
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাসনাবাদ রেল স্টেশন। সেই স্টেশনের পাশেই অবস্থিত সংস্কৃত শিক্ষা কেন্দ্র ‛আশালতা চতুষ্পাঠী’। প্রায় হারিয়ে যেতে বসা সংস্কৃত ভাষা শেখাচ্ছেন অধ্যক্ষ অনিল কুমার দাশ। সংস্কৃত ভাষা যাতে আগামী প্রজন্ম শিখতে পারে, তার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
শিয়ালদহ থেকে ট্রেনপথে বারাসাত হয়ে হাসনাবাদ স্টেশন। স্টেশনের পূর্বদিকে খেলার মাঠের পরেই অনিল কুমার দাসের আশালতা চতুষ্পাঠী । তাঁর শিক্ষা কেন্দ্রে যত্ন করে শেখাচ্ছেন সংস্কৃত। অনিল বাবু জানালেন, তিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে সংস্কৃত শেখাচ্ছেন। সংস্কৃত শেখানোর জন্য তিনি পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও। ১৯৯২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর, রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মা তাকে পুরষ্কৃত করেন সংস্কৃত শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য। তাঁর শিক্ষা কেন্দ্রে কোনো ধর্মের পড়ুয়ার জন্য কোনো বাধা নেই- সবার জন্য দরজা খোলা। তার প্রমাণও পাওয়া গেলো। তাঁর শিক্ষা মন্দিরে হিন্দু , খ্রিস্টান এমনকি মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীরা দূর-দূরান্ত থেকে পড়তে আসেন।
পরিচয় হলো খাদিজা বেগমের সাথে। বাড়ি বসিরহাটে। তালাক প্রাপ্তা খাদিজা প্রতি রবিবার সংস্কৃত শিখতে আসেন । তিনি জানালেন সংস্কৃত ভাষার প্রতি ভালোবাসা থেকেই সংস্কৃত শিখছেন। খাদিজা জানালেন, সংস্কৃত শিখে বাড়িতে টোল খুলে মুসলিম মেয়েদেরকে সংস্কৃত শেখাতে চান। এছাড়াও, এই টোলে সংস্কৃত শিখছেন রঘুনাথপুরের ইসমাতারা খাতুন, মুরারিসাহার মর্জিনা খাতুন, হাসনাবাদের শামিমা খাতুন, তেঘরিয়ার সাইদা খাতুন, মাখালগঞ্জের ডাফডিল চৌধুরী, ত্রিমোহনীর সাহানুর খাতুন, নুরমর্জিনা খাতুন- এরা সকলেই আগ্রহের সঙ্গে সংস্কৃত ভাষা শিখছেন। এছাড়াও, হাসিনা বানু, বরুনহাটের মমতাজ খাতুন সবাই আসেন সংস্কৃত শিখতে।
আশেপাশের গ্রাম থেকে অনেক হিন্দু ছাত্র-ছাত্রী সংস্কৃত পড়তে আসেন এই চতুষ্পাঠীতে। বৈশাখী দাস, চন্ডীবন গ্রামের শোভারানি দাস, বাইনাড়া গ্রামের বাসন্তী সর্দার, সরস্বতী ঘরামী সকলেই এখানে সংস্কৃত পড়ছেন। কারওর ইচ্ছা সংস্কৃত শিখে অন্যদের শেখাবেন, আবার কেউ শুধুমাত্র সংস্কৃত ভাষার প্রতি ভালোবাসা থেকেই সংস্কৃত শিখছেন।

অনিল বাবু জানালেন, তিনি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে সংস্কৃত ভাষা শিখিয়ে আসছেন। আগে সরকারের তরফে কোনো অনুদান ছিল না, কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্র সরকার অনুদান দেয়, যদিও তা খুব অল্প। তিনি আরো জানালেন, সংস্কৃত ভাষার মতো একটি সমৃদ্ধ ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে শুধু সচেতনতার অভাবে। তিনি দুঃখের সঙ্গে জানালেন, সংস্কৃতে স্নাতক শিক্ষিত বেকার ছেলেরা যদি টোল খুলতে এগিয়ে আসেন, তবে সংস্কৃত ভাষা শিখবে ছাত্র-ছাত্রীরা ।তবেই বেঁচে উঠবে দেবভাষা সংস্কৃত । তিনি আরও আগ্রহের সঙ্গে জানালেন যে, যদি কেউ সংস্কৃত টোল করতে চায়, তিনি তাকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবেন। তিনি চান দেবভাষা সংস্কৃত ছড়িয়ে পড়ুক , সবাই শিখুক। সেই কাজে এই বৃদ্ধ বয়সেও করে চলেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম।