
১। শ্রীরাম জন্মভূমি মন্দির, অযোধ্যাঃ স্থানীয় হিন্দুদের মতে, রাম জন্মভূমি ধ্বংস করে সম্রাট বাবর ১৫২৮ সালে বাবরী মসজিদ নির্মাণ করেন। মীর বাকী যিনি ছিলেন সম্রাট বাবরের সামরিক জেনারেল তিনি রামজন্মভূমি ধ্বংস করে বাবরি মসজিদ বানান।
২। কেশব দেব মন্দির, মথুরা (উত্তর প্রদেশ) :- এই মন্দির ইংরেজি ১৬৭০ সালে ঔরঙ্গজেব কেশব দেব মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন এবং ওই স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
৩। অটালা দেব মন্দির, জৈনপুর (উত্তর প্রদেশ) :- ১৩৭৭ খ্রিস্টাব্দে ফিরোজ শাহ তুঘলঘ জৈনপুরের হিন্দু মন্দির অটালা দেব মন্দির ধ্বংস করেন এবং ওই স্থানে একটি মসজিদের নির্মাণ করেন, যা বর্তমানে অটালা মসজিদ নামে পরিচিত।
৪। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, বারাণসী(উত্তর প্রদেশ) :- মুঘল শাসক ঔরংজেব ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করেন এবং ওই স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা বর্তমানে জ্ঞানব্যাপী মসজিদ নামে পরিচিত।
৫। রুদ্রা মহালয়া মন্দির,বটনা জেলা(গুজরাট) :- গুজরাটের এই মন্দির ১৪১০ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন খিলজি ধ্বংস করেন এবং ওই স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা বর্তমানে জামে মসজিদ নামে পরিচিত।
৬। ভদ্রকালী মন্দির, আহমেদাবাদ,(গুজরাট) :- গুজরাটের এই মন্দির এবং এর পাশে থাকা একটি জৈন মন্দিরকে ১৫৫২ খ্রিস্টাব্দে আহমেদ শাহ ধ্বংস করেন এবং ওই স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা বর্তমানে আহমেদাবাদ জামে মসজিদ নামে পরিচিত।
৭। আদিনা মসজিদ, পানডুয়া(পশ্চিমবঙ্গ):- পশ্চিমবঙ্গের আদিনাথের মন্দির এবং পাশের বৌদ্ধ মন্দির সিকান্দার শাহ ১৩৭৩ খ্রিস্টাব্দে মন্দির ভেঙে ওটাকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন, যা বর্তমানে আদিনা মসজিদ নামে পরিচিত।
৮। বিজয়া মন্দির, বিদিশা( মধ্য প্রদেশ) :- মধ্য প্রদেশের এই হিন্দু মন্দিরকে ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে ঔরংজেব লুঠ করেন এবং মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন, যা বর্তমানে বিজামণ্ডল মসজিদ নামে পরিচিত।
৯। মসজিদ কুবতুল ইসলাম, কুতুব মিনার (দিল্লী) :- প্রায় ২৭টি জৈন মন্দির ভেঙে ১২০৬খ্রিস্টাব্দ-১২১০খ্রিস্টাব্দ এর মধ্যে কুতুবুদ্দিন আইবক এই মসজিদের নির্মাণ করেন।
১০। মার্তন সূর্য মন্দির, কাশ্মীরঃ – কাশ্মীরের এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন রাজা লতিত আদিত্য খ্রিস্ট পূর্ব পাঁচ শতকে। মন্দিরটি ধ্বংস করেন মুসলিম শাসক সিকান্দার বশিখান। শোনা যায় মন্দিরটি এতো মজবুত ছিল যে এটি ধ্বংশ করতে ১ মাসেরও বেশি সময় লাগে। বলিউড মুভি হায়দার নির্মিত হয় এই মন্দিরের উপর ভিত্তি করে। এই মন্দিরকে এখন কাশ্মীরের মুসলমানরা শয়তানের গুহা বলে অভিহিত করে। এই মন্দির আর পুনঃনির্মাণ সম্ভব হয়নি।

১১। মধ্যেরা সূর্য মন্দিরঃ– এই মন্দিরটি খ্রিস্টপূর্ব দশ শতকে। এই মন্দিরে ছিল ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতার মতো সাতটি কুন্ড জেক সপ্তকুণ্ড বলা হতো। রাজা ভীম্মদেব ১১ শতকে মন্দিরটি পুনঃনির্মান করেন এবং সূর্য দেবতাকে উৎসর্গ করেন। এই মন্দির রামায়ণের সাথে জড়িত। ধারণা করা হয় ভগবান রাম রাবণকে হত্যার আগে এই মন্দিরে এসেছিলেন। পূরণের মতে, এই অঞ্চলকে ঐ সময় ধর্মারণ্য বলা হতো। পরে এটি মধ্যেরা নাম পরিচিতি পায়। মন্দিরটি ছিল স্বর্ণের তৈরী বিভিন্ন দেবদেবতার প্রতিমায় পরিপূর্ণ। মাহমুদ গজনী এখানকার সব স্বর্ণ প্রতিমা লুট করে নিয়ে যায়।পরে আলাউদ্দিন খলজী মন্দিরটি ধ্বংস করেন। মন্দিরটি বর্তমানে পুননির্মাণ করা হয়েছে।
