনে করা হয়। ঋষিরা,মুঘল সম্রাট আকবরের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া জন্য এই গ্রন্থটি রচনা করেন।এমনকি সেই গ্রন্থে আকবরকে ঈশ্বরের দূত বানানো হয়েছে।তাহলে বলেন,এই গ্রন্থটি কি হিন্দুদের উপনিষদ হয়???
আল্লো উপনিষদ যে হিন্দুদের কোন ধর্মীয় গ্রন্থ নয়,তা নিয়ে প্রাচীন ঋষিরা ও প্রবীণ লেখকরা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন…..

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী তার সত্যার্থ প্রকাশ গ্রন্থে বলেছেন যে, আল্লোপনিষদ উপনিষদ্ শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত নয়। এমনকি এটি অথর্ববেদের সঙ্গেও যুক্ত নয়। এটি সম্ভবত মুখল যুগে (আকবরের শাসনকালে) রচিত হয়েছিল।ধর্মতত্ত্ববিদ আর অনন্তকৃষ্ণ শাস্ত্রী লিখেছেন ভারতে মুসলমান শাসনকালে “আর্য পণ্ডিতরা শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে” এই গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। তিনি আরও বলেছেন যে, এই গ্রন্থটি “সাধারণ উপনিষদ্গুলির রচনাভঙ্গি অনুসরণ করে লেখা হয়নি” এবং এই গ্রন্থে ব্যবহৃত শব্দগুলি “শুনতে অনেকটি আরবির মতো।” ভট্টাচার্য ও সরকার আল্লোপনিষদ্কে “ইসলামি রচনা” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে,আকবরের কোনো হিন্দু সভাসদ এটিকে “অথর্ববেদের একটি অপ্রামাণিক অধ্যায়” হিসেবে রচনা করেন। চার্লস_এলিয়টের মতে, এই গ্রন্থটি সম্ভবত দিন-ই-ইলাহি ধর্মীয় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এবং “এবং একটি অণুকরণ মাত্র।”স্বামী_বিবেকানন্দ লিখেছেন যে, আল্লোপনিষদ্ যে অনেক পরবর্তীকালের রচনা তার প্রমাণ রয়েছে। তিনি শুনেছিলেন আকবরের রাজত্বকালে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে এই উপনিষদ্টি রচিত হয়েছিল। সদাশিবন লিখেছেন, আকবর যখন নতুন ধর্ম নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন, তখন ব্রাহ্মণেরা তার জন্য এই গ্রন্থটি রচনা করেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, আকবরের রাজত্বকালে হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্যে এই গ্রন্থটি রচিত হয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন যে, আল্লোপনিষদ্ ছিল “ভারতের মুসলমান শাসকদের কিছু তোষামোদকারীর নির্লজ্জ রচনা।” আব্রাহাম ইর্যালি লিখেছেন যে, মুঘল যুগে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে কিছু আন্তঃসাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের উদ্যোগ। এর উদ্দেশ্য ছিল দুটি সম্প্রদায়কে কাছাকাছি আনা।তাহলে বুঝতে পারছেন তো,আল্লো উপনিষদ আসলে কিসের জন্য রচিত করা হয়েছিল???

https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A6%A6%E0%A7%8D
এবার আসি ভবিষৎ পুরাণ নিয়ে…..ভবিষ্যৎ পুরাণে নাকি তাদের নবীর কথা বলা হয়েছে???আসলে কি সত্য…..??? না,মোটেই না….!!!সত্যটা হলো এই যে, মহামদ নামে একজন দৈত্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে দৈত্যকে বধ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে তারা বিভ্রান্তকর সব তথ্য দিয়ে যুক্তি দেয়।সংস্কৃতির ভুল সব অনুবাদ করে বিভ্রান্তকর তথ্য দিয়ে মানুষকে উল্টো বুঝায়।আমি বিষয়টা বুঝি না,অনেক হিন্দু পন্ডিতরাই হিমশিম খেয়ে যায় সংস্কৃতির সঠিক বাংলা অর্থ তুলতে।কিন্তু ওরা কি এত বড় মহা পন্ডিত হয়ে গেলো যে,তাদের ধর্মগ্রন্থের অনুবাদ রেখে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ করে ফেলে,তাও ভুলবাল সব তথ্য দিয়ে।আসলে ওরা সব মিথ্যা তথ্য ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে সহজ সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে ধর্মান্তরিতের ফাঁদে ফেলে।আর এগুলো নিয়ে গুগলে সার্চ দিলে তো সব উদ্ভট তথ্য আসে।তার প্রমাণ….দেখুন কীভাবে ভুল অনুবাদ করে মানুষকে বিভ্রান্তের মধ্যে রাখছে http://at.jamiahislamiahpatiya.com/?p=851।

এইসব অপপ্রচারের ফাঁদে পা দিয়ে বাংলাদেশের বহু হিন্দু যুবক-যুবতী ইসলামে ধর্মান্তরিত হচ্ছে। তাই হিন্দু যুবক-যুবতীদের এই ফাঁদ থেকে সাবধান থাকা উচিত। অপপ্রচারে কান না দিয়ে নিজের ধর্ম, পূর্বপুরুষের ধর্ম, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিন্দু ধর্মের প্রতি বিশ্বাস রেখে জীবন-যাপন করা উচিত। সেইসঙ্গে অন্যদের মাঝে সত্য ধর্ম হিন্দু ধর্ম গ্রহণের বার্তা পৌঁছে দেওয়া উচিত।