১২। সোমনাথ মন্দিরঃ -গুজরাটের পশ্চিমে সুরাটে অবস্থিত একটি শিব মন্দির। এটি বর্তমানে গুজরাটের একটি প্রধান ট্যুরিস্ট আকর্ষণ।১০২৬ খ্রিস্টাব্দে মাহমুদ গজনী মন্দিরটি লুট করেন। পরে আলাউদ্দিন খিলজীর সামরিক কমান্ডার আফজাল খান মন্দিরটি ধ্বংশ করেন। এর পর আওরঙ্গজেব মন্দিরটি ধ্বংস করে প্রায় ধূলার সাথে মিলিয়ে দেন। ইতিহাসবিদদের মতে সোমনাথ মন্দির মোট ১৭ বার লুট ও ধ্বংস করা হয়েছে।তাদের মতে মন্দিরটি ধ্বংস ও লুটের সময় বড় ধরণের হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ভারতের স্বাধীনতার পর মন্দিরটি পুনঃনির্মাণের প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়। ১৯৫১ সালে বল্লভভাই প্যাটেলের নির্দেশ ও তত্ত্ববোধনে মন্দিরটি পুননির্মাণ করা হয়।
১৩। শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দিরঃ– ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি বলে ধারণা করা হয়। এটি ভারতের উত্তর প্রদেশের পবিত্র মথুরা শহরে অবস্থিত। গুজরাটের দ্বারকা মন্দিরের মতো শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দিরটি নির্মাণ করেন শ্রীকৃষ্ণের নাতি বজ্রা (Vajra)। কিংবদন্তীদের মতে কৃষ্ণের জন্মস্থানে মন্দিরটি ৫,০০০ পূর্বে নির্মাণ করা হয়।রাজা যাদবকে এই মন্দির নির্মাণের কৃতিত্ব দিলেও রাজা চন্দ্রগুপ্ত (দ্বিতীয়) এই ৪০০ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরের অনেক সংস্কার করেন। ১০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটি ধ্বংসের পর রাজা বীর সিং বুন্দেলা মন্দিরটি পুনঃনির্মান করেন। মুঘল শাসক আওরঙ্গজেব মন্দিরটি ধ্বংস করে কেশব মন্দিরের উপর একটি দরগা তৈরী করেন। শ্রীকৃষ্ণ যে কংশের জেল খানায় জন্ম নিয়েছিলেন সেই জেল খানার চিহ্ন এখানে এখনো দেখা যায়। এখানেই তৈরী করা হয়েছে একটি মসজিদ যার ভিতরে এখনো মন্দিরের নমুনা পাওয়া যায়।
১৪। হাম্পি মন্দিরঃ– হাম্পি বিজয়নগর সম্রাজ্যের রাজধানী। মুঘল ভারতের আসার আগে বিজয়নর ছিল সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য। তাদের রাজত্ব ৩৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তারা মুঘলদের কাছে সম্রাজ্য হারান। তাদের পরাজয়ের পর রাজধানীতে এক নাগাড়ে একমাস ধরে বৃষ্টি হয় বলে জানা যায়। হাম্পিসহ বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অনেক মন্দির মুঘলদের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
১৫। মীনাক্ষী মন্দিরঃ মীনাক্ষী ভারতের সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ একটি মন্দির। ভারতের তামিলনাড়ুর মাদুরাই শহরে মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরটি সুন্দরেশ্বর অথাৎ মহাদেব শিব এবং মীনাক্ষী অর্থাৎ পার্বতীকে উৎসর্গ করা হয়েছে। ইতিহাসবিদদের মোতে মহাদেব শিব এই মন্দিরেই পার্বতীকে বিয়ে করেন। তামিল সাহিত্য থেকে মন্দিরটি ৪০০ খ্রিস্টপূর্বে নির্মিত বলে ধারণা পাওয়া যায়। ১৩০০ সালের দিকে দিল্লীর সুলতানদের নজর পড়ে দক্ষিণ ভারতের দিকে। ১৩১০-১৩১১ সালে আলাউদ্দিন খলজির সামরিক জেনারেল মালিক কাফুর মন্দিরটি ধ্বংস ও লুট করেন। ১৬ ০ ১৭ শতকে হিন্দু শাসক বিশ্বনাথ নায়ক মন্দিরটি প্রথম পুনঃনির্মান করেন। এর পর এই মন্দিরের অনেক বার সংস্কার করা হয়। সুন্দর কারুকার্য্যের জন্য মীনাক্ষী মন্দিরকে বিশ্বের সবচেয়ে সুদর্শন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বলা হয়ে থাকে